বায়ুর চাপ (Atmospheric Pressure)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 08/07/2021 - 23:02

বায়ুর চাপ (Atmospheric Pressure) : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অন্যান্য পদার্থের মতো বায়ুকেও নিজের কেন্দ্রের দিকে আকর্ষণ করে বলে পৃথিবীর যাবতীয় পদার্থের মতো বায়ুরও ওজন আছে । মাধ্যাকর্ষণ শক্তির দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে বায়ু ভূপৃষ্ঠের সকল বস্তুর চারপাশে প্রবল চাপ দেয় । ভূপৃষ্ঠের কোনো একক আয়তন অঞ্চলের ওপর বায়ু প্রযুক্ত বল বা শক্তির পরিমাণকে বায়ুর চাপ বলে । বায়ু চারদিক থেকে চাপ দেয় । তাই সাধারণভাবে বায়ুর চাপ অনুভূত হয় না । ভূপৃষ্ঠ থেকে যত ওপরে ওঠা যায় বায়ুস্তর পাতলা হতে থাকে বলে বায়ুর চাপও কমে যায় । ফলে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানের বায়ুচাপের মধ্যে পার্থক্য ঘটে । সমুদ্রসমতলে অবস্থিত ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর চাপ সব থেকে বেশি হয়ে থাকে ।

বিজ্ঞানীদের মতে, সমুদ্রপৃষ্ঠে প্রতি এক বর্গ সেন্টিমিটারে বায়ুর চাপ ১ কিলোগ্রাম ওজনের সমান । আবার ৪৫° অক্ষাংশে সমুদ্র সমতলে ৭৬ সেন্টিমিটার.উচ্চতাবিশিষ্ট পারদস্তম্ভ যে চাপ দেয়, তাকে বায়ুর প্রমাণ চাপ বলে । সাধারণভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠে বায়ুর প্রমাণ চাপ হল প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে ১০১৩.২৫ মিলিবার । বর্তমানে পৃথিবীর সব দেশেই বায়ুর চাপ মিলিবার এককে পরিমাপ করা হয় । চাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটারের পারদ-স্তম্ভের উচ্চতা থেকে বায়ুর চাপ মাপা হয় । প্রথমদিকে চাপমান যন্ত্র বা ব্যারোমিটার উদ্ভাবনে পারদের ব্যবহার হলেও পরের দিকে পারদহীন ব্যারোমিটারেরও প্রচলন হয়েছে ।

সমচাপ রেখা (Isobars) : কোনো নির্দিষ্ট সময়ে ভূপৃষ্ঠের যে সকল স্থানের বায়ুর চাপ একই রকম বা সমান থাকে সেই সকল স্থানগুলিকে যোগ করে মানচিত্রে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়, তাকে সমচাপ রেখা বা সমপ্রেষ রেখা বলে । সাধারণত জানুয়ারি ও জুলাই মাসে ভূপৃষ্ঠের প্রতিটি স্থানের বায়ুর চাপকে সমুদ্রতলের চাপে রূপান্তরিত করে কাল্পনিক সমচাপ রেখাগুলিকে টানা হয়ে থাকে । সমচাপ রেখাগুলিকে জানুয়ারি মাসে কিছুটা দক্ষিণে এবং জুলাই মাসে কিছুটা উত্তরের দিকে সরে যেতে দেখা যায় ।

বায়ুচাপ ঢাল (Pressure gradient) : ভূপৃষ্ঠে উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে সমচাপ রেখার সঙ্গে সমকোণ করে, প্রতি একক দূরত্বে বায়ুচাপের পার্থক্যে যে অবক্রম বা ঢালের সৃষ্টি হয়, তাকে বায়ুচাপ ঢাল বলে । সমচাপ রেখাগুলি যত পরস্পরের কাছাকাছি অবস্থান করে বায়ুচাপের ঢালও তত বেশি হয় । জুলাই মাসে উত্তর গোলার্ধে এবং জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ গোলার্ধে বায়ুচাপের ঢাল অধিক হয়ে থাকে । বায়ুচাপের ঢাল যত বেশি হয় বায়ুর গতিবেগও তত বৃদ্ধি পায় ।

****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।