রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (Non-Aggression Pact)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 22:30

রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি (Non-Aggression Pact) :

জার্মানির আসন্ন পোল্যান্ড আক্রমণের সময় হিটলারের ক্রমাগত আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তাদের তোষণ নীতি বর্জন করে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে মার্চ পোল্যান্ডের সঙ্গে আত্মরক্ষামূলক চুক্তি স্বাক্ষর করে । ব্রিটেন ও ফ্রান্স চেয়েছিল রাশিয়াও তাদের সঙ্গে যোগ দিক । সুচতুর হিটলার কৌশলে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে আগস্ট মধ্যরাত্রে রাশিয়ার সঙ্গে দশ বছরের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন । চুক্তির শর্তানুসারে ঠিক হয়—

(১) পরবর্তী দশ বছর জার্মানি ও রাশিয়া পরস্পরকে আক্রমণ করবে না,

(২) তৃতীয় কোনো শক্তি দ্বারা উভয় দেশ আক্রান্ত হলে এরা কেউ সেই তৃতীয় শক্তিকে সাহায্য করবে না,

(৩) শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক বিবাদ মিটিয়ে নেবে । এই চুক্তির একটি গোপন অংশ ছিল দুই শক্তি পোল্যান্ডকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে ।

ভবিষ্যতে জার্মানির পোল্যান্ড আক্রমণের সময় সম্ভাব্য ইঙ্গ-ফরাসি বিরোধিতার মুখে সোভিয়েট যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ রেখে যুদ্ধের পরিধিকে জার্মানির পশ্চিম সীমান্তে সীমাবদ্ধ করে সীমিত রাখাই ছিল হিটলারের রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রধান উদ্দেশ্য । পরস্পরবিরোধী আদর্শে দুই দেশের মধ্যে এই অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রধান কারণগুলি—

(১) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের কাছে জার্মান বিরোধী জোট গঠনের রুশ প্রস্তাব অগ্রাহ্য হওয়ায় রাশিয়া বাধ্য হয়ে এর যোগ্য জবাব দিতে এই অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করে ।

(২) জার্মান আক্রমণের অনিবার্যতা লক্ষ্য করে রাশিয়া এই চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ।

(৩) রাশিয়ার পূর্ব সীমান্তে জাপানের আক্রমণের ভয়ে রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । জাপানের শক্তি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এটাই ছিল সঠিক পদক্ষেপ ।

(৪) সোভিয়েত রাশিয়ার অফুরন্ত কাঁচামাল ও অন্যান্য প্রয়োজনে জার্মানির এই চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল ।

*****

Related Items

দলিত অধিকার বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক

ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় জুড়ে সাধারণ নিম্নবর্ণের মানুষ উপেক্ষিত, অবহেলিত ও বঞ্চিত । সমাজের তথাকথিত ওপর তলার উচ্চবর্ণ ও উচ্চবর্গের শিক্ষিত মানুষ রাজনীতি, সমাজ ও অর্থনীতির সবকিছুর হাল ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের করায়ত্ত করে রাখত । নিচু তলার মানুষ ভীত, ...

বিশ শতকের ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ

বিশ শতকের ভারতে দলিত রাজনীতি ও আন্দোলনের বিকাশ(Development of Dalit Politics and Movements in Twentieth Century India):-

বিশ শতকের প্রথমার্ধে ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী যে জাতীয় আন্দোলনগুলি সংঘটিত হয় তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দ

বীণা দাস (Bina Das)

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যাঁদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে আছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বাংলার বিপ্লবী বীণা দাস । তিনি ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে আগস্ট নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁদের আদি বাসস্থান ছিল চট্টগ্রামে । তাঁর পিতার নাম বেণী মাধব দাস ও মাতার নাম সরলা দাস ...

মাস্টারদা সূর্যসেন (Surya Sen)

ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে পরিচিত সূর্য সেন বা সূর্যকুমার সেন যিনি মাস্টারদা নামে সমধিক পরিচিত । তাঁর ডাকনাম ছিল কালু । সূর্য সেন ১৮৯৪ সালের ২২শে মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর বাবার নাম রাজমনি সেন এবং মায়ের নাম শশীবালা সেন ...

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (Bengal Volunteers)

বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স (Bengal Volunteers):-

গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ডাকা অহিংস অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পরে ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে 'বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স' সংগঠনটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় জাতীয়