সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ ও ব্যর্থতা সম্পর্কে লেখ ।

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 01/07/2022 - 21:05

প্রশ্ন:-  সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ ও ব্যর্থতা সম্পর্কে লেখ ।

সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের কারণ : বাংলার কোম্পানি শাসনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলেন সন্ন্যাসী ও ফকির সম্প্রদায় । দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ১৭৬৩ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বাংলা ও বিহারের দরিদ্র কৃষকেরা অন্ন ও বস্ত্রের জন্য সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ধ্বজা তোলেন । সমকালীন বিভিন্ন তথ্য ও সূত্র থেকে জানা যায়, এইসব বিদ্রোহের কারণ ছিল—

(১) অত্যধিক ভূমিরাজস্ব ও কৃষক উচ্ছেদ : ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ধার্য করা অত্যধিক রাজস্ব, জমি থেকে ইচ্ছামতো কৃষক উচ্ছেদ প্রভৃতি কারণে বাংলা-বিহারের কৃষকরা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয় ।

(২) তীর্থকর : ইচ্ছামতো সন্ন্যাসী ও ফকিররা মাঝেমধ্যে দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে গেলে, সরকার থেকে তাদের ওপর তীর্থকর বাসানো হত । এতে সন্ন্যাসী ও ফকিররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ।

(৩) কোম্পানির কর্মচারীদের জলুম : ফকির ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেকেই রেশম ব্যাবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল । কোম্পানির কর্মচারীরা নানা ভাবে তাদের এই ব্যাবসাতে বাধা দিত ।

এই সব অসন্তোষকে কেন্দ্র করে ১৭৬৩ খ্রিস্টাব্দে ঢাকায় সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ শুরু হয় । ক্রমে তা দাবানলের মতো মালদহ, রংপুর, দিনাজপুর, কোচবিহার, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর প্রভৃতি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে । অত্যাচারিত ও নির্যাতিত দরিদ্র কৃষক, মোগল সেনাবাহিনীর বেকার সৈন্য এবং সন্ন্যাসী ও ফকিরদের বিভিন্ন সম্প্রদায়, এই বিদ্রোহে অংশ নেয় । প্রায় ৫০ হাজার মানুষ এই বিদ্রোহে অংশ নেয় । এই বিদ্রোহকে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ বলে অভিহিত করা হলেও উইলিয়াম হান্টার সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে কৃষক বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন । সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর আনন্দমঠ উপন্যাসে সন্ন্যাসী বিদ্রোহের জীবন্ত চিত্র তুলে ধরেছেন ।

ব্যর্থতার কারণ :

(১) নেতৃত্বের দুর্বলতা,

(২) সঠিক পরিকল্পনার অভাব,

(৩) আদর্শহীনতা এবং

(৪) উপযুক্ত অস্ত্রশস্ত্রের অভাব প্রভৃতি কারণে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয় ।

*****

Comments

Related Items

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Hyderabad):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' -এ বলা হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে ।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to the Accession of Princely State with India):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪)

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪) [Post-Colonial India : Second Half od the 20th Century (1947-1964)]:-

দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মবলিদানের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন

হিন্দু জাতিভুক্ত নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ছিল ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত হিন্দু সম্প্রদায় । নমঃশূদ্ররা হিন্দু জাতিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত । নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল । ...

দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক

ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় জুড়ে সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষ উপেক্ষিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত । সমাজের তথাকথিত ওপর তলার উচ্চবর্ণ ও উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষ রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতির সবকিছুর হাল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে রাখত । নিচু তলার মানুষ ভীত, ...