স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 23:08

স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda) :

১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ই অগস্ট যুগাবতার শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের জীবনাবসান হয় ।  তার পূর্বেই শ্রীরামকৃষ্ণদেব তাঁর কয়েকজন একনিষ্ঠ ভক্ত ও অনুগামীকে সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষা দান করেন । এঁরাই পরবর্তীকালে তাঁর প্রচারিত "যত মত ততপথ" এবং সেবাদর্শকে কর্মে রূপায়িত করার মহান দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন । এই অনুগামীদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ অগ্রণী ভুমিকা গ্রহণ করেছিলেন । ১৮৬৩ সালের ১২ জানুয়ারি স্বামী বিবেকানন্দ, (১২৬৯ সালের ২৯ পৌষ, সোমবার) মকর সংক্রান্তির দিন সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে কলকাতার শিমুলিয়া পল্লিতে জন্ম গ্রহণ করেন । পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ও মাতা ভুবনেশ্বরী দেবীর ষষ্ঠ সন্তান, তিন পুত্রের মধ্যে প্রথম । তাঁর নামকরণ করা হয় নরেন্দ্রনাথ দত্ত ও ছোটবেলায় ডাক নাম ছিল 'বিলে' ।

১৮৭১ সালে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেট্রোপলিটান ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন এবং ১৮৭৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ।  দর্শন, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ ও পাণ্ডিত্য । বেদ, উপনিষদ, ভাগবত গীতা, রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থের প্রতি ও তাঁর আগ্রহের কথা সুবিদিত । কণ্ঠসঙ্গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত - শাস্ত্রীয় সংগীতের উভয় শাখাতেই তাঁর বিশেষ পারদর্শীতা ছিল । বাল্যকাল থেকেই খেলাধুলা, শারীরিক ব্যায়াম ও অন্যান্য সংগঠনমূলক কাজকর্মেও তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন । অতি অল্পবয়সেই বিভিন্ন কুসংস্কার এবং ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্য বিচারের যুক্তি গ্রাহ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন । ১৮৮০ সালের জানুয়ারি মাসে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রথম বর্ষের কলা বিভাগে ভর্তি হন নরেন্দ্রনাথ । পরের বছর তিনি চলে যান স্কটিশ চার্চ কলেজে । ১৮৮১ সালে এফ.এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ১৮৮৪ সালে ব্যাচেলর অফ আর্টস ডিগ্রি লাভ করেন । তাঁর অধ্যাপকদের মতে, নরেন্দ্রনাথ ছিলেন এক বিস্ময়কর প্রতিভাসম্পন্ন ছাত্র । স্কটিশ চার্চ কলেজের অধ্যক্ষ উইলিয়াম হেস্টিংস তাঁর সম্পর্কে লেখেন, “নরেন্দ্র ছিল সত্যিকারের প্রতিভাবান । আমি বহু দেশ ভ্রমণ করেছি; এই ছেলেটির মধ্যে মেধা ও সম্ভাবনার যে সাক্ষর দেখি তা আমি কারোর মধ্যে পাইনি, এমনকি জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির দর্শন বিভাগীয় ছাত্রদের মধ্যেও না ।”  এই সময়ে ব্রাহ্মসমাজের দুই সর্বোচ্চ নেতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে সাক্ষাত করে তাঁদের কাছে ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন রাখেন ।

১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিকাগো মহাসভায় হিন্দুধর্মের উদারতা ও মহত্ত্বকে বিশ্বের দরবারে প্রচার করেছিলেন । শ্রীরামকৃষ্ণের যোগ্য শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরুর ‘শিব জ্ঞানে জীবসেবা’ র আদর্শকে রূপ দিতে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ১ মে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ এবং ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ৯ই ডিসেম্বর বেলুড়ে ‘শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ’ প্রতিষ্ঠা করেন । আজ ভারত ও ভারতের বাইরে শতাধিক কেন্দ্রে রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ নির্দেশিত পথে সন্ন্যাসী ও গৃহী ভক্তগণ সমাজসেবা, শিক্ষাবিস্তার ও নানা জনকল্যাণ মূলক কাজ করে চলেছেন । স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই রাত ৯টা ১০ মিনিটে ধ্যানে মগ্ন অবস্থায় দেহ ত্যাগ করেন ।

*****

Related Items

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার বিকাশে ড.মহেন্দ্রলাল সরকারের কীরূপ অবদান ছিল ?

'বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা' -কে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?

প্রশ্ন : 'বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা' -কে প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বলা হয় কেন ?

হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন : হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

প্রশ্ন : উনিশ শতকে নারীশিক্ষা বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুন কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন ?

'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?

প্রশ্ন : 'নীলদর্পণ' নাটক থেকে উনিশ শতকের বাংলার সমাজের কীরূপ প্রতিফলন পাওয়া যায় ?