বল এবং বলের পরিমাপ

Submitted by arpita pramanik on Sat, 09/05/2020 - 10:24

বল এবং বলের পরিমাপ (Definition and Measurement of Force)

বলের সংজ্ঞা (Definition of Force):

নিউটনের প্রথম গতিসূত্র থেকে আমরা বলের সংজ্ঞা পাই । এই সূত্র থেকে বোঝা যায় কোন বস্তুর উপর বাইরে থেকে কিছু প্রয়োগ করলে তবেই বস্তুটির অচল বা সচল অবস্থার পরিবর্তন হয় । কোন জড় বস্তু জাড্য ধর্মের জন্য নিজে থেকে নিজের অচল বা সচল অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না ।

যেমন -- মাটিতে গড়িয়ে যাওয়া একটি রবারের বলকে সহজেই হাত দিয়ে আটকানো যায়, একটি চেয়ারে ঠেলা মারলে চেয়ারটি সরে যায় আবার অনেক সময় বাইরে থেকে কিছু প্রয়োগ করেও বস্তুটির অচল বা সচল অবস্থার পরিবর্তন করা যায় না । যেমন হাত দিয়ে দেওয়াল কে ধাক্কা মারলেও দেওয়াল কে সরানো যায় না ।গড়িয়ে যাওয়া খুব ভারী একটি লোহার গোলককে হাত দিয়ে আটকানো যায় না । এক্ষেত্রে বোঝা যায় যে বাইরে থেকে কিছু প্রয়োগ করে এদের সচল অথবা অচল অবস্থায় আনার চেষ্টা করা হয় যদিও এই চেষ্টা সফল হয় না । অতএব বলের সংজ্ঞা  হলো ---

বাইরে থেকে যা প্রয়োগ করে কোন বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তন করা হয় বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয় তাকে বল বলে

বলের মান এবং অভিমুখ দুইই আছে বলে এটি একটি ভেক্টর রাশি

 

বলের পরিমাপ (Measurement of Force):

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র থেকে বলের পরিমাপ সম্পর্কে জানা যায় । এই সূত্র থেকে বল ও ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক জানা যায় ।

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং প্রযুক্ত বল যে দিকে ক্রিয়া করে ভরবেগের পরিবর্তন সেইদিকেই হয় । কাজেই বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করলে প্রযুক্ত বলের প্রভাব কেমন হবে তা বস্তুটির ভরবেগ এর উপর নির্ভর করে ।

ভরবেগ (Momentum):

ভর ও বেগের সমন্বয়ে কোন গতিশীল বস্তুর মধ্যে যে পরিমাণ গতির ( Quantity of Motion) সৃষ্টি হয় তাকে বস্তুটির ভরবেগ বলে । অর্থাৎ কোন বস্তুর ভর এবং বেগের গুনফল কে ভরবেগ বলে ।

বস্তুর ভর একটি স্কেলার রাশি এবং বেগ একটি ভেক্টর রাশি তাই এদের গুণফল ভরবেগ একটি ভেক্টর রাশি । ভরবেগের মান এবং দিক দুইই আছে । ভরবেগের দিক বেগের দিকে হয় ।

ভরবেগের একক : C.G.S পদ্ধতিতে ভরবেগের একক 1 গ্রাম সেমি/সেকেন্ড ।  1 গ্রাম ভরের কোন বস্তু যদি সেকেন্ডে 1 সেমি বেগে চলে তাহলে বস্তুটির মধ্যে যে ভরবেগের সৃষ্টি হয় সেই ভরবেগকে C.G.S পদ্ধতিতে ভরবেগের একক বলে ।

S.I পদ্ধতিতে ভরবেগের একক 1 কিলোগ্রাম মিটার /সেকেন্ড

কোন বস্তুর ভরবেগ বস্তুর ভর এবং বেগের উপর নির্ভর করে

 

দুটি গতিশীল বস্তুর বেগ সমান হলে এর মধ্যে যে বস্তুর ভর বেশি তার ভরবেগ অন্য বস্তুর চেয়ে বেশি হয় । এই অবস্থায় বস্তুটিকে স্থির অবস্থায় আনতে হলে ভারী বস্তুর ওপর বেশী বল প্রয়োগ করা দরকার হয় ।

যেমন --- একটি খালি ট্রাক এবং আরেকটি মাল বোঝাই ট্রাক ঘন্টায় 80 কিমি  বেগ চলছে । এখন বস্তুর ভরবেগ = ভর x বেগ । তাই উভয়ের বেগ সমান হলেও মাল বোঝাই ট্রাকটি ভর খালি ট্রাকের ভরের চেয়ে বেশি হওয়ায় মাল বোঝাই ট্রাকটি ভরবেগ খালি ট্রাকের ভরবেগের চেয়ে বেশি হবে । সুতরাং ট্রাক দুটিকে থামাতে হলে মাল বোঝাই ট্রাকটি উপর বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে ।

একই ভরের দুটি গতিশীল বস্তুর মধ্যে যার বেশী তার ভরবেগ বেশী হবে ।  বস্তু দুটিকে স্থির অবস্থায় আনতে হলে যে বস্তুর বেগ বেশি তার উপর  বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে ।

যেমন দুটি ক্রিকেট বলের ভর সমান হলেও যেটির বেগ বেশি সেটি থামাতে বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে । বলের পরিমাণ যদি সমান হয় তবে বল প্রয়োগের সময় বাড়াতে হবে ।

সমান বল যদি একই সময় ধরে একটি ভারী এবং একটি হালকা বস্তুর উপর প্রয়োগ করা হয় তাহলে হালকা বস্তুটির গতিবেগ ভারী বস্তুর গতিবেগ এর চেয়ে বেশি হবে কিন্তু ওদের ভরবেগ সমান হবে ।

যেমন একটি মার্বেলকে দূরে ঠেলতে যে পরিমাণ বল লাগে সেই সমপরিমাণ বল একটি ভারী পাথরের উপর প্রয়োগ করলে পাথরটিকে খুবই অল্প দূরে সরানো যায় ।  এক্ষেত্রে ভরবেগ সমান হলেও পাথরটির ভর বেশি হওয়ায় ওর বেগের পরিবর্তন অনেক কম হয় ।

নিউটনের দ্বিতীয় গতি সূত্র থেকে বলের পরিমাপ করা হয় কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে প্রযুক্ত বলের দিকে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন হয় । দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী এই ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং প্রযুক্ত বল যে দিকে ক্রিয়া করে ভরবেগের পরিবর্তন সেই দিকেই হয় । কিন্তু বল প্রয়োগের ফলে সময়ের সঙ্গে বস্তুর ভরের কোন পরিবর্তন হয় না । শুধুমাত্র গতিবেগের পরিবর্তন হওয়ার ফলে বস্তুটির ভরবেগ পরিবর্তিত হয় । আবার সময়ের সঙ্গে গতিবেগের পরিবর্তনকে ত্বরণ বলে । তাই দেখা গেল যে কোন বস্তুর ওপর বল প্রয়োগ করলে বস্তুটির মধ্যে ত্বরনের সৃষ্টি হয় এবং ওই ত্বরণ প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক । আবার গতিশীল বস্তুর গতির বিপরীত দিকে বল প্রয়োগ করলে বস্তুটির গতিবেগ কমতে থাকে অর্থাৎ মন্দনের সৃষ্টি হয় ।

মনে করি কোন বস্তুর ভর = [tex]m[/tex] এবং বস্তুর প্রাথমিক বেগ = [tex]u[/tex]

বস্তুটির উপর [tex]t[/tex] সময়ের জন্য [tex]P[/tex] বল প্রয়োগ করা হলো । মনে করি এর ফলে বস্তুটির বেগ [tex]u[/tex] থেকে বেরিয়ে [tex]t[/tex] সময় পরে [tex]v[/tex] হল

সুতরাং বস্তুটির প্রাথমিক ভরবেগ = [tex]mu[/tex] এবং [tex]t[/tex] সময় পরে শেষ ভরবেগ = [tex]mv[/tex] হয়  ।

অতএব, ভরবেগের পরিবর্তনের=[tex]({mv}-{mu})[/tex]

আবার ভরবেগ পরিবর্তনের হার = ভরবেগের পরিবর্তন/সময়

বেগের পরিবর্তনের হার = ত্বরণ=  [tex]f[/tex]

অতএব, ভরবেগের পরিবর্তনের হার=[tex]mf[/tex]

নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বল [tex]P[/tex] এর সমানুপাতিক ।

অতএব, [tex]P \propto mf[/tex]

ভেদের সূত্রানুসারে [tex]P={Kmf}[/tex]

এখানে [tex]K[/tex] একটি ধ্রুবক । [tex]K[/tex] ধ্রুবক এর মান বলের একক এর উপর নির্ভর করে ।

এখন একক ভরের উপর ক্রিয়া করে যে বল একক ত্বরণ সৃষ্টি করে তাকে যদি বলের একক ধরা হয় অর্থাৎ যখন  [tex]m=1[/tex]এবং  [tex]f=1[/tex] হয়,  তখন  [tex]P=1[/tex] হবে, এখন উপরের সমীকরণে এগুলির মান বসিয়ে পাওয়া যায়

 [tex]1=K.1.1[/tex]

 বা, [tex]K=1[/tex]

সুতরাং উপরের সংজ্ঞা অনুসারে বলের একক স্থির করে পাওয়া যায়  [tex]P={mf}[/tex] অর্থাৎ বল =ভর x ত্বরণ । কাজেই বলের মান নির্দেশক সমীকরণটি হলো

[tex]P={mf}[/tex]

অর্থাৎ প্রযুক্ত বলের মান = বস্তুর ভর x বস্তুর ত্বরণ বা মন্দন

এই সমীকরণের সাহায্যে বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলের পরিমাণ নির্ণয় করা যায় । বলের মান এবং দিক দুইই আছে তাই বল একটি ভেক্টর রাশি ।

*****

Comments

Related Items

অ্যাসিড, ক্ষারক ও লবণ

সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3), হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCL), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH), পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH), ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (MgSO4), সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)

দ্রবণ (Solution)

যে পদার্থ দ্রবীভূত হয় তাকে দ্রাব বলে এবং যার মধ্যে দ্রাব দ্রবীভূত হয় তাকে বলা হয় দ্রাবক । দ্রাব এবং দ্রাবক এর সমসত্ব মিশ্রণ হল দ্রবণ । দ্রবণের দুটি অংশে থাকে --- দ্রাব (Solute) এবং দ্রাবক (Solvent) । অর্থাৎ দ্রবণ = দ্রাব + দ্রাবক

শব্দ বিস্তারের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়

শব্দের উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ বায়ু মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের কানে এসে পৌঁছলে মস্তিষ্কে এক রকম অনুভূতি সৃষ্টি করে । তখন আমরা শব্দ শুনতে পাই । বায়ু মাধ্যম না থাকলে শব্দ আমাদের কানে পৌঁছতে পারত না । ফলে আমরা শব্দ শুনতে পেতাম না । কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে শব্দের বিস্তার ...

পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন

পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় এই তিন অবস্থায় থাকতে পারে । তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন হয় । তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবর্তিত হয় আবার তাপ নিষ্কাশনে গ্যাসীয় পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয় ।

পদার্থ ও শক্তি (Matter and Energy)

প্রকৃতিতে দুটি ভিন্ন বিষয় অস্তিত্ব আমরা বুঝতে পারি একটি জড় বা পদার্থ (matter) এবং অন্যটি হলো শক্তি (energy)। পদার্থের নির্দিষ্ট পরিমাণকে বস্তু বলে । যেমন প্লাস্টিক দিয়ে জলের বালতি, মগ তৈরি করা হয় সুতরাং জলের বালতি, মগ হলো বস্তু কিন্তু এগুলির উপাদান প্লাস্টিক হলো