Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 04/21/2012 - 12:16

দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব (Implication of the Acquisition of Diwani by the East India Company)

১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নতুন রাজনৈতিক ও সামরিক বলে বলীয়ান হয়ে ওঠে । ১৭৬৫ সালে রবার্ট ক্লাইভ অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার সঙ্গে এলাহাবাদের সন্ধি স্বাক্ষর করেন । এই সন্ধির দ্বারা ক্লাইভ নবাবের কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ লক্ষ টাকা এবং কারাএলাহাবাদ প্রদেশ দুটি লাভ করেন এবং কোম্পানি অযোধ্যায় বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করে । নবাব ইংরেজদের সঙ্গে আত্মরক্ষামূলক মিত্রতা স্থাপন করেন । এলাহাবাদের সন্ধির দ্বারা রবাট ক্লাইভ কার্যত বাংলা ও বিহারকে ইংরেজ শাসনাধীনে রেখে অযোধ্যাকে ইংরেজদের আশ্রিত মিত্র রাজ্যে পরিণত করেন । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ক্লাইভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে দ্বিতীয় চুক্তি করেন । এই চুক্তির শর্তানুসারে অযোধ্যার নবাব সুজা-উদ-দৌলার সঙ্গে কোম্পানির এলাহাবাদের সন্ধির সময় পাওয়া কারা ও এলাহাবাদ প্রদেশ দুটি কোম্পানি শাহ আলমকে উপহার দেয় । বিনিময়ে মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম কোম্পানিকে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার রাজস্ব আদায়ের ভার দেয় । এই ব্যবস্থাকে কোম্পানির দেওয়ানি লাভ বলে । ভারতের ইতিহাসে ইস্ট-ইন্ডিয়া-কোম্পানির দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব অপরিসীম ।

১) এই সন্ধির ফলে কোম্পানি বাংলার প্রকৃত শাসকে পরিণত হয় এবং নবাব নামমাত্র শাসকে পরিণত হয় ।

২) পলাশির যুদ্ধের পর থেকে কোম্পানি বাংলায় যে ক্ষমতা লাভ করেছিল তার কোনো আইনগত বৈধতা ছিল না, কারণ এর প্রতি মোগল সম্রাটের অনুমোদন ছিল না । ১৭৬৫ সালের চুক্তির মাধ্যমে দেওয়ানি লাভ করার পর কোম্পানির ক্ষমতা লাভ মোগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের অনুমোদন সাপেক্ষে আইনগত বৈধতা পায় ।

৩) এই সন্ধির ফলে মীরকাশিমের পক্ষে আর মাথা তুলে দাঁড়াবার সম্ভাবনা ছিল না ।

৪) কোম্পানির দেওয়ানি লাভের পর থেকে নবাবের পদ বজায় থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী ছিল কোম্পানি । নবাবের কর্মচারীগণ ক্রমে কোম্পানির দ্বারা মনোনীত হয়ে কোম্পানির ইঙ্গিতেই কাজ করতে থাকে ।

৫) কোম্পানি সরাসরি বাংলার শাসনক্ষমতা দখল করলে ফরাসি ও অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিগুলি ইংরেজদের অধিকার অস্বীকার করতে পারত । নবাবকে সিংহাসনে রেখে ইংরেজ কোম্পানি প্রমাণ করেছিল যে তারা নবাবের অধীনেই কাজ করছে । লর্ড ক্লাইভ এইভাবে আইনের ধোঁকা তৈরি করেন । কোম্পানির দেওয়ানি লাভের ফলে বাংলার শাসনব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং জনসাধারনের উপর শোষণ বৃদ্ধি পায় ।

*****

Related Items

দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক

ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় জুড়ে সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষ উপেক্ষিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত । সমাজের তথাকথিত ওপর তলার উচ্চবর্ণ ও উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষ রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতির সবকিছুর হাল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে রাখত । নিচু তলার মানুষ ভীত, ...

বিশ শতকের ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ

বিশ শতকের ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ(Development of Dalit Politics and Movements in Twentieth Century India):-

বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী যে জাতীয় আন্দোলনগুলি সংঘটিত হয় তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দ

বীণা দাস (Bina Das)

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যাঁদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলার বিপ্লবী বীণা দাস । তিনি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে আগস্ট নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল চট্টগ্রামে । তাঁর পিতার নাম বেণী মাধব দাস ও মাতার নাম সরলা দাস ...

মাস্টারদা সূর্যসেন (Surya Sen)

ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত সূর্য সেন বা সূর্যকুমার সেন যিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত । তাঁর ডাকনাম ছিল কালু । সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২শে মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম রাজমনি সেন এবং মায়ের নাম শশীবালা সেন ...

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (Bengal Volunteers)

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (Bengal Volunteers):-

গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ডাকা অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয়