ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রবর্তন

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 04/21/2012 - 12:40

আইনের শাসন (Rule of Law)

লর্ড কর্ণওয়ালিসের আমলে ভারতে কোম্পানির ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হলো 'আইনের শাসন' প্রবর্তন । এদেশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে ভারতীয়দের আইনের শাসন সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট ধারণাই ছিল না । আইনের শাসন -এর অর্থ হল এই যে— (ক) সমস্ত মানুষকে সরকারি আইন মেনে চলতে হবে ।  (খ)  'আইনের নিরপেক্ষতা' অর্থাৎ দেশের আইনের চোখে সবাই সমান—  কেউই আইনের উর্ধ্বে নয় ।  (গ) আইন সকলের জন্য এক এবং সকলকেই আইন সমানভাবে নিরাপত্তা দেবে । (ঘ) বিচারক্ষেত্রে সমতা-সংহতি আনয়ন । জাতি-ধর্ম, স্ত্রী-পুরুষ, উচ্চ-নীচ, ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-অহিন্দু, সবাই আইনের চোখে সমান হবে ।  লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রথম ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় 'আইনের শাসন' প্রবর্তন করেন । একটি নির্দেশের মাধ্যমে তিনি জানিয়ে দেন, এখন থেকে জেলা কালেক্টরসহ সমস্ত সরকারী কর্মচারীকে তাদের কৃতকর্ম ও অপরাধের জন্য জেলা আদালতে অভিযুক্ত করা যাবে । এমনকি ভারতীয় প্রজারা তাদের সম্পত্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারবে । 'আইনের শাসন' দ্বারা লর্ড কর্নওয়ালিস তাদের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারীদেরও আইনের শাসন মেনে চলতে বাধ্য করেছিলেন । অবশ্য সবক্ষেত্রে এই নীতি মেনে চলা হত না । বিচারব্যবস্থা ও সামাজিকতার ক্ষেত্রে ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান ছিল । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনকালে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আইনের শাসন -এর আদর্শ বাস্তবায়িত করা প্রকৃত পক্ষে সম্ভব হয় নি ।  কারণ—

(১) ভারতে ইউরোপীয়দের বিচারের জন্য পৃথক আদালত ছিল ।

(২) ভারতীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইউরোপীয়দের বিচার করতে পারতেন না ।

(৩) ভারতীয় বনাম ইউরোপীয়দের বিচারে ভারতীয়রা অনেক ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতেন । এবং

(৪) বিচার ব্যবস্থা ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র ভারতীয়দের বিচারপ্রার্থী হওয়া সম্ভব ছিল না । 

*****

Related Items

মধুসূদন গুপ্ত

ভারতে আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা প্রসারের সঙ্গে মধুসূদন গুপ্তের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত । তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে হুগলি জেলার বৈদ্যবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । ডেভিড হেয়ারের 'পটলডাঙ্গা স্কুলে' প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা নিয়ে পড়াশুনা ...

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এবং চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার বিকাশ:-

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্নে ভারতে প্রাচীন দেশীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল । পরবর্তীকালে ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক দেশীয় চিকিৎসা-শাস্ত্রে শিক্ষাদানের পরিবর্তে আধু

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ডেভিড হেয়ার ও জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন -এর ভূমিকা

উনিশ শতকে যে সব মানুষ বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ডেভিড হেয়ার । ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি স্কটল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন । ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় এসে ঘড়ির ব্যবসা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন । ঔ

পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে রাজা রামমোহন রায় ও রাজা রাধাকান্ত দেব -এর ভূমিকা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্যশিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন । রাজা রামমোহন রায় মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে । তিনি নিজের খরচে ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় 'ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমি' নামে

নারীশিক্ষা ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ঊনিশ শতকের সূচনালগ্ন পর্যন্ত নানা রকম সামাজিক বিধিনিষেধের ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি । এরপর থেকে উনিশ শতকে ভারতে নারীশিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে কিছু সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত উদ্যোগ শুরু হয় । সমষ্টিগত উদ্যোগে নব্যবঙ্গীয় গোষ্ঠী, খ্রিস্টান মিশনারি এবং ব্রাহ্মসমা