ব্রিটিশ শিক্ষানীতি (British Education Policy) :
ইংরেজ শাসকগণ এদেশে আসার পর প্রথম দিকে এদেশে শিক্ষা বিস্তারে খুব একটা আগ্রহ দেখায় নি । কেবলমাত্র ইংরেজদের রাজ্যশাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করবার জন্য কিছু কিছু ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন করেছিলেন । পরবর্তী সময়ে ইংরেজ শাসককুল ভারতীয়দের মধ্যে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে কিছু কিছু শিক্ষার প্রচার শুরু করেছিলেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুলাই গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়্লেসলির প্রচেষ্টায় কলকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ও ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে উইলিয়াম কেরী এবং মার্শম্যান নামে দুই খ্রিস্টান মিশনারির প্রচেষ্টায় হুগলির শ্রীরামপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । এই দুটি কলেজে মূলত প্রাচ্যবিদ্যা, বিশেষত বাংলা শিক্ষা দেওয়া হত । ইংল্যান্ড থেকে আগত ইংরেজ কর্মচারীদের বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রধানত এই কলেজ দুটি স্থাপিত হয়েছিল ।
সরকারি শিক্ষা প্রথা :
১৮১৩ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম সরকারি প্রচেষ্টা শুরু হয় । ওই বছর ইংল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ এক সনদ আইনের মাধ্যমে ভারতে শিক্ষার উন্নতির জন্য বছরে এক লক্ষ টাকা অনুদান মঞ্জুর করেন । দেশীয় ভাষায় বিদ্যালয় স্থাপন এবং প্রাচ্য ভাষা যথা ফরাসী ও সংস্কৃত শিক্ষার পিছনে ওই টাকা ব্যয় করা হবে বলে স্থির হয় । ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে ২০ জানুয়ারী রামমোহন রায় ও ডেভিড হেয়ারের প্রচেষ্টায় হিন্দু কলেজ স্থাপিত হয় । যেটি পরবর্তী কালে প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বর্তমানে প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি নামে পরিচিত । ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দের ১লা জনুয়ারী লর্ড আমহার্স্টের সময় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাচ্য শিক্ষার প্রসারের জন্য সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয় । ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে আলেকজান্ডার ডাফের প্রচেষ্টায় জেনারেল অ্যাসেম্বলী ইনষ্টিটিউশন বা স্কটিশ চার্চ কলেজ স্থাপিত হয় । ভারতে ব্রিটিশ শিক্ষানীতি কী হবে এই নিয়ে দুটি গোষ্ঠীর উদ্ভব হয় । যাঁরা পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের পক্ষে ছিলেন তাঁদের বলা হত অ্যাংলিসিস্ট । আর যাঁরা প্রাচ্য বিদ্যা প্রবর্তনের পক্ষে ছিলেন তাঁদের বলা হত ওরিয়েন্টালিস্ট । লর্ড বেন্টিঙ্কের আমলে এই বিতর্ক চরমে ওঠে । বেন্টিঙ্ক ইংরাজি শিক্ষার অনুকূলে মত প্রকাশ করেন । ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মেকলের এক ঘোষণা অনুযায়ী স্থির হয় সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের কাজে ব্যয়িত হবে । এর পরিণামে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের দ্বার উন্মোচিত হয় ও ভারতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নব জীবনের স্পন্দন অনুভূত হয় । ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে জানুয়ারী কোলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে এদেশে প্রথম চিকিৎসা বিদ্যা পঠন-পাঠনের সূত্রপাত হয় । পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাশ্চাত্য শিক্ষা গ্রহণের প্রতি ভারতীয়দের আগ্রহ জন্মায় । সরকারি চাকরিতে নিয়োগের নীতি গ্রহণ করায় ভারতীয়গণ বিপুলভাবে এই শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হন । ফলে স্বাভাবিকভাবে দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা, টোল, পাঠশালাগুলির অবস্থা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসে । লর্ড বেন্টিঙ্কের পর লর্ড ডালহৌসিও ভারতে শিক্ষা বিস্তারে আগ্রহী ছিলেন । ফলে তাঁর আমলে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে ।
*****
- 9066 views