সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন (All India National Conference)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 08:13

সর্বভারতীয় জাতীয় সম্মেলন (All India National Conference) :

ইলবার্ট বিল আন্দোলন ভারতীয়দের কাছে ছিল শাপে বর । কারণ তখনও পর্যন্ত বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয়দের ইংরেজদের অভিপ্রায় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না । ইলবার্ট বিল আন্দোলনের ফলে ইউরোপীয়দের বর্ণবিদ্বেষ ও ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণা তাঁদের চোখ খুলে দেয় । তাঁরা উপলবদ্ধি করেন ভারতবাসী মাত্রেই ইংরেজদের চোখে ঘৃণার পাত্র ও নিজেদের সম্মান সম্পর্কে সচেতন হন । এর ফলশ্রুতিতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে রাজনৈতিক সংস্থার প্রতিষ্ঠা এবং বিভিন্নমুখী আন্দোলনের উদ্ভব ঘটলে ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ এক সর্বভারতীয় রাজনৈতিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । এই উদ্দেশ্যে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় রামতনু লাহিড়ীর সভাপতিত্বে জাতীয় সম্মেলন (All India National Conference -1883) আহ্বান করেন । বোম্বাই, মাদ্রাজ, আমেদাবাদ, নাগপুর, কটক, মীরাট, লাহোর প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় শতাধিক প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দেয় । এই সভায় শিল্প ও কারিগরি শিক্ষা, বৃহত্তর কর্মসংস্থান, বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ, প্রতিনিধিত্ব মূলক সরকার গঠন প্রভৃতি নানা বিষয়ে আলোচনা হয় । জাতীয় আন্দোলন পরিচালনার জন্য একটি তহবিল গঠিত হয় । জাতীয় সম্মেলনে এই সব লক্ষ্য ও আদর্শ গভীর উত্সাহের সঞ্চার করেছিল । বস্তুত ভারতীয় জনমতকে সংঘবদ্ধ করাই ছিল জাতীয় সম্মেলনের উদ্দেশ্য এবং এই উদ্দেশ্য সাধনে এই সম্মেলন অনেকখানি সফল হয়েছিল । তাই ঐতিহাসিক তারাচাঁদ যথার্থই মন্তব্য করেছেন, "এই সম্মেলন ছিল ইলবার্ট বিল সম্পর্কে ইউরোপীয়দের আন্দোলনের বিরুদ্ধে শিক্ষিত ভারতবাসীর সমুচিত প্রত্যুত্তর ।"  ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশন বসে । এই অধিবেশনে দ্বারভাঙ্গার মহারাজ, নেপালের রাজদূত, মহারাজ নরেন্দ্রকৃষ্ণ দেব প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ অংশ গ্রহণ করেছিলেন । সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় ছিল প্রশাসনিক সংস্কার, সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার সংস্কার সাধন, বিচার ও শাসন বিভাগের পৃথকীকরণ, ইত্যাদি । ২৭ শে ডিসেম্বর সম্মেলন শেষ হয় । তার পরদিনই অর্থাৎ ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে ডিসেম্বর অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউমের উদ্দ্যোগে এবং ব্যারিস্টার উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে বোম্বাই -এ সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয় । সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা ভারতের জাতীয় ও রাজনৈতিক জীবনে এক গতিবেগ সঞ্চার করে ।

*****

Related Items

শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের 'সর্বধর্ম সমন্বয়' এর আদর্শ

ঊনিশ শতকে বাংলায় যখন হিন্দুধর্ম নানা কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বেড়াজালে আবদ্ধ এবং ধর্মীয় আন্দোলন যখন নানা মত ও পথের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ তুলে ধরে হিন্দুসমাজকে এক নতুন পথের সন্ধান দেন । বিভিন্ন মত ও পথের সংঘর্ষে হ

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী

বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী উনিশ শতকের বাংলার এক অন্যরকম সাধক ও ধর্মসংস্কারক ছিলেন । তিনি ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দের ২রা আগস্ট নদিয়া জেলার দহকুল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । শান্তিপুরে গোবিন্দ গোস্বামীর টোলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সংস্কৃত কলেজে ভর্তি হন । স

ব্রাহ্ম আন্দোলন — বিবর্তন, বিভাজন, বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

ব্রাহ্ম আন্দোলন — বিবর্তন, বিভাজন, বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা:-

উনিশ শতকের বাংলায় ধর্মসংস্কার আন্দোলনে ব্রাহ্মসমাজ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে । একেশ্বরবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে রাজা রামমোহন রায় ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২০শে আগস্ট 'ব্রাহ্মসভা' প্রতিষ্ঠা করেন । ১৮৩০ খ্রিস্টাব্

উনিশ শতকের বাংলা — ধর্মসংস্কার : বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

উনিশ শতকে প্রচলিত হিন্দুধর্ম এক সংকটের সম্মুখীন হয় । পৌত্তলিকতা, বহু দেবতার আরাধনা প্রভৃতি বিষয়ে প্রচলিত হিন্দুধর্মে নানান বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল । এসবের বিরুদ্ধে উনিশ শতকের বাংলায় রাজা রামমোহন রায়, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, স্বামী বিবেকানন্দ প্রমুখ মনীষীদের উদ্যোগে হিন্দু

বিধবা বিবাহ আন্দোলন

ঊনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত ভারতীয় হিন্দুসমাজে বিধবাবিবাহ স্বীকৃত ছিল না । অত্যন্ত অল্পবয়সি মেয়েদের সঙ্গে বয়স্ক এমন কি বৃদ্ধদেরও বিবাহ দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল । ফলে অনেক সময় অল্প বয়সেই মেয়েরা বিধবা হত । এর পরিপেক্ষিতে ভারতের বিভিন্ন সমাজসংস্কারক এই সময় বিধবাবিবাহ প