শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের 'সর্বধর্ম সমন্বয়' এর আদর্শ

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 12/09/2020 - 20:55

ঊনিশ শতকে বাংলায় যখন হিন্দুধর্ম নানা কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বেড়াজালে আবদ্ধ এবং ধর্মীয় আন্দোলন যখন নানা মত ও পথের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ তুলে ধরে হিন্দুসমাজকে এক নতুন পথের সন্ধান দেন । বিভিন্ন মত ও পথের সংঘর্ষে হিন্দুসমাজ তখন লক্ষ্যভ্রষ্ট সেই সময় শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণী ও আদর্শ হিন্দুধর্মে নতুন প্রাণসঞ্চার ঘটায় । আধুনিক ভারতের ধর্মীয় ক্ষেত্রে শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব হলেন গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব । তিনি এক নব হিন্দুধর্মের ভিত্তি স্থাপন করে বৈষ্ণব থেকে শাক্ত, ইসলাম থেকে খ্রিস্টীয়, দ্বৈত থেকে অদ্বৈত্য, সাকার থেকে নিরাকার, সগুন থেকে নির্গুণ, সবধরনের সাধনায় উত্তীর্ণ হন । সব ধর্ম সত্য এবং সব ধর্মমত অনুসারে ঈশ্বরকে পাওয়া যায় এই সত্যে তিনি সাধনার মাধ্যমে উপনীত হন । তিনি বলেন, "যত মত তত পথ" । তাঁর কাছে ধর্ম ছিল ঈশ্বর উপলব্ধির এক পথমাত্র । ধর্মে ধর্মে ভেদাভেদের কোনো কারণ নেই । শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব তাঁর সর্বধর্ম সমন্বয়বাদ এবং বেদান্তের সহজ-সরল ব্যাখ্যা দিয়ে সমাজের জনসাধারণের মনে দাগ কাটতে সফল হন । তিনি বলেন— ঈশ্বর এক ও অভিন্ন, লোকে তাঁকে বিভিন্ন নামে ডাকেন এবং বিভিন্ন রীতি মেনে পূজা করেন । সমস্ত ধর্মের মূলসুর একই । তিনি কাউকেই নিজ ধর্ম ত্যাগ করার কথা বলেননি বা নিজের প্রচারিত ধর্মমত গ্রহণের কথাও বলেননি । তাঁর মতে প্রত্যেকেই নিজধর্মের মধ্যেই ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও আত্মনিবেদনের দ্বারা মুক্তিলাভ করতে পারে । তিনি বলেন যত্র জীব তত্র শিব । তাঁর মতে মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান রয়েছে, মানুষের সেবা করলেই ঈশ্বরের সেবা করা হয় । তিনি বেদান্তের যে মানবিক ব্যাখ্যা দেন তা নব্য বেদান্ত নামে পরিচিতি পায় । তাঁর প্রিয়তম শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দ নব্য বেদান্তবাদকে এগিয়ে নিয়ে যান । শ্রী শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব আধুনিক যুগে সব ধর্মকে সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন ।

****

Comments

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।