মধ্যবিত্ত শ্রেণির অসন্তোষ

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 07:42

মধ্যবিত্ত শ্রেণির অসন্তোষ (Discontent of the Middle Class) :

ভারতে ইংরেজ শাসন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন হয় । রাজা রামমোহন রায়, হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও, ডেভিড হেয়ার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিঙ্কওয়াটার বেথুন প্রমুখ ভারতীয় ও ইংরেজ মনীষীগণ এদেশে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । আর এই ইংরেজি শিক্ষার সুবাদে ভারতীয়রা পাশ্চাত্য জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে । এর অন্যতম ফলশ্রুতিতে ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব হয় । পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয়ে এই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় ইউরোপীয় সমাজ, রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার সঙ্গে পরিচিত হন এবং নিজেরাও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠেন । ইংরেজি শিক্ষার সূত্রে ভারতীয়রা মিল, রুশো, বেন্থাম, ভলটেয়ার, স্টুয়ার্ট, ম্যাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি, কার্লমার্কস প্রভৃতি পাশ্চাত্য দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংস্পর্শে এসে তাঁদের উদার নৈতিক ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হন । ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা লাভ, ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে আফ্রিকার জাতীয়তাবাদীদের সাফল্য প্রভৃতি সমসাময়িক ঘটনাবলি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । ক্রমশ তাঁদের মধ্যে ইংরেজদের অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর স্পৃহা সঞ্চারিত হয় । মূলত চাকুরিজীবি এবং বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন পেশার মানুষ যথা— শিক্ষক, অধ্যাপক, আইনজীবী, সাংবাদিক, লেখক প্রভৃতি ছিলেন এই মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত । 

ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । ব্রিটিশ শাসন সম্পর্কে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমে মোহ মুক্ত হয় । উপযুক্ত যোগ্যতা ও শিক্ষা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরি থেকে মধ্যবিত্ত শ্রেণি বঞ্চিত হন । ওয়ারেন হেস্টিংস, লর্ড কর্ণওয়ালিশ প্রমুখ গর্ভনর জেলারেলরা ভারতীয়দের উচ্চপদে নিয়োগের বিরোধী ছিলেন । এর পরেও শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি আশা করেছিলযে ইংরেজরা ভারতবর্ষকে স্বায়ত্ত্ব শাসনের উপযোগী করে ভারতীয়দের হাতে তুলে দেবে । কিন্তু ক্রমেই তাদের সেই আশা অবাস্তব কল্পনায় পর্যবসিত হয় । মহাবিদ্রোহের পর থেকে যে সব প্রশাসনিক পরিবর্তন করা হয়েছিল, তাতে ভারতবাসী সন্তুষ্ট হতে পারেন নি । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ভারতীয় অর্থনীতিকে পরিচালিত করার অভিসন্ধি শিক্ষিত ভারতবাসী বেশ ভালোভাবে অনুধাবন করতে পেয়েছিল । ফলে ক্রমপুঞ্জিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির অসন্তোষ ভারতীয় মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়কে ব্রিটিশ বিরোধী ও বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছিল ।

*****

Related Items

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

প্রশ্ন:- হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

(ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি, (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

প্রশ্ন:- (ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি,  (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই  চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:- নাৎসি দলের পররাষ্ট্র নীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

জার্মানির নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য —

(ক) ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে জার্মানিকে প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ।

(খ) ভার্সাই সন্ধির অপমান জনক চুক্তিগুলি অমান্য করা ।

নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

প্রশ্ন :- নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

হিটলার বা তাঁর নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল:-