শব্দদূষণ (Sound Poullution)

Submitted by arpita pramanik on Fri, 07/24/2020 - 18:14

শব্দদূষণ (Sound Poullution)

জলদুষণ, বায়ুদূষণের মত শব্দদূষণও আমাদের পরিবেশকে দূষিত করে । মূলত শব্দের প্রাবল্য তথা তীব্রতার কারণে শব্দ দূষণ ঘটে । শব্দের প্রাবল্য যত বেশি হয় মানুষের কানের পক্ষে তা তত বেশি পীড়াদায়ক হয় । শব্দের তীব্রতার মাত্রা পরিমাপ করা হয় ‘বেল’ এককে । ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এককটি বড়ো হওয়ায় তার 1/10 অংশ অর্থাৎ, ‘ডেসিবেল’ (dB) একক ব্যবহার করা হয় । নূন্যতম যে তীব্রতার শব্দ আমরা শুনতে পাই তাকে শূন্য  ডেসিবেল (0dB) ধরলে 65dB তীব্রতা পর্যন্ত শব্দ আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের পক্ষে নিরাপদ । এর বেশি তীব্রতার শব্দ আমাদের শ্রবণেন্দ্রিয়ের পক্ষে ক্ষতি করে । এছাড়া বেশি তীব্রতার শব্দ পরোক্ষভাবে আমাদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন ঘটায় ।

শব্দদূষণের কারণ :

বিভিন্ন উচ্চ তীব্রতার শব্দ পরিবেশে দূষণ ঘটায় । মাইকের জোরালো আওয়াজ, যানবাহনের শব্দ, ইলেকট্রিক হর্ণের শব্দ, বিস্ফোরণ বা বাজি পটকার শব্দ, কলকারখানার শব্দ, এয়ারপোর্টে এরোপ্লেনের ওঠা-নামার শব্দ ইত্যাদি আমাদের পরিবেশে সব সময়ই কানের পক্ষে পীড়াদায়ক শব্দ উৎপন্ন করে চলেছে । তাছাড়া বাড়িতে ব্যবহৃত পাম্প, জেনারেটর, উচ্চগ্রামে চালানো টিভি, রেডিও, সাউন্ড বক্স ইত্যাদির শব্দও শব্দদূষণ ঘটায় । বাজারের কোলাহল, খেলার মাঠের চিৎকার এগুলিও শব্দদূষণের কারণ ।

শব্দদূষণের ক্ষতিকারক প্রভাব :

শব্দদূষণের ক্ষতিকারক মাত্রা শব্দের তীব্রতা এবং স্থায়িত্বের কালের ওপর নির্ভর করে । বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নির্দেশিত শব্দের নিরাপদ তীব্রতা লেভেল হল 65 ডেসিবেল (dB) । শব্দের তীব্রতা 65 dB (ডেসিবেল) এর বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর । 80dB  (ডেসিবেল) এর শব্দ আমাদের ক্রুদ্ধ করে তোলে, 85dB  (ডেসিবেল) এর শব্দ কানের ক্ষতি করে, 110dB এর শব্দ খুবই অস্বস্তিকর এবং 150-160 dB এর আওয়াজ আমাদের চিরদিনের জন্য বধির করে দিতে পারে । অতিরিক্ত প্রাবল্যের শব্দ আমাদের বিরক্তি উৎপাদন করে, মনের একাগ্রতা নষ্ট করে এবং বিষন্নতা সৃষ্টি করে । শব্দদূষণের ফলে মানসিক উদ্বেগ, শ্বাসকষ্ট, পেপটিক আলসার ইত্যাদি হতে পারে । শব্দদূষণের ফলে আমরা স্নায়বিক রোগে ও মাথাধরায় আক্রান্ত হই । এর ফলে আমাদের কর্মদক্ষতা কমে, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার (Glucose)  মাত্রা বাড়ে । উচ্চ তীব্রতার শব্দ হৃদ রোগীদের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে । প্রসুতি নারী দীর্ঘকাল শব্দদূষণের মধ্যে থাকলে বিকলাঙ্গ, কম ওজনের এবং জড়বুদ্ধি সম্পন্ন সন্তান প্রসব করতে পারেন ।

শব্দদূষণের প্রতিকার :

শব্দদূষণ অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব । সরকারি আইন অনুযায়ী প্রকাশ্য স্থানে উৎপন্ন শব্দের তীব্রতার ঊর্ধ্বসীমা 65 dB বেঁধে দেওয়া হয়েছে | এছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের শব্দ দূষণের প্রতিকার করতে হবে । যেমন –

(i) কানের সমস্যা উত্তরণের জন্য যাঁরা কলকারখানা, বিমানবন্দর ইত্যাদি জায়গায় কাজ করেন তারা কানে ইয়ারপ্লাগ, নয়েজ হেলমেট ব্যবহার করতে পারেন ।

(ii) জলের পাম্প জেনারেটর ইত্যাদিকে সুনির্বাচিত স্থানে শব্দশোষক (Sound absorber) পদার্থ নির্মিত ভারী প্যাডের ওপর বসিয়ে শব্দদূষণ কমানো সম্ভব ।

(iii) রাস্তায় মোটরগাড়ির হর্ন আস্তে বাজিয়ে, শব্দের পরিকল্পনামাফিক শব্দশোষক পদার্থ নির্মিত বোর্ড প্রাচীর স্থাপন এবং বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত শব্দশোষক পদার্থের হোডিং ব্যবহার করে শব্দের তীব্রতা কমানো যায় ।

(iv) হাসপাতাল, স্কুল- কলেজের চারদিকে গাছপালার সারি তৈরি করে, করিডোরে কাঠ (শব্দশোষক) নির্মিত আসবাবপত্র রেখে শব্দের প্রাবল্য অনেকাংশে কমানো সম্ভব ।

(v) উপযুক্ত নগর পরিকল্পনার মাধ্যমে শিল্প এলাকা, বিমানবন্দরগুলি থেকে জনবসতিকে দূরে স্থাপন করে শব্দদূষণ মাত্রা কমানো যায় ।

(vi) বাড়িতে রেডিও , টিভি, সাউন্ড রেকডিং সিস্টেম প্রভৃতি কম আওয়াজে চালিয়ে, বাজি, পটকা নিষিদ্ধ করে, পুজো প্যান্ডেল ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে শব্দদূষণ রোধ করা যায় । এর জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনামাফিক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে যথাযথ আইন প্রণয়ন দরকার ।

*****

Comments

Related Items

পদার্থ ও শক্তি (Matter and Energy)

প্রকৃতিতে দুটি ভিন্ন বিষয় অস্তিত্ব আমরা বুঝতে পারি একটি জড় বা পদার্থ (matter) এবং অন্যটি হলো শক্তি (energy)। পদার্থের নির্দিষ্ট পরিমাণকে বস্তু বলে । যেমন প্লাস্টিক দিয়ে জলের বালতি, মগ তৈরি করা হয় সুতরাং জলের বালতি, মগ হলো বস্তু কিন্তু এগুলির উপাদান প্লাস্টিক হলো

কার্য, ক্ষমতা ও শক্তি

বাইরে থেকে কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে যদি বস্তুর অবস্থানের বিবর্তন হয় তাহলে প্রযুক্ত বল কার্য করেছে বলে ধরা হয় । কিন্তু বল প্রয়োগ করলেও যদি বস্তুটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রযুক্ত বল কোন কার্য করেছে বলে ধরা হয় না । বল এবং সরণ ভেক্টর রাশি হলেও কার্য একটি স্কেলার রাশি কার্যের মান আছে ...

গতি সংক্রান্ত কয়েকটি রাশি

যদি কোন বস্তু একটি নির্দিষ্ট দিকে স্থান পরিবর্তন করে তবে সেই পরিবর্তনকে বস্তুটির সরণ বলে । অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিকে কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন কে স্মরণ বলে । বস্তুটির প্রথম এবং শেষ অবস্থান একটি সরলরেখা দিয়ে যোগ করলে যে রৈখিক দূরত্ব পাওয়া যায় তাই হলো সরণের পরিমাপ ।

শ্বসন (Respiration)

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শ্বসন বস্তু) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে ...

চাপ ও ঘাত (Pressure and Thrust)

চাপ (pressure): কোনো তলের একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বল কে চাপ বলে । ঘাত (Thrust): কোন প্রবাহী তার সংলগ্ন কোন তলের উপর যে বল প্রয়োগ করে তাকে প্রবাহীর ঘাত বলে ।