গতির প্রকারভেদ (Types of Motion)

Submitted by arpita pramanik on Thu, 03/29/2018 - 22:16

গতির প্রকারভেদ (Types of Motion)

গতির প্রকারভেদ (Types of Motion) :  গতি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে । তবে সকল গতিকেই আমরা মূলত দু-ভাগে ভাগ করতে পারি । যথা – (1) চলন গতি বা রৈখিক গতি (Translation) এবং (2) ঘূর্ণন গতি (Rotation) ।

(1) চলন গতি (Translation) : যদি কোনো গতিশীল বস্তু মধ্যস্থ যে-কোনো দুটি কণা সংযোজক সরলরেখা সর্বদাই সেটির সমান্তরালে অগ্রসর হয় তবে বস্তুর ওই গতিকে চলন গতি বা রৈখিক গতি বলে । ছাদ থেকে একটি ঢিলকে ছেড়ে দিলে সেটি সোজাসুজি নীচের দিকে পড়তে থাকে । এক্ষেত্রে ঢিলটির গতি চলন গতি । 

চলন গতিকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায় । যথা – (a) সরল চলন বা সরল রৈখিক গতি এবং (b) বক্রচলন বা বক্ররৈখিক গতি ।

(a) সরল চলন বা সরল রৈখিক গতি : যে চলন গতি সরলরৈখিক পথে ঘটে তাকে সরল চলন বা সরল রৈখিক গতি বলে —যেমন, পতনশীল বৃষ্টির ফোঁটার গতি ও সোজা লাইনে ট্রেনের গতি ইত্যাদি ।

(b) বক্রচলন বা বক্ররৈখিক গতি  : যে চলন গতি বক্রপথে ঘটে তাকে বক্রচলন বা বক্ররৈখিক গতি বলে । যেমন, পৃথিবীর বার্ষিক গতি, উল্লম্ব নাগরদোলায় ঝুলন্ত চেয়ার গুলির গতি ইত্যাদি ।

বৃত্তীয় গতি (Circular motion) : যদি কোনো বস্তু কণা এমন ভাবে গতিশীল হয় যে কোনো বিন্দু থেকে তার দূরত্ব সর্বদা একই থাকে ওই কণার গতিকে বৃত্তীয় গতি বলে । বৃত্তীয় গতি বক্র চলন বা বক্ররৈখিক গতির এক বিশেষ রূপ । উদাহরণ —কব্জার সাপেক্ষে দরজা বা জানালার পাটের প্রতিটি বিন্দুর গতি, চলন্ত ঘড়ির কাঁটার যে-কোনো বিন্দুর গতি ইত্যাদি । সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী বৃত্তাকার পথে ঘুরছে ধরে নিলে [পৃথিবীকে কণা হিসাবে কল্পনা করে ] পৃথিবীর বার্ষিক গতি হল বৃত্তীয় গতি । সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী প্রদক্ষিণকালে নিজ অক্ষের সাপেক্ষে আবর্তন করে যাকে আহ্নিক গতি বলে, আর এই আহ্নিক গতি হল পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ।    

(2) ঘূর্ণন গতি (Rotation) : কোনো বস্তু বস্তুমধ্যস্থ সকল বিন্দুই যদি বৃত্তাকার পথে এমনভাবে পরিভ্রমণ করে যে সকল বৃত্তের কেন্দ্র একটি সরল রেখার উপর অবস্থান করে তবে ওই বস্তুর গতিকে ঘূর্ণন গতি বলে । ওই সরল রেখাটিকে ঘূর্ণন অক্ষ বলা হয় । বস্তুর ঘূর্ণন অক্ষকে কেব্দ্র করেই ঘটে । ঘূর্ণন অক্ষ বস্তুর মধ্য দিয়েও যেতে পারে, আবার বস্তুর বাইরেও থাকতে পারে । বিশুদ্ধ ঘূর্ণন গতিতে কোনো বস্তু একস্থান থেকে অন্য স্থানে যায় না । অর্থাৎ, বিশুদ্ধ ঘূর্ণন গতিতে বস্তুর চলন থাকে না । বস্তু কেবল নির্দিষ্ট কোণে ঘোরে । উদাহরণ —লাট্টুর আবর্তন গতি, চলন্ত পাখার ব্লেডের গতি, পৃথিবীর আহ্নিক গতি, মেশিনের ঘুর্ণায়মান চাকার গতি, (যেখানে ঘূর্ণন অক্ষ বস্তুর মধ্য দিয়েই যায়), দড়িতে বাধা ঢিলের আবর্তন (যেখানে ঘূর্ণন অক্ষ বস্তুর বাইরে থাকে) ইত্যাদি ।

 

বৃত্তীয় গতি ও ঘূর্ণন গতির মধ্যে পার্থক্য ( Differnces Between Circular Motion and Rotation ) :

  বৃত্তীয় গতি   ঘূর্ণন গতি
1. বৃত্তীয় গতি একটি বিশেষ বক্রচলন গতি । 1. ঘূর্ণন গতিতে চলন থাকে না ।
2. বৃত্তীয় গতিতে গতিশীল বস্তুকে বিন্দুবৎ ধরা হয় । 2. ঘূর্ণন গতি দৃঢ় ঘনবস্তুর ক্ষেত্রে ধরা হয় ।
3. বৃত্তীয় গতিতে যে বিন্দু বা অক্ষের চারদিকে কণার গতি হয় তা সর্বদাই বৃত্তের কেন্দ্র বা কেন্দ্রগামী যা কণার ওপরে থাকে না । 3. ঘূর্ণন গতিতে ঘূর্ণন অক্ষ ঘনবস্তু মধ্যস্থ কোনো বিন্দু দিয়েও যেতে পারে । আবার ঘনবস্তুর বাইরেও থাকতে পারে ।
4. সমবৃত্তীয় গতিতে কণার বেগ বা ত্বরণের মান নির্দিষ্ট । 4. সমঘূর্ণন গতিতে বস্তুর বিভিন্ন কণার বেগ বা ত্বরণের মান সমান নয় 

প্রকৃত পক্ষে কোনো দৃঢ় ঘনবস্তুর ঘূর্ণন গতি ওই বস্তু মধ্যস্থ প্রতিটি কণার বৃত্তীয় গতির ফলেই সৃষ্টি হয় ।

মিশ্র গতি বা জটিল গতি (Complex motion ) : কোনো বস্তু যদি এমনভাবে গতিশীল হয় যে, বস্তুর গতি বিশুদ্ধ চলন গতি বা ঘূর্ণন গতি নয় কিন্তু উভয় গতির সমন্বয়, তাহলে বস্তুর এরূপ গতিকে মিশ্র গতি বা জটিল গতি বলে । যেমন –

(i) চলন্ত গাড়ির চাকার ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে চাকার ঘূর্ণন অক্ষ চলনগতি সম্পন্ন হবে ।

(ii) পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণন হয়, কিন্তু বার্ষিক গতিতে ঘূর্ণন  অক্ষের চলনগতি হয় ।

সরল দোলগতি (Simple Harmonic Motion ) : দোলনগতি এমন একপ্রকার গতি যেখানে দোলনরত কণার বেগ বা ত্বরণের মান গতিপথের বিভিন্ন বিন্দুতে ভিন্ন মানের হয় ।

দোলন গতি (Oscillation) : যদি কোনো কণা কোনো রৈখিক পথে এদিক ওদিক গতি সম্পন্ন করে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে যার পুনরাবৃত্তি ঘটে, তবে কণার গতিকে দোলন গতি বা কম্পন বা স্পন্দন বলা হয় । সরল দোলগতি দোলনগতিরই বিশেষ রূপ ।

সরল দোলগতি :  দোলনশীল কোনো কণার গতিপথের যে-কোনো বিন্দুতে কণার ত্বরণ সেটির সরণের সমানুপাতী হলে এবং ত্বরণের অভিমুখ সাম্যাবস্থানের (প্রাথমিক স্থির অবস্থান) দিকে থাকলে কণার গতিকে সরল দোলগতি বলা হয় । উদাহরণ —কম বিস্তার যুক্ত দোলকের দোলন, কম্পনশীল সুরশলাকার বাহুর গতি ইত্যাদি ।

*****

Comments

Related Items

প্রেসার কুকার (Pressure Cooker)

প্রেসার কুকার যন্ত্রে জলীয় বাষ্পের চাপ বাড়িয়ে 100°C এর বেশি উষ্ণতায় জলকে ফোটানো হয় । ফলে বেশি উষ্ণতায় খাদ্যদ্রব্য অল্পসময়ের মধ্যে সুসিদ্ধ হয় । অ্যালুমিনিয়াম বা স্টিলের সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি শক্ত একটি পাত্র প্রেসার কুকার তৈরীর জন্য ব্যবহার করা হয় যাতে 2 বায়ুমন্ডল চাপের

অ্যাসিড, ক্ষারক ও লবণ

সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4), নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3), হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCL), সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড (NaOH), পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড (KOH), ম্যাগনেসিয়াম সালফেট (MgSO4), সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)

দ্রবণ (Solution)

যে পদার্থ দ্রবীভূত হয় তাকে দ্রাব বলে এবং যার মধ্যে দ্রাব দ্রবীভূত হয় তাকে বলা হয় দ্রাবক । দ্রাব এবং দ্রাবক এর সমসত্ব মিশ্রণ হল দ্রবণ । দ্রবণের দুটি অংশে থাকে --- দ্রাব (Solute) এবং দ্রাবক (Solvent) । অর্থাৎ দ্রবণ = দ্রাব + দ্রাবক

শব্দ বিস্তারের জন্য মাধ্যমের প্রয়োজন হয়

শব্দের উৎস থেকে উৎপন্ন শব্দ বায়ু মাধ্যমের মধ্য দিয়ে আমাদের কানে এসে পৌঁছলে মস্তিষ্কে এক রকম অনুভূতি সৃষ্টি করে । তখন আমরা শব্দ শুনতে পাই । বায়ু মাধ্যম না থাকলে শব্দ আমাদের কানে পৌঁছতে পারত না । ফলে আমরা শব্দ শুনতে পেতাম না । কঠিন মাধ্যমের মধ্য দিয়ে শব্দের বিস্তার ...

পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন

পদার্থ কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় এই তিন অবস্থায় থাকতে পারে । তাপ প্রয়োগ করলে পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন হয় । তাপ প্রয়োগে কঠিন পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে গ্যাসীয় অবস্থায় পরিবর্তিত হয় আবার তাপ নিষ্কাশনে গ্যাসীয় পদার্থ প্রথমে তরল এবং পরে কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয় ।