হেস্টিংসের সংস্কার (Warren Hastings' Reforms)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 04/21/2012 - 12:25

হেস্টিংসের সংস্কার (Warren Hastings' Reforms)

হেস্টিংস যখন ভারতে আসেন তখন আদর্শ শাসনব্যবস্থার কোনো দৃষ্টান্ত তাঁর কাছে ছিল না । তাই শাসন ও রাজস্ব সংক্রান্ত নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে হেস্টিংসের শাসনকাল অতিবাহিত হয়েছিল । নিজ প্রতিভা ও সাংগঠানিক ক্ষমতার জোরে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন ও রাজস্ব ব্যবস্থার যে রূপরেখা রচনা করে যান, প্রধানত তার উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী গভর্নর জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিশ এক বলিষ্ঠ ও সুষ্ঠু কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন । পার্সিভ্যাল ও স্পীয়ারের মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলা যায়, "যদি ক্লাইভ ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন, তবে ওয়ারেন হেস্টিংস তাকে সংগঠিত করে একটি কার্যকরী সংস্থায় পরিণত করেছিলেন, আর কর্নওয়ালিশ আপন চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী তাকে একটি সুসংহত ও সুনির্দিষ্ট রূপ দান করেছিলেন ।"   

ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর আমলে

(১) প্রথমেই দ্বৈত-শাসনব্যবস্থা লোপ করা হয় ও শাসনব্যবস্থা কোম্পানির তত্বাবধানে নিয়ে আসেন । 

(২) রাজস্ব আদায়কারী অত্যাচারী রেজা খাঁ ও সিতাব রায়কে পদচ্যুত করে কালেক্টর নামক এক কেন্দ্রীয় কর্মচারীর হাতে রাজস্ব আদায়ের ভার দেন ।

(৩) রাজকোষের উপর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার জন্য তিনি রাজকোষাগার মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করেন ।

(৪) হেস্টিংস রাজস্ব বিভাগের কাজকর্ম সম্পর্কে অনুসন্ধান ও তথ্য সংগ্রহের জন্য ‘আমিনি কমিশন’ নামে এক সংস্থা স্থাপন করেন । এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তিনি কালেক্টর পদের পুনঃপ্রবর্তন করেন ।

(৫) কোম্পানির কর্মচারীরা যাতে বাদশাহ প্রদত্ত দস্তকের অপব্যবহার ও বিনা শুল্কে ব্যবসা না করতে পারেন সে দিকে হেস্টিংস কড়া নজর রাখতেন ।

(৬) কোম্পানির ব্যয় সংকোচনের জন্য তিনি দিল্লির মোগল বাদশাহ এবং বাংলার নবাবের বার্ষিক ভাতার পরিমাণ হ্রাস করেন । 

  এই ভাবে ভারতীয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা কলকাতার গভর্নর জেনারেল ও তাঁর সুপ্রীম কাউন্সিলের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়, যা ভারতের কেন্দ্রীভূত প্রশাসন ব্যবস্থার সূচনা করে ।

*****

Related Items

গোরা (Gora)

গোরা (Gora) of Rabindranath Tagore :-

ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতবাসীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে রচিত গোরা উপন্যাসটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই  উপন্যাসের কয়েকটি মুখ্য চরিত্র হল— গোরা, আনন্দময়

বর্তমান ভারত (Bartaman Bharat)

বর্তমান ভারত (Bartaman Bharat) :-

'বর্ত্তমান ভারত' স্বামী বিবেকানন্দের লেখা একটি প্রবন্ধ । ১৮৯৭ সালে বিদেশ থেকে ফিরে আসার পর স্বামী বিবেকানন্দ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ভ্রমণ করেন । তারপর ১৮৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বাংলা মু

আনন্দমঠ (Anandamath)

আনন্দমঠ (Anandamath):-

ঊনিশ শতকে ভারতীয় জাতীয়তাবোধের বিকাশে যেসমস্ত ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম । তিনি তাঁর 'আনন্দমঠ' উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে ভারতবাসীর মধ্যে জাতী

লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

লেখায় ও রেখায় জাতীয়তাবোধের বিকাশ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Expression of Nationalism in Literary Works and Paintings):-

ভারতীয়দের জাতীয়তাবোধের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতা শুরু হয় ও ক্রমে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে । স

হিন্দু মেলা (Hindu Mela)

হিন্দু মেলা (Hindu Mela) :-

ঊনিশ শতকে বাংলায় যেসমস্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল 'হিন্দুমেলা' । পণ্ডিত রাজনারায়ণ বসুর অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতায় নবগোপাল মিত্র ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে চৈত্রসংক্রান্তির