কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল

Submitted by arpita pramanik on Thu, 04/04/2013 - 21:06

কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল (CuSO4, 5H2O) :

Copper Sulphate :

কেলাস-জলযুক্ত কিউপ্রিক সালফেটকে ব্লু-ভিট্রিয়ল বলে । ব্লু-ভিট্রিয়ল সাধারণভাবে তুঁতে নাম পরিচিত । এর রাসায়নিক সংকেত CuSO4, 5H2O  ।

প্রকৃতি :-

[i] কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী ও গাঢ় নীলবর্ণের কেলাসিত অজৈব কঠিন পদার্থ । এটি একটি শমিত লবণ । জলে দ্রাব্য এবং জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে ।

[ii] কপার সালফেট -এর প্রতি অণুতে পাঁচ অণু কেলাস জল আছে ।

[iii] কপার সালফেটকে উত্তপ্ত করলে 250°C উষ্ণতায় এই কেলাস জল বের হয়ে যায় এবং কেলাস গঠন ভেঙ্গে সাদা গুঁড়োয় পরিণত হয় । একেই অনার্দ্র কপার সালফেট (CuSO4) বলে ।

[iv] কপার সালফেটকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে 750°C উষ্ণতায় কালো কিউপ্রিক অক্সাইডে পরিণত হয় ।

[v] অতিরিক্ত অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণের সঙ্গে বিক্রিয়ায় গাঢ় নীলবর্ণের কিউপ্রো-অ্যামোনিয়াম সালফেট উৎপন্ন হয় ।

[vi] তুঁতে জলীয় দ্রবণে আর্দ্র বিশ্লেষিত হয়, তাই দ্রবণে অ্যাসিডের ধর্ম প্রকাশ পায় । CuSO4 দ্রবণে, কপারের চেয়ে বেশি পজিটিভ তড়িৎধর্মী ধাতু, যেমন Fe বা Zn যোগ করলে আয়রন বা জিঙ্ক দ্রবীভূত হয়ে সালফেট লবণে পরিণত হয় এবং ধাতব কপার অধঃক্ষিপ্ত হয় ।

[vii] কপার সালফেট -এর জলীয় দ্রবণ মৃদু অম্লধর্মী । এই দ্রবণ নীল লিটমাসকে  ঈষৎ লাল করে ।    

    Zn + CuSO4 = ZnSO4 + Cu↓ ;   CuSO4 + Fe = FeSO4 + Cu↓

ব্যবহার :-

[i] কপার প্লেটিং, ইলেকট্রো-টাইপিং এবং ধাতব কপারের শোধনে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থরূপে কপার সালফেট ব্যবহৃত হয় ।

[ii] কীটনাশক ওষুধ প্রস্তুতিতে এবং রং-শিল্পে কপার সালফেট ব্যবহৃত হয় ।

[iii] সাদা রং -এর অনার্দ্র কপার সালফেট (CuSO4) জলের সংস্পর্শে এলে আবার নীল বর্ণ ধারণ করে, তাই গ্যাস অথবা অন্যান্য তরলে জলের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য অনার্দ্র কপার সালফেট ব্যবহৃত হয় ।

[iv] পরীক্ষাগারে বিকারকরূপে কপার সালফেট ব্যবহৃত হয় ।

[v] ড্যানিয়েল কোশে কপার সালফেট (CuSO4) -এর ব্যবহার আছে ।

[vi] কপার সালফেট (CuSO4) একটি বিষাক্ত পদার্থ । তাই পোকা মাকড়ের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে কীটনাশক রূপে তুঁতে ব্যবহার করা হয় । তুঁতে এবং কলিচুনের মিশ্রণকে বরডিয়াক্স মিশ্রণ বলে । একে কীটনাশক হিসাবে ফল ও সবজির বাগানে ছড়ানো হয় । এছাড়া কৃষিক্ষেত্রের আগাছা মেরে ফেলার কাজে তুঁতে ব্যবহার করা হয় ।

কপার সালফেট ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতি (Health hazards of using Copper Sulphate) :

অসাধু ব্যবসায়ী দ্বারা কপার সালফেট বা তুঁতেকে বিভিন্ন অসাধু কাজে ব্যবহার করা হয় । অনেক সময় শাকসবজি রং করার জন্য তুঁতে ব্যবহার করা হয় । তুঁতে বিষাক্ত পদার্থ, তাই তুঁতে দিয়ে রং করা শাকসবজি খাওয়া বিপজ্জনক এবং তুঁতে আমাদের শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর । তাই এই রং করা শাকসবজি থেকে তুঁতে মুক্ত করার পর ওই শাকসবজি খাদ্যবস্তু হিসাবে ব্যবহার করা উচিত । তুঁতে জলে দ্রাব্য, সেজন্য সামান্য গরম জলে শাকসবজি বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর জল দিয়ে কয়েকবার ধুয়ে নিলে শাকসবজি তুঁতে মুক্ত হয় । কীটনাশক হিসাবে শাকসবজিতে তুঁতের সরাসরি প্রয়োগ স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর ।

*****

Related Items

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের শনাক্তকরণ

সিলভার নাইট্রেট দ্রবণের সঙ্গে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়ায় অদ্রাব্য সিলভার ক্লোরাইডের থকথকে সাদা অধঃক্ষেপ পাওয়া যায় । এই অধঃক্ষেপ নাইট্রিক অ্যাসিড -তে অদ্রাব্য কিন্তু অতিরিক্ত অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সিড -এ দ্রাব্য । হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের মধ্যে ক্লোরিন এবং হাইড্রোজেন ...

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসের ধর্ম

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড বর্ণহীন, শ্বাসরোধী, ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত, অম্লস্বাদ বিশিষ্ট গ্যাস । হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস বাতাসের চেয়ে প্রায় 1.3 গুণ ভারী, এর বাষ্পীয় ঘনত্ব 18.25। এই গ্যাস জলে অত্যন্ত দ্রাব্য, 0°C উষ্ণতায় এবং প্রমাণ চাপে 1 সিসি জলে 450 সিসি হাইড্রোজেন ক্লোরাইড ...

হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুতি

HCl -এর জলীয় দ্রবণ অর্থাৎ, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রস্তুতি: গ্যাসীয় অবস্থায় HCl -কে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড বলে । এই গ্যাসের জলীয় দ্রবণকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড বলে । উত্পন্ন হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাসকে জলে দ্রবীভূত করলে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড পাওয়া যায় । ...

হাইড্রোজেন ক্লোরাইড এবং হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড

1648 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী গ্লোবার রক সল্ট ও গাঢ় সালফিউরিক অ্যাসিডের বিক্রিয়া ঘটিয়ে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস তৈরি করেন । বিজ্ঞানী প্রিস্টলী 1772 খ্রিস্টাব্দে সমুদ্রের লবণ থেকে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড প্রস্তুত করেন । তিনিএই অ্যাসিডের নাম দেন সামুদ্রিক অ্যাসিড ...

তড়িৎ-বিশ্লেষণের প্রয়োগ

তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি যেমন - সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুগুলিকে তাদের আকরিক থেকে নিষ্কাশিত করা হয় । আবার কতকগুলি ধাতু যেমন - কপার, জিঙ্ক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতির তড়িৎ-বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশোধন করা হয় । ...