শব্দ বিস্তারের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়

Submitted by arpita pramanik on Thu, 09/03/2020 - 23:12

শব্দ বিস্তারের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয় (Sound needs a medium for Propagation)

শব্দের উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ বায়ু মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের কানে এসে পৌঁছলে মস্তিষ্কে এক রকম অনুভূতি সৃষ্টি করে । তখন আমরা শব্দ শুনতে পাই । বায়ু মাধ্যম না থাকলে শব্দ আমাদের কানে পৌঁছতে পারত না । ফলে আমরা শব্দ শুনতে পেতাম না ।

পুকুরের জলের অভ্যন্তরে কোন শব্দ তৈরি করা হলে উৎপন্ন শব্দের পুকুরের জলে ডুব দিয়ে থাকে কোন ব্যক্তি পষ্ট শুনতে পায় করণ শব্দ তরল মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে ।

শব্দের উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ শূন্যস্থান দিয়ে চলতে পারে না, শব্দের বিস্তারের জন্য কোন বাস্তব মাধ্যমের (কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়) প্রয়োজন হয় । নীচের পরীক্ষা দ্বারা এটি প্রমাণ করা যায় ।

পরীক্ষা :

Bell Jar Experimentএকটি বায়ু নিষ্কাশন পাম্পের টেবিলের উপর কাঁচের একটি বড় বেলজার  রাখা হল । বেলজারের কিনারায় সামান্য ভেসলিন লাগিয়ে এবং খোলা মুখটি একটি রবারের ছিপি দিয়ে বন্ধ করে বেলজারটি বায়ুনিরুদ্ধ করা হল ।

ছিপির মধ্য দিয়ে দুটো তার প্রবেশ করিয়ে একটা কলিংবেল এমন ভাবে যুক্ত করা হলো যেন কলিংবেলটি বেলজারের ভিতরে থাকে । রবারের ছিপি থেকে বেরিয়ে আসা তার দুটোর সঙ্গে একটা ব্যাটারি এবং একটা সুইচ যুক্ত করা হল । এবার সুইচ অন করলে কলিংবেলের শব্দ শোনা যাবে । এখন বায়ু নিষ্কাশন পাম্পের সাহায্যে বেলজারের ভিতরের বায়ু নিষ্কাশন করতে থাকলে কলিংবেলের শব্দ ক্রমে ক্ষীণ হতে থাকবে এবং একসময় আর শোনা যাবে না । এরপর খুব ধীরে ধীরে বেলজারে বায়ু প্রবেশ করিয়ে কলিং বেলের সুইচ অন করলে আবার কলিংবেল এর শব্দ শোনা যাবে । এই পরীক্ষা থেকে সহজেই বোঝা যায় যে বাতাস বা কোন মাধ্যম ছাড়া শব্দের বিস্তার সম্ভব নয় ।

 

চাঁদ বা সূর্যে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ হলেও সেই বিস্ফোরণের প্রচন্ড শব্দ আমরা শুনতে পাই না কেন ?

চাঁদ সূর্য বা অন্য কোন গ্রহ নক্ষত্রে প্রচন্ড বিস্ফোরণ হলেও তার শব্দ কখনো পৃথিবীতে পৌঁছাবে না কারণ ওই সব গ্রহ-নক্ষএ এবং পৃথিবীর মাঝের দূরত্বের বেশির ভাগই শূন্য অর্থাৎ কোন জড় মাধ্যম নেই । শূন্য মাধ্যমে শব্দের বিস্তার সম্ভব নয় ।

 

চন্দ্রপৃষ্ঠে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বললেও সে কথা কেউ শুনতে পায়না  কেন ?

চাঁদে বাতাস বা অন্য কোন গ্যাসীয় পদার্থ থাকে না । চাঁদের চারিদিকে মহাশূন্য বিরাজ করে । কাজেই চাঁদে কোন জড় মাধ্যম না থাকায় চাঁদে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা বললেও সে শব্দ শোনা যাবে না । এজন্য চাঁদে কথা বলার জন্য বেতারের সাহায্য নেওয়া হয় ।

 

চাঁদ বা সূর্য থেকে কোন বিস্ফোরণের শব্দ পৃথিবীতে পৌঁছায় না কিন্তু চাঁদ বা সূর্য থেকে আলো এসে পৃথিবীতে পৌঁছায় কেন ?

শব্দ এবং আলোক উভয়ই তরঙ্গ হলেও এক রকমের তরঙ্গ নয় । শব্দ তরঙ্গ হল স্থিতিস্থাপক তরঙ্গ । শব্দ তরঙ্গের দৈর্ঘ্য আলোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের চেয়ে অনেক বেশি তাই শব্দ তরঙ্গের চলাচলের জন্য জড় মাধ্যমের প্রয়োজন হয় । কাজেই চাঁদ, সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে কোন মাধ্যম না থাকায় ওখান থেকে কোন বিস্ফোরণের শব্দ পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় না । আলোক তরঙ্গ হলো তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ । আলোকের তরঙ্গদৈর্ঘ্য শব্দের তরঙ্গদৈর্ঘ্যের অনেক ছোট তাই আলোক তরঙ্গের চলাচলের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না । এজন্য চাঁদ সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যে কোন মাধ্যম না থাকলেও ওখান থেকে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছায় ।

 

কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে শব্দের বিস্তার

কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়েত্ত শব্দ বিস্তার লাভ করে । নিচের উদাহরণগুলি থেকে এটির প্রমাণ পাওয়া যায় ।

লম্বা টেবিলের এক প্রান্তে একটি ঘড়ি রেখে অন্য প্রান্তের টেবিলের উপর কান পাতলে ঘড়ির টিকটিক শব্দ বেশ জোরে জোরে শোনা যায় । এখানে কঠিন মাধ্যমে কাঠের মধ্য দিয়ে শব্দের বিস্তার হয় ।

দেশলাই বাক্স ও তার দিয়ে তৈরি খেলনা টেলিফোনের এক প্রান্তে একটি বাক্সের মধ্যে মুখ রেখে আস্তে আস্তে কথা বললে কিছু দূরে রাখা অন্য একটি বাক্সে কেউ কান পাতলে কথা শব্দ শুনতে পাওয়া যায় । এখানে কঠিন মাধ্যম বাক্স ও তারের মধ্য দিয়ে শব্দের বিস্তার হয় ।

*****

Comments

Related Items

কার্য, ক্ষমতা ও শক্তি

বাইরে থেকে কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে যদি বস্তুর অবস্থানের বিবর্তন হয় তাহলে প্রযুক্ত বল কার্য করেছে বলে ধরা হয় । কিন্তু বল প্রয়োগ করলেও যদি বস্তুটির অবস্থানের কোনো পরিবর্তন না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে প্রযুক্ত বল কোন কার্য করেছে বলে ধরা হয় না । বল এবং সরণ ভেক্টর রাশি হলেও কার্য একটি স্কেলার রাশি কার্যের মান আছে ...

গতি সংক্রান্ত কয়েকটি রাশি

যদি কোন বস্তু একটি নির্দিষ্ট দিকে স্থান পরিবর্তন করে তবে সেই পরিবর্তনকে বস্তুটির সরণ বলে । অর্থাৎ নির্দিষ্ট দিকে কোন বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন কে স্মরণ বলে । বস্তুটির প্রথম এবং শেষ অবস্থান একটি সরলরেখা দিয়ে যোগ করলে যে রৈখিক দূরত্ব পাওয়া যায় তাই হলো সরণের পরিমাপ ।

শ্বসন (Respiration)

যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জীবকোষস্থ খাদ্যবস্তু (শ্বসন বস্তু) মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে উৎসেচকের সহায়তায় জারিত হয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জল (কখনো ইথাইল অ্যালকোহল বা ল্যাকটিক অ্যাসিড) উৎপন্ন করে এবং খাদ্যে আবদ্ধ স্থৈতিক শক্তি গতি শক্তি বা তাপশক্তিতে ...

চাপ ও ঘাত (Pressure and Thrust)

চাপ (pressure): কোনো তলের একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে প্রযুক্ত বল কে চাপ বলে । ঘাত (Thrust): কোন প্রবাহী তার সংলগ্ন কোন তলের উপর যে বল প্রয়োগ করে তাকে প্রবাহীর ঘাত বলে ।

পদার্থ : গঠন ও ধর্ম

চাপ ও ঘাত, আর্কিমিডিসের নীতি, বস্তুর ভাসান ও নিমজ্জন, ঘনত্ব ও আপেক্ষিক ঘনত্ব, পৃষ্ঠটান, সান্দ্রতা, বার্ণৌলির নীতি, স্থিতিস্থাপকতা