গ্রহ রূপে পৃথিবী ও পৃথিবীর গতি ( Earth as a Planet and Movements of Earth)
আমরা পৃথিবীতে বাস করি । আর এর চতুর্দিকে রয়েছে সীমাহীন ফাঁকা জায়গা যাকে আমরা মহাকাশ বলি । এই সীমাহীন মহাকাশের দিকে তাকালে দিনের বেলায় উজ্জ্বল সূর্যকে দেখা যায় । আর রাতের বেলায় অসংখ্য ছোট ছোট আলোকবিন্দু দেখা যায় -এদের জ্যোতিষ্ক বলে । এই সব জ্যোতিষ্কদের মধ্যে রয়েছে নীহারিকা, ধূমকেতু, উল্কা, নক্ষত্র , গ্রহ ও উপগ্রহ ।
যে সব জ্যোতিষ্কদের নিজেদের আলো আছে তাদের নক্ষত্র বলে আর যে সব জ্যোতিষ্কদের নিজেদের আলো নেই তাদের গ্রহ বলে । পৃথিবীর নিজস্ব আলো নেই তাই পৃথিবী একটি গ্রহ । পৃথিবীর কাছের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রটি হল সূর্য । মহাকাশের কোটি কোটি নক্ষত্র নিয়ে গড়ে উঠেছে নক্ষত্রজগৎ (Galaxy) । আর এই নক্ষত্রজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে যে সব গ্রহ, উপগ্রহ , ধুমকেতু, উল্কা নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরে চলেছে তাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে 'সৌরজগৎ' ।
সৌরজগতে মোট ৮ টি গ্রহ আছে । সূর্য থেকে দুরত্ব অনুসারে গ্রহগুলি হল - বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন । দুরত্ব অনুসারে পৃথিবী সূর্যের তৃতীয় গ্রহ । পৃথিবী উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে কেন্দ্র করে পরিক্রমণ করে, তাই পৃথিবী থেকে সূর্যের দুরত্ব সব সময় সমান থাকে না । পৃথিবী থেকে সূর্যের মধ্যে গড় দুরত্ব থাকে প্রায় ১৫ কোটি কিমি. ।
পৃথিবীর আকৃতি প্রায় গোলাকার । এর নিরক্ষীয় ব্যাস ১২,৭৫৭ কিমি. এবং মেরুব্যাস ১২,৭১৪ কিমি.। প্রকৃত গড় ব্যাস ১২,৭৩৫.৫ কিমি.{(১২৭৫৭ + ১২৭১৪) / ২} । সাধারনত গড় ব্যাস ধরা হয় প্রায় ১২,৮০০ কিমি.। সুতরাং পৃথিবীর গড় ব্যাসার্ধ ৬,৪০০ কিমি.। আয়তন অনুসারে পৃথিবী সৌরজগতের পঞ্চম গ্রহ (বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুনের পর) । পৃথিবী পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল প্রায় ৫১ কোটি ৫৪ লক্ষ বর্গকিলোমিটার । পৃথিবীর গড় পরিধি প্রায় ৪০,০০০ কিমি. (প্রকৃতপক্ষে ৪০,০৭৭ কিমি) । খ্রিষ্টের জন্মের প্রায় ২০০ বছর আগে গ্রিক পন্ডিত এরাটসথেনিস মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া ও সিয়েন শহরে সূর্যরশ্মির পতন কোণের তারতম্য বিচার করে অবিশ্বাস্য কিন্তু প্রায় সঠিক ভাবে পৃথিবীর পরিধি নির্ণয় করেছিলেন ।
পৃথিবীর আনুমানিক ওজন প্রায় ৫,৬৯৭ X ১০১৮ টন বা ৬ কোটি কোটি কোটি টন (৬ -এর পর ২১ টি শূন্য বসালে যে সংখ্যা হয় ) । পৃথিবী মহাশূন্যে ভেসে থেকে তার অক্ষ বা মেরুদন্ডের উপর ভর করে নির্দিষ্ট গতিতে নির্দিষ্ট কক্ষপথে আবর্তন করতে করতে সূর্যকে পরিক্রমণ করে চলেছে ।
পৃথিবী পৃষ্ঠের সবচেয়ে উঁচু অংশ ৮,৮৪৮ মিটার (মাউন্ট এভারেস্ট) এবং সবচেয়ে নীচু অংশ ১১,০৩৫ মিটার (প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত) সুতরাং ভূপৃষ্ঠের বন্ধুরতার পরিমাণ প্রায় ২০ কিলোমিটার ।
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ হল চাঁদ । চাঁদের আয়তন পৃথিবীর ৫০ ভাগের ১ ভাগ । চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৬ কিমি.। পৃথিবী থেকে চাঁদের দুরত্ব প্রায় ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিমি.। পৃথিবীর চারিদিকে ১ বার পরিক্রমণ করতে চাঁদের সময় লাগে ২৭ দিন ৮ ঘন্টা ।
পৃথিবীর গতি ( Movement of the Earth ):- আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় যে পৃথিবী স্থিরভাবে অবস্থান করছে আর সূর্য তার চারদিকে ঘুরছে । অতীতের এই ধারণাকে ভুল বলে প্রথম ঘোষণা করেন ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী আর্যভট্ট এবং গ্রিক বিজ্ঞানী গ্যালিলিও । তাঁরা বলেন সুর্য স্থিরভাবে অবস্থান করছে আর পৃথিবীসহ অন্যান্য গ্রহগুলি সূর্যের চারিদিকে অনবরত ঘুরে চলেছে । পরবর্তীকালে কোপারনিকাস, কেপলার, নিউটন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা এই মতবাদকে সমর্থন করেন । সুর্য প্রতিদিন সকলে পূর্বাকাশে উঠে আর সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশে অস্ত যায় ।
পৃথিবীর গতি দুই প্রকার - (১) আবর্তন বা আহ্নিক গতি (Rotation) এবং (২) পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি (Revolution)
আবর্তন বা আহ্নিক গতি (Rotation) :- পৃথিবী তার অক্ষ বা মেরুদন্ডের উপর ভর করে নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্বে অনবরত ঘুরে চলেছে । অহ্ন শব্দের অর্থ 'দিন' । এই গতির ফলে দিনরাত্রি হয় হয় বলে একে আবর্তন বা আহ্নিক গতি বলে ।
সৌরদিন (Solar day):- সূর্যকে সামনে রেখে পৃথিবী তার অক্ষের উপর ভর করে সম্পূর্ণরূপে একবার পাক খেতে ২৪ ঘন্টা সময় নেয় । একে 'সৌরদিন' বলে ।
নাক্ষত্রদিন (Solar day):- সুর্য ছাড়া অন্য কোনো নক্ষত্রের হিসাবে পৃথিবীর সম্পূর্ণ একবার আবর্তনের সময় লাগে ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড একে নাক্ষত্রদিন (Solar day) বলে ।
আবর্তনের বেগ :
- 8911 views