প্রশ্ন:- 'নদীর বিদ্রোহ' গল্প অবলম্বনে নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালবাসার পরিচয় দাও ।
উঃ- প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদীর বিদ্রোহ' গল্পে নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের মধুর সম্পর্কের রূপটি প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে । গল্পের সূচনাতেই আমরা দেখতে পাই, দীর্ঘ পাঁচদিন প্রচন্ড বর্ষার জন্য নদীকে দেখতে না পেয়ে নদেরচাঁদ অস্থির হয়ে উঠেছে । তাই বৃষ্টি থামলেই সে সহকারীকে দায়িত্ব দিয়ে ছোটে অতল জলের আহ্বানে । নদীই তার আপনজন । নদী তার কাছে শুধু প্রকৃতির দান নয়, আত্মার আত্মীয় । কর্মব্যস্ত জীবনে নদী তার খেলার সঙ্গী । তাই পাঁচদিন ধরে স্ত্রীকে লেখা চিঠি খুব সহজেই সে নদীর ঘোলাজলে ছিঁড়ে ফেলে দেয় আর এক অনাবিল আনন্দে ভরে ওঠে তার মন । শৈশবেও সে নদীর প্রতি ভালোবাসায় আবিষ্ট ছিল । নদী শুকিয়ে গেলে কান্নায় তার চোখ ভিজে যেত । আসলে নদীকে সে জীবন্ত সত্তা মনে করেছে, যার কাছে হারিয়ে গেছে তার একান্ত ব্যক্তিগত জীবন । এইসব ভাবনার মধ্য দিয়ে ধরা পড়েছে নদীর প্রতি তার আন্তরিক ভালোবাসা । নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে নদেরচাঁদের হৃদয়ও যন্ত্রনায় ফেটে পড়তে চায় । কন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, তাকেও মরতে হয় যন্ত্রসভ্যতার আর এক প্রতিভূর মাধ্যমে । চলন্ত রেলগাড়ি যন্ত্রদানবের মতোই মুহুর্তে নদেরচাঁদকে পিষে দিয়ে চলে যায়—যেন নদীর প্রতি নদেরচাঁদের এই সমব্যথারই উত্তর হিসেবে ।
****