অভিযোজন ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক

Submitted by arpita pramanik on Sat, 12/22/2012 - 12:22

অভিযোজন ও অভিব্যক্তির সম্পর্ক (Relation between Adaptation and Evolution) :

অভিযোজনের সঙ্গে বিবর্তনের সম্পর্ক নিম্নলিখিত তিনটি উক্তিতে প্রকাশ করা যায় ।

[1] পরিবর্তিত পরিবেশে অভিযোজিত হওয়ার মাধ্যমে জীবদের বিবর্তন ঘটে :- প্রতি নিয়ত পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নির্দিষ্ট পরিবেশে বসবাসকারী জীবদের মধ্যে একটা প্রচেষ্টা থাকে । কারণ পরিবেশের সঙ্গে অভিযোজিত হতে না পারলে তাদের অবলুপ্তির সম্ভাবনা থাকে । কিন্তু কোনও প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত সব সদস্যের পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা সফল হয় না । দেখা গেছে, এই ধরনের ক্ষেত্রে বিশেষ বিশেষ জেনেটিক গঠন-বিশিষ্ট সদস্যের প্রচেষ্টা অন্যান্যদের তুলনায় সফল হয় । যাদের ক্ষেত্রে এই সাফল্য ঘটে, তারা পরিবর্তিত পরিবেশে স্থায়ী আসন লাভ করে এবং অন্যান্যরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায় । পরিবর্তিত পরিবেশে এইভাবে ধারাবাহিক অভিযোজনের মধ্য দিয়ে জৈব বিবর্তন ঘটে ।  অভিযোজনগত এইসব বৈশিষ্ট্য বংশপরম্পরায় সঞ্চারিত হওয়ার ফলেই নতুন নতুন প্রজাতির জীবের আবির্ভাব ঘটে । সুতরাং দেখা যায় যে, অভিযোজন ও অভিব্যক্তি পরস্পর ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত  ।

[2]  বিবর্তনের পথে কোনও বৈশিষ্ঠ্যের একবার অবলুপ্তি ঘটলে তার পুনরাবির্ভাব ঘটে না :-আমরা জানি যে, মাছের মতো জলচর প্রাণীদের পূর্বপুরুষ থেকে সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী প্রভৃতি প্রাণীদের আবির্ভাব ঘটেছে । শ্বাসযন্ত্র বা ফুলকা ত্যাগ করে তার পরিবর্তে স্থলবাসী প্রাণীরা  ফুসফুস অর্জন করেছে । কোনও কোনও স্থলবাসী প্রাণী, যেমন: তিমি, কুমির, কচ্ছপ ইত্যাদি নানা কারণে আবার জলের জীবনে ফিরে গেছে, কিন্তু জলে শ্বাসকার্য চালানোর জন্য ফুলকা তারা আর ফিরে পায়নি । 

[3]  কোনও প্রজাতি নির্দিষ্ট পরিবেশে একবার পরিপূর্ণরূপে অভিযোজিত হওয়ার পর তার পুনরায় পরিবর্তনের সম্ভাবনা হ্রাস পায় । যেমন : প্রায় পনেরো কোটি বছর আগে বিলুপ্ত লাং ফিস --'সেরাটোডাস' যে ধরনের বসতিতে বাস করত, তার বর্তমান বংশধর অস্ট্রেলিয়াবাসী 'নিওসেরাটোডাস' প্রায় একই ধরনের বসতিতে বাস করে । ফলে উভয়ের মধ্যে গঠনগত পরিবর্তন বিশেষ কিছু ঘটেনি ।

উপরোক্ত তিনটি আলোচনা থেকে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, অভিযোজনের মাধ্যমেই জীবের বিবর্তন ঘটে

*****

Related Items

ছত্রাক (Fungi)

ক্লোরোফিলবিহীন পরভোজী পুষ্টিসম্পন্ন ও ইউক্যারিওটিক প্রকৃতির সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদদের ছত্রাক বলা হয় । ছত্রাকের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম । মানবজীবনে ছত্রাকের উপকারিতা ও অপকারিতা । পেনিসিলিয়াম, ঈস্ট প্রভৃতি উপকারী ছত্রাক । পেনিসিলিয়াম এক রকমের বহুকোশী মৃতজীবী ...

জীবাণু বা মাইক্রোবস (Microbes)

যে সমস্ত অতি ক্ষুদ্র এবং এককোশী বা বহুকোশী জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না অথচ কেবলমাত্র অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়, তাদেরই সাধারণভাবে জীবাণু বলে । অতিক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক জীবদের এককথায় জীবাণু বা অণুজীব বা মাইক্রোবস বলা হয় ।

রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাসের রোগ সংক্রমণ প্রক্রিয়া

ভাইরাস বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে, যেমন - ইনফ্লুয়েঞ্জা, AIDS, পোলিও, জল বসন্ত, মাম্পস, হাম, এনকেফালাইটিস, জলাতঙ্ক, পা ও মুখের ঘা, জন্ডিস, ডেঙ্গু জ্বর প্রভৃতি । ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রধানত মানুষের শ্বসনতন্ত্রকে আক্রমণ করে, ফলে রোগীর হাঁচি, কাশি ও নির্গত মিউকাসের মাধ্যমে ...

ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ

1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ বা ফাজ নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । ...

ভাইরাসে জড়ের ও প্রাণের লক্ষণ

ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম থাকে না । ভাইরাস কোনো বহিঃস্থ উদ্দীপকে সাড়া দেয় না । ভাইরাসের চলন ক্ষমতা নেই । ভাইরাসের দেহে কোনোরকম বিপাক ক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না । পোষকের দেহ-কোশে ভাইরাস বংশবিস্তারে সক্ষম । ভাইরাসের দেহে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিডের ...