ভারতীয় নারীদের কল্যাণের জন্য রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াস আলোচনা কর ।

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 01/09/2022 - 11:26

প্রশ্ন:-  ভারতীয় নারীদের কল্যাণের জন্য রাজা রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রয়াস আলোচনা কর ।

উনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলার সমাজ ও ধর্মসংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয় । রাজা রামমোহন রায় ও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন এই সংস্কার আন্দোলনের পথিকৃৎ । তাঁদের পরিচালিত সংস্কার আন্দোলনে যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী চেতনার প্রতিফলন পড়েছিল । প্রচলিত সামাজিক কুসংস্কার ও গোঁড়ামির অপসারণ করে তাঁরা সামাজ জীবনকে কলুষমুক্ত করতে চেয়ে ছিলেন । উনিশ শতকের সমাজ সংস্কারের প্রধান দিকটি ছিল নারী জাতির কল্যাণসাধন ।

ভারতীয় নারীদের জন্য রাজা রামমোহন রায়ের অবদান:

(১) রাজা রামমোহন রায়ের চিরস্মরণীয় পদক্ষেপ হল সতীদাহ প্রথার অবসান । প্রাচীনকাল থেকে এই প্রথার চল ছিল । মৃত স্বামীর জ্বলন্ত চিতায় বিধবার সহমরণকে ‘সতীদাহ প্রথা’বলা হত । ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দ থেকেই রাজা রামমোহন রায় এই প্রথার বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন । তিনি বিভিন্ন হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে -এই মত প্রচার করেন যে, সতীদাহ প্রথা ধর্মবিরুদ্ধ; সেই সঙ্গে তিনি জনমত গড়ে তোলেন । তাঁর প্রচেষ্টায় বড়লাট লর্ড বেন্টিঙ্ক ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘সপ্তদশ-বিধি’ নামে আইন পাস করে এই নিষ্ঠুর প্রথা নিষিদ্ধ করেন ।

(২) বহু-বিবাহ ও বর্ণভেদ প্রথার বিরুদ্ধেও রাজা রামমোহন রায় তীব্র আন্দোলন চালিয়ে যান ।

(৩) নারী ও পুরুষের সমানাধিকার ।

(৪) নারীরা যাতে স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে তার জন্য বিষয় সম্পত্তিতে নারীদের উত্তরাধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারেও রামমোহন রায়ের  চেষ্টার ত্রুটি ছিল না । যদিও নারীশিক্ষা বিস্তারে তাঁর আগ্রহের অভাব আমাদের কিছুটা অবাক করে ।

ভারতীয় নারীদের কল্যাণের জন্য ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান :

(১) উনবিংশ শতকের এক বিরাট পণ্ডিত ও মহান সমাজ সংস্কারক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর । সারাজীবন ধরে তিনি সমাজ সংস্কারে ব্রতী থাকেন । বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন, নারী জাতি অনগ্রসর ও কুসংস্কারচ্ছন্ন হয়ে থাকলে সমাজ পিছিয়ে থাকবে । বিদ্যাসাগর নারীমুক্তি আন্দোলনের প্রবল সমর্থক ছিলেন ।

(২) হিন্দুশাস্ত্র উদ্ধৃত করে বিদ্যাসাগর বিধবা বিবাহের স্বপক্ষে জোর বক্তব্য রাখেন ।

(৩) বহুবিবাহ, বাল্য-বিবাহ প্রভৃতি কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তিনি প্রবল জনমত গড়ে তোলেন । শেষ পর্যন্ত তাঁর আন্দোলন সফল হয় এবং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ হয় ।

(৪) ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যাসাগর বাল্য-বিবাহের বিরুদ্ধে জোর প্রচার শুরু করেন এবং ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত এক আবেদন পত্র সরকারের কাছে পেস করেন ।

(৫) নারীশিক্ষা বিস্তারের ব্যাপারেও তাঁর চেষ্টার ত্রুটি ছিল না । বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে থাকার সু্যোগে তিনি ৩৫টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন । এক্ষেত্রে ১৮৪৯ সালে বেথুন সাহেবের সহযোগিতায় ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’ স্থাপন করে তিনি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের অবদান রাখেন ।

*****

Comments

Related Items

চুয়াড় বিদ্রোহ (দ্বিতীয় পর্ব, মেদিনীপুর, ১৭৯৮-৯৯ খ্রিস্টাব্দ)

চুয়াড় বিদ্রোহ (Chuar Rebellion) :- ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে যেসব আদিবাসী কৃষকবিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল চুয়াড় বিদ্রোহ । এই বিদ্রোহ দুটি পর্বে সংঘটিত হয় । প্রথম পর্বের বিদ্রোহ শুরু হয় ১৭৬৭-৬৮ খ্রিস্টাব্দে । বাংলার মেদিনীপুর জেলার জঙ্গলম

রংপুর বিদ্রোহ (Rangpur Revolt)

রংপুর বিদ্রোহ (Rangpur Revolt) : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটি, সুদখোর মহাজনদের নির্লজ্জ শোষণ, ঔপনিবেশিক শোষণ এবং কৃষক ও উপজাতিদের ওপর দমন নীতি ইত্যাদির কারণে ও এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, কারিগর, জেলে, মুচি, মেথর, ব্যবসায়ী, শিল্পী, ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির

বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের ধারণাগত আলোচনা

বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লবের ধারণাগত আলোচনা (Concept of Rebellion, Uprising and Revolution) :বিদ্রোহ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব —এই তিনের-ই আলাদা আলাদা অর্থ ও উদ্দেশ্য আছে । মানুষ যখন কোনো কিছু পাওয়ার চেষ্টা করে অথবা তাদের স্বার্থ বিরোধী কোনো ব্যবস্থা পছন্

ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন ও আদিবাসী জনগণের প্রতিক্রিয়া

ঔপনিবেশিক অরণ্য আইন ও আদিবাসী জনগণের প্রতিক্রিয়া (Colonial Forest Law and the reaction of tribal communities) : ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে আদিবাসী জনগোষ্ঠী অরণ্যের কাঠ, ফলমূল ও বনজ সম্পদ সংগ্রহ, পশুপাখি শিকার প্রভৃতির মাধ্যমে জীবন-জীবিকা ন

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (Resistance and Rebellion) : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জুন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পলাশির যুদ্ধে পরাজিত করার পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করে । এদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে ভারতের বি