রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

Submitted by arpita pramanik on Wed, 01/02/2013 - 21:36

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া (Mode of Transmission of Pathogenic Viruses) :

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি  করে, যেমন : ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি ।

ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস (Influenza Virus)

[a] সংক্রমণ প্রক্রিয়া ও রোগ লক্ষণ:- এই ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ সুস্থ মানুষের দেহে সংক্রামিত হয় । এই রোগে প্রথমে অনবরত হাঁচি হয় ও নাক দিয়ে জল পড়ে, পরে প্রচন্ড গা, হাত, পা বেদনা সহ তীব্র জ্বর হয় ।

[b] রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা:- ইনফ্লুয়েঞ্জা একটি সংক্রামক রোগ হওয়ায় এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রেখে ইনফ্লুয়েঞ্জা-ভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যায় ।  ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কোনো কার্যকরী প্রতিষেধক ব্যবস্থা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি ।

HIV বা এইডস (AIDS) ভাইরাস

[a] বর্ণনা:- HIV ভাইরাসের পুরো নাম HTLV-III অর্থাৎ Human T Lymphoropic Virus type-III । এটি মানবদেহে এইডস (AIDS) রোগ সংক্রমণকারী ভাইরাস, যা মানবদেহের শরীরের সমস্ত রোগপ্রতিরোধী ব্যবস্থা বা ইমিউনোতন্ত্রকে একেবারে ধ্বংস করে দেয় । ফলে মানুষ যে-কোনো সংক্রমণজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় । AIDS -এর সম্পূর্ণ নাম হল —Acquired Immune Deficiency Syndrome, অর্থাৎ অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হওয়া জনিত লক্ষণ । বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় 1 কোটি মানুষ এই সর্বনাশা রোগের কবলে । HIV কেবলমাত্র মানবদেহকেই আক্রমণ করে, মানবদেহের বাইরে এরা এক মিনিটের বেশি বাঁচে না । এই ভাইরাস RNA যুক্ত অর্থাৎ রেট্রোভাইরাস । RNA -এর সঙ্গে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেজ উৎসেচক থাকায় এদের RNA, পোষক দেহে DNA -তে পরিবর্তিত হতে পারে । এরা ক্ষণে ক্ষণে চরিত্র বদলে নেয়, ফলে এদের বিনাশ কার্যত অসম্ভব । HIV মানুষের রক্তস্রোতে প্রবেশ করে T-লিম্ফোসাইট কোশসমূহকে আক্রমণ করে সব কোশে এরা সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং ওই কোশগুলি থেকে মুক্ত হয়ে আরও অসংখ্য T-লিম্ফোসাইট কোশকে আক্রমণ করে ।  T-লিম্ফোসাইট কোশ ধ্বংস হয়ে গেলে মানুষের শরীরের অনাক্রম্যতা ভেঙ্গে পড়ে এবং আক্রান্ত মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায় ।

[b] HIV সংক্রমণ প্রক্রিয়া:-

[i] HIV আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে একজন সুস্থ লোকের দেহে যৌন সংসর্গের মাধ্যমে HIV সংক্রমিত হতে পারে ।

[ii] HIV আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত বা রক্তজাত পদার্থ, বীর্য অথবা অন্যান্য যৌনক্ষরণজাত পদার্থ,—সুস্থ ব্যক্তির রক্ত বা মিউকাস পর্দার সংস্পর্শে এলে HIV সংক্রমিত হতে পারে ।

[iii] HIV আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ ও সূচ, কিম্বা সেলুন বা অন্য কোথাও দাড়ি কামানোর ব্লেড বা ক্ষুর সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে HIV সংক্রমিত হতে পারে ।

[iv] HIV আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের থেকে সন্তানের মধ্যে HIV সংক্রমিত হতে পারে ।

 

HIV ভাইরাস পুরুষ থেকে পুরুষ, পুরুষ থেকে স্ত্রীদেহে এবং স্ত্রীদেহ থেকে পুরুষ দেহে সংক্রমিত হয় । তবে সামাজিক মেলামেশায় AIDS রোগ ছড়ায় না, যেমন :

(1) করমর্দন, আলতো চুম্বন, ভিড়ে গা ঘসাঘসি, একই ঘরে থাকা, একে অপরের পোষাক ব্যবহার করা,

(2) একই বাসন ও আসবাবপত্র ব্যবহার, আক্রান্ত ব্যক্তির খাবার খাওয়া, এক সঙ্গে খেলাধুলা করা, একই শৌচালয় ব্যবহার করা প্রভৃতি ।

(3) কীটপতঙ্গ, পশু-পাখির মাধ্যমেও এই রোগ ছড়ায় না ।

 

পোলিও ভাইরাস [Poliomyelitis]:- গোলাকৃতি এই ভাইরাস দ্বারা প্রধানত শিশুরা আক্রান্ত হয় । মাছির মাধ্যমে খাদ্য ও জল থেকে পোলিও ভাইরাস শিশুদের দেহে প্রবেশ করে । এই ভাইরাস রোগাক্রান্ত শিশুর স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে শিশুর মস্তিষ্ক ও পেশি অবশ হয়ে পক্ষাঘাত ঘটায় । বর্তমানে পোলিও টিকা ব্যবহারে এই রোগ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা গিয়েছে ।

*****

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...

ভাইরাস ও ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ্য

ভাইরাস কথার শব্দতত্ত্বগত অর্থ বিষ। 1796 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার সর্বপ্রথম ভাইরাস আক্রান্ত বসন্ত রোগের কথা উল্লেখ করেন । 1936 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ব্যাডেন এবং পিরী পরীক্ষা করে দেখান যে, ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন আছে এবং ভাইরাসগুলো নিউক্লিও ...