তড়িৎপ্রবাহের তাপীয় ফল ও তার প্রয়োগ

Submitted by arpita pramanik on Sat, 01/26/2013 - 19:57

তড়িপ্রবাহের তাপীয় ফল (Heating effect of current) :

1841 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী জেমস প্রেসকট জুল সর্বপ্রথম পরিবাহীতে তড়িপ্রবাহের ফলে তাপের সৃষ্টি সম্পর্কে তিনটি সূত্র প্রকাশ করেন, এই সূত্রগুলিকে জুলের সূত্র বলা হয় ।

জুলের সূত্র (Joule's law) : R রোধযুক্ত পরিবাহীতে যদি t সময় ধরে i প্রবাহমাত্রা চালু থাকে, তবে জুলের সূত্রকে নিম্নলিখিত রূপে প্রকাশ করা যেতে পারে—

[i] প্রথম সূত্র : রোধ (R) ও সময় (t) অপরিবর্তিত থাকলে উৎপন্ন তাপ (H) প্রবাহমাত্রার (i) বর্গের সমানুপাতিক হয় । অর্থাৎ, [tex]H \propto {i^2}[/tex]; যখন R এবং t ধ্রুবক বা অপরিবর্তিত ।

[ii] দ্বিতীয় সূত্র : প্রবাহমাত্রার (i) এবং সময় (t) অপরিবর্তিত থাকলে উৎপন্ন তাপ (H) রোধের (R) সমানুপাতিক হয় । অর্থাৎ [tex]H \propto R[/tex]; যখন i এবং t ধ্রুবক বা অপরিবর্তিত ।

[ii] তৃতীয় সূত্র : রোধ (R) ও প্রবাহমাত্রা (i) অপরিবর্তিত থাকলে উৎপন্ন তাপ (H) সময়ের (t) সমানুপাতিক হয় । অর্থাৎ [tex]H \propto t[/tex]; যখন R এবং i ধ্রুবক বা অপরিবর্তিত । সুতরাং, অঙ্কের নিয়ম অনুসারে সূত্রগুলিকে একত্রিত করলে লেখা যায়—

[tex]H \propto {i^2}Rt[/tex] বা, [tex]H = K{i^2}Rt[/tex], [যেখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক = [tex] \frac {1}{J}[/tex], যেখানে J হল তাপের যান্ত্রিক তুল্যাঙ্ক বা জুলের ধ্রুবক । J = 4.2 জুল / ক্যালোরি ] ।

এখন ব্যবহারিক একক অনুযায়ী, তড়িৎপ্রবাহ মাত্রা (i) -কে অ্যাম্পিয়ার, রোধকে (R) -কে ওহম এবং সময় (t) -কে সেকেন্ড এবং উৎপন্ন তাপ (H) -কে ক্যালোরিতে প্রকাশ করলে, সমীকরণটি দাঁড়ায় : [tex]H = \frac{1}{{4.2}}{i^2}Rt = 0.24{i^2}Rt[/tex] ক্যালোরি এবং উৎপন্ন তাপকে জুলে প্রকাশ করলে J -এর মান 1 হয় এবং তখন, [tex]H = {i^2}Rt[/tex] জুল ।

তড়িপ্রবাহের তাপীয় ফলের প্রয়োগ (Applications of heating effect of current) :

কোনো পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িত্প্রবাহ পাঠালে পরিবাহী উত্তপ্ত হয়ে ওঠে— একেই তড়িপ্রবাহের তাপীয় ফল বলে । এই অবস্থায়  তড়িৎশক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয় । তড়িপ্রবাহের তাপীয় ফলের কয়েকটি প্রয়োগ :-

[1] ইলেকট্রিক হিটার (Electric heater) : ইলেকট্রিক হিটারে একটি পোর্সেলিন বা ফায়ার ক্লের চাকতির কুণ্ডলীকৃত গর্তের মধ্যে একটি নাইক্রোম তারের কুণ্ডলী সাজিয়ে রাখা হয় । নাইক্রোম হল নিকেল, লোহা এবং ক্রোমিয়ামের সংকর ধাতু । নাইক্রোমের রোধাঙ্ক খুব বেশি এবং গলনাঙ্ক খুব উচ্চ । কুণ্ডলীর দুই প্রান্ত প্লাগের সাহায্যে বৈদ্যুতিক সরবরাহ লাইনে যুক্ত করলে কুণ্ডলীর ভিতর দিয়ে তড়িপ্রবাহ চলে এবং কুণ্ডলীটি লোহিত তপ্ত হয়ে ওঠে । তখন হিটারের ওপর বস্তু গরম হয় । বিভিন্ন ক্ষমতার হিটার পাওয়া যায় । 1000 ওয়াটের হিটারে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় 1500 ওয়াটের হিটারে তার চেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হয় ।

[2] ইলেকট্রিক ইস্ত্রি (Electric Iron ) : ইলেকট্রিক ইস্ত্রিতে একটি নাইক্রোম তারের কুণ্ডলী একটি অভ্রের ত্রিভুজাকৃতি কাঠামোর ওপর জড়ানো থাকে । অন্তরিত করার জন্য এই ত্রিভুজাকৃতি কাঠামোর ওপর ও নীচ দুটি অভ্রের চাদর দিয়ে ঢাকা থাকে । সমগ্র ব্যবস্থাটি একটি লোহার আবরণের মধ্যে রাখা হয় । অভ্র বিদ্যুতের কুপরিবাহী, কিন্তু তাপের পরিবাহী । কাজেই, নাইক্রোম তারের কুণ্ডলীকে দুটি অভ্রের পাতের মধ্যে রাখলে ইস্ত্রিকে বৈদ্যুতিক লাইনের সঙ্গে যুক্ত করলে শক পাওয়ার ভয় থাকে না । তড়িপ্রবাহ হলে কুণ্ডলীটি উত্তপ্ত হয়ে লোহার আবরণটিকে উত্তপ্ত করে । তখন জামা কাপড় ইস্ত্রি করা যায় ।

*****

Related Items

নিউক্লীয় বিভাজন (Nuclear fission)

যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় কোনো ভারী পরমাণু নিউক্লিয়াসকে উপযুক্ত শক্তিসম্পন্ন নিউট্রন কণা দ্বারা আঘাত করলে, ভারী পরমাণুর নিউক্লিয়াসটি বিভাজিত হয়ে দুটি প্রায় সমভর বিশিষ্ট টুকরায় পরিণত হয় এবং সেই সঙ্গে কয়েকটি নিউট্রন এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয়, সেই ঘটনাকে নিউক্লীয় ...

তেজস্ক্রিয় পদার্থের ব্যবহার, দুষণ ও সতর্কীকরণ

তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা । প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের ভাঙ্গনের ফলে যে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সৃষ্টি হয় তাকে চিকিত্সাবিজ্ঞান, কৃষিকার্য, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রভৃতি নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । রোগ নির্ণয় এবং রোগ ...

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য

বিভিন্ন গবেষণার পর তেজস্ক্রিয়তা সম্বন্ধে নীচের বিষয়গুলি জানা যায় । তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি নিউক্লীয় ঘটনা [nuclear phenomenon] । এর সঙ্গে নিউক্লিয়াস বহির্ভূত ইলেকট্রনের কোনো সম্পর্ক নেই । যে সকল মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 83 -এর বেশি হয়, কেবলমাত্র তারাই ...

প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা ও তেজস্ক্রিয় রশ্মিসমূহের ধর্মাবলী

মৌলগুলি থেকে নিঃসৃত এই জাতীয় শক্তিশালী রশ্মিকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি বলা হয় । বিভিন্ন মৌল দ্বারা তেজস্ক্রিয় রশ্মি নিঃসরণের এই ঘটনাকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয়তা বলা হয় । যেসব পদার্থ থেকে এই রশ্মি বিকিরিত হয় সেই পদার্থগুলিকে প্রাকৃতিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ...

এক্স-রশ্মি ও সাধারণ আলোক-রশ্মির তুলনা

এক্স-রশ্মি এবং আলোক-রশ্মি উভয়েই তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ । শূন্য মাধ্যমে আলোক-রশ্মি এবং এক্স-রশ্মি উভয়ের বেগ (3 x 108 মিটার / সেকেন্ড) । উভয় রশ্মিই সরলরেখায় যায় । বিশেষ ব্যবস্থায় আলোক-রশ্মির মতো এক্স-রশ্মির প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ হয় । উভয় রশ্মিই ফটোগ্রাফিক ...