লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 04/20/2012 - 21:48

লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

লর্ড ডালহৌসি একজন পুরোপুরি আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন শাসক ছিলেন । তাঁর শাসনকালে (১৮৪৫ - ৫৬ খ্রিস্টাব্দ) ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চরম সীমা লাভ করে । লর্ড ক্লাইভ, হেস্টিংস ও ওয়েলেসলি ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের যে চেষ্টা চালিয়েছিলেন ডালহৌসি তার যোগ্য উত্তরসুরি ছিলেন ।  ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারের ক্ষেত্রে তিনি তিনটি নীতি অনুসরণ করেছিলেন । (ক) যুদ্ধ জয়ের মাধ্যমে রাজ্যবিস্তার (খ) স্বত্ব বিলোপ নীতির প্রয়োগ দ্বারা রাজ্য বিস্তার এবং (গ) কুশাসনের অজুহাতে রাজ্য জয় করা ।

স্বত্ববিলোপ নীতি (Doctrine of lapse)

ডালহৌসির সাম্রাজ্যবিস্তার নীতির কুখ্যাত হাতিয়ার ছিল তাঁর এই স্বত্ববিলোপ নীতি । এই নীতির মূলকথা ছিল এই যে, ইংরেজদের আশ্রিত কোনো রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হবে এবং দত্তক পুত্রের বা কন্যার উত্তরাধিকার স্বীকার করা হবে না । ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করে রাজ্য বিস্তারে উদ্যোগী হন । দত্তক প্রথা প্রয়োগ করার ব্যাপারে, তিনি দেশীয় রাজ্যগুলিকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেন, যথা- (১) কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য   (২) কোম্পানির অধীন করদ রাজ্য এবং  (৩) স্বাধীন দেশীয় রাজ্য । 

লর্ড ডালহৌসি এক নির্দেশনামা ঘোষণা করে প্রথম শ্রেণির দেশীয় রাজ্যগুলিতে দত্তক-প্রথা নিষিদ্ধ করেন ।  দ্বিতীয় শ্রেণির রাজ্যে কোম্পানির অনুমতি ছাড়া দত্তক গ্রহণ করা নিষিদ্ধ করেন এবং স্বাধীন দেশীয় রাজ্যগুলিতে দত্তক প্রথা বহাল রাখেন । ডালহৌসির এই নির্দেশনামা স্বত্ববিলোপ নীতি নামে খ্যাত ।

(ক) সরাসরি যুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজ কোম্পানি প্রোম ও পেগুসহ সমগ্র দক্ষিণ বার্মা ও পাঞ্জাব রাজ্য ও সিকিমের একাংশ অধিকার করে । 

(খ) স্বত্ববিলোপ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করে

(১) ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম সাতারা নামক দেশীয় রাজ্যকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

(২) ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে স্বম্বলপুর,

(৩) ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে ঝাঁসির রাজা গঙ্গাধর রাও -এর মৃত্যু হলে ডালহৌসি তাঁর দত্তক পুত্রকে মেনে নিতে রাজি হলেন না এবং ঝাঁসির রানির মতামতকে উপেক্ষা করেই এই রাজ্যটিকে দখল করা হয় ।

(৪) এরপর ১৮৫৫  খ্রিস্টাব্দে নাগপুরের রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাঁর রাজ্যটি গ্রাস করা হয়, এক্ষেত্রে ডালহৌসির যুক্তি ছিল এই যে, নাগপুর রাজ্যটি ইংরেজরাই সৃষ্টি করেছিল ।

(৫) পরবর্তীকালে ভগৎপুর, করৌলি, উদয়পুর, জৈৎপুর, বাগৎ প্রভৃতি রাজ্যগুলি একই কারণে গ্রাস করা হয়, যদিও উদয়পুর কোম্পানির সৃষ্ট দেশীয় রাজ্য ছিল না ।

(গ) কুশাসনের অজুহাতে অযোধ্যা রাজ্য দখল করে নেয় ।

*****

Related Items

সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

প্রশ্ন : সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (U.N.O) প্রতিষ্ঠার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস আলোচনা কর । জাতিপুঞ্জের প্রধান সংস্থাগুলির নাম কর ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংক্ষেপে লেখ ।

প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব ও ক্ষমতা

সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা কর ।

ভারতের বিচারব্যবস্থার শীর্ষে আছে সুপ্রিমকোর্ট । এই সুপ্রিমকোর্ট একাধারে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত এবং আপিল আদালত হিসেবে কাজ করে ।

রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

প্রশ্ন :  রাজ্যপালের ক্ষমতা ও কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা কর ।

(১) রাজ্যের শাসন ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেন রাজ্যপাল । রাজ্য প্রশাসনের সমস্ত ক্ষমতা তাঁর ওপর ন্যস্ত থাকে ।

ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।

প্রশ্ন : ভারতের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের তাৎপর্য ও জাতীয় কংগ্রেসের সাফল্য সম্পর্কে লেখ ।