তাপীয় আয়ন নিঃসরণ

Submitted by arpita pramanik on Fri, 02/01/2013 - 12:27

তাপীয় আয়ন নিঃসরণ (Thermionic emission) :

বিজ্ঞানী ড্রুড -এর মুক্ত ইলেকট্রন তত্ত্ব অনুযায়ী ধাতুর মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রনগুলি স্বাধীনভাবে এলোমেলো ঘুরে বেড়ায় । সাধারণভাবে এই ইলেকট্রনগুলি ধাতবপৃষ্ঠ ত্যাগ করে যেতে পারে না । কারণ ধাতবপৃষ্ঠ ওই ইলেকট্রনগুলির উপর একটি আকর্ষণ বল প্রয়োগ করে ও এদের ধাতুর ভিতরেই রেখে দেয় । ধাতবপৃষ্ঠ ছেড়ে যেতে হলে ইলেকট্রনকে কিছু কার্য করতে হয় ।

যে নুন্যতম শক্তি ইলেকট্রনকে সরবরাহ করলে ইলেকট্রন ধাতবপৃষ্ঠ পরিত্যাগ করতে সমর্থ হয়, তাকে ওই ধাতবপৃষ্ঠের তাপ-আয়নিক কার্য অপেক্ষক (thermionic work function) বলা হয় । বিভিন্ন পদার্থের কার্য অপেক্ষকের মান বিভিন্ন । কোনো পদার্থের কার্য অপেক্ষকের মান কম হলে সেই পদার্থ থেকে ইলেকট্রন নিঃসরণ সহজেই ঘটানো সম্ভব হয় । যেহেতু ধাতু মধ্যস্থ ইলেকট্রনের নিজস্ব গতিশক্তি যথেষ্ট নয়, তাই ধাতবপৃষ্ঠের আকর্ষণী বাধা অতিক্রম করে ইলেকট্রনকে মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় কার্য করার জন্য বাইরের কোনো উৎস থেকে ইলেকট্রনকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করতে হয় । বাইরের এই শক্তি-উৎস নানা রকম হতে পারে । যেমন— তাপ-শক্তি, আলোক-শক্তি, তড়িৎ অথবা চৌম্বকক্ষেত্রে সঞ্চিত শক্তি, তড়িতাধানের গতিশক্তি ইত্যাদি । 

তাপীয় আয়ন নিঃসরণ : এই পদ্ধতিতে ধাতব পদার্থকে উত্তপ্ত করা হয় । প্রযুক্ত তাপশক্তি ইলেকট্রনের গতিশক্তি বৃদ্ধি করে । ফলে বেশ কিছু ইলেকট্রন ধাতবপৃষ্ঠ থেকে মুক্ত হওয়ার মতো যথেষ্ট গতিশক্তির অধিকারী হয় এবং ধাতবপৃষ্ঠ ত্যাগ করতে সক্ষম হয় । ধাতবপৃষ্ঠ থেকে নির্গত ইলেকট্রনের সংখ্যা ওই পৃষ্ঠের উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে ।

তাপ প্রয়োগে উত্তপ্ত ধাতু থেকে ইলেকট্রন নিঃসরণের প্রক্রিয়াকে বলা হয় তাপীয় আয়ন নিঃসরণ (Thermionic emission) ।

নিঃসৃত ইলেকট্রনগুলিকে বলা হয় তাপীয়-আয়ন (Thermions) । তাপীয়-আয়নগুলি যে তড়িৎপ্রবাহের সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় তাপীয় আয়ন-প্রবাহ (Thermionic current) ।

যে যন্ত্রের মধ্যে ইলেকট্রন নিঃসরণ প্রক্রিয়াটি ঘটানো হয়, তাকে তপ্ত ক্যাথোড-রশ্মি নল (Hot cathode ray tube) বলা হয় ।

*****

Related Items

জারণ ও বিজারণ একসঙ্গে ঘটে

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জারণ ও বিজারণ প্রক্রিয়া একই সঙ্গে ঘটে । অর্থাৎ, জারণ ও বিজারণ ক্রিয়া পরস্পরের পরিপূরক । কোনো বিক্রিয়ায় জারণ-ক্রিয়া ঘটলেই বিজারণ ক্রিয়াও ঘটবে । এই রকম রাসায়নিক বিক্রিয়াকে রেডক্স বিক্রিয়া বলা হয় । ...

কয়েকটি জারক ও বিজারক পদার্থ

কয়েকটি জারক পদার্থ - ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড, নাইট্রিক অ্যাসিড, অক্সিজেন, পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট, গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিড, ওজোন, পটাশিয়াম ডাই-ক্রোমেট, হাইড্রোজেন পারক্সাইড, ফ্লুওরিন, রেড লেড, তরল ব্রোমিন, ক্লোরিন, কয়েকটি বিজারকের বিজারণ ক্ষমতার উদাহরণ ...

জারণ বিজারণের ইলেক্ট্রনীয় মতবাদ

জারণ ও বিজারণ রসায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া । সাধারণত কোনো মৌলে বা যৌগে অক্সিজেনের সংযুক্তি বা কোনো যৌগ থেকে হাইড্রোজেনের বিযুক্তিকে জারণ এবং কোনো মৌলে বা যৌগে হাইড্রোজেনের সংযুক্তি বা কোনো যৌগ থেকে অক্সিজেনের বিযুক্তিকে বিজারণ বলা হয় । ...

সমযোজী যৌগগুলির বৈশিষ্ট্য

সাধারণ তাপমাত্রায় বেশির ভাগ সমযোজী যৌগ সাধারণত তরল কিংবা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে কিন্তু বেশি আণবিক গুরুত্ববিশিষ্ট সমযোজী মৌল বা যৌগগুলি কঠিন বা তরল হয় । সমযোজী যৌগে সমযোজী বন্ধন দৃঢ় প্রকৃতির, তার ফলে অণুগুলি স্থায়ী হয় । ...

ইলেক্ট্রনীয় যোজ্যতা বা তড়িৎ-যোজ্যতা

সাধারণ অবস্থায় পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা সমান হওয়ার জন্য পরমাণু নিস্তড়িৎ হয় । সাধারণ নিয়মে পরমাণুর সংযোগ হওয়ার সময় ধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন এবং অধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে । ফলে কোনো পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয় ...