সাম্রাজ্যবাদ ও বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি (Background of Imperialism and the First World War)
সাম্রাজ্যবাদ বলতে সাধারণত সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকেই বোঝানো হয় । এইচ.জি.ওয়েলস -এর মতে আধুনিক সাম্রাজ্যবাদ হল কোনো রাষ্ট্রের বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের সজ্ঞান ও সর্বাত্মক চেষ্টা । পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের ভৌগলিক আবিষ্কার এবং সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে ইউরোপের শিল্পবিপ্লব সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারাকে ত্বরান্বিত করে এবং তাকে বাস্তব রূপ দিয়েছিল । ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে জর্জ বার্নাড শ তাঁর 'দি ম্যান অফ ডেসটিনি' (The Man of Destiny) গ্রন্থে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রকৃত রূপটি তুলে ধরেছিলেন । ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে পণ্ডিত হবসন তাঁর সাম্রাজ্যবাদ শীর্ষক গ্রন্থে অর্থনৈতিক তথা বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে নতুন সাম্রাজ্যবাদের তত্ত্ব ব্যাখ্যা করেছেন । শিল্পবিপ্লবের কারণে উপনিবেশবাদ তথা সাম্রাজ্যবাদ মাথাচাড়া দেয় আর এই সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির মধ্যে ঔপনিবেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয় ।
আবার এই সাম্রাজ্যবাদের মূলে ছিল এক ধরণের উগ্র জাতীয়তাবাদ । বিসমার্কের পর জার্মানির কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়াম, কান্ট, ফিকটে, হেগেল, নিটসে, বার্নহার্ড, ট্রিটসকে প্রমুখ জার্মান দার্শনিক জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব বিশ্বসমক্ষে তুলে ধরেন । একইভাবে ক্লেমেনশু ও পয়েনকেয়ারের মতো ফরাসি পণ্ডিত ল্যাটিন জাতির শ্রেষ্ঠত্ব প্রচার করেন । তাঁদের দেখাদেখি অস্ট্রিয়া, ইটালি, রাশিয়া, জাপানও উগ্র জাতীয়তাবাদের দ্বারা পরিচালিত হয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছিল । অবশ্য এই যুদ্ধের ক্ষেত্র আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল । অনেকদিন থেকেই পৃথিবীর দেশগুলির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছিল । ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে সেডানের যুদ্ধে ফ্রান্সকে হারিয়ে জার্মানি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল । যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে ফ্রান্স তার আলসাস ও লোরেন প্রদেশ দুটি জার্মানিকে দিতে বাধ্য হয় । ফলে জার্মানির সঙ্গে তার সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে । অন্যদিকে ইংল্যান্ড তার বাণিজ্যিক স্বার্থে জার্মানির আগ্রাসনকে ঠেকাতে তৎপর । পরন্তু ১৯১২-১৩ খ্রিস্টাব্দে বল্কান যুদ্ধ সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয় । দেশে দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদের বিস্তার বিশ্ব পরিস্থিতিকে অশান্ত করে তোলে ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচিত হয় ।
*****
- 4359 views