ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 02/02/2021 - 18:16

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে কৃষক আন্দোলন (Quit India Movement and the Peasantry):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দোলনের আগেই দেশীয় প্রদেশগুলিতে কৃষকরা তাদের দাবি আদায়ের জন্য বিভিন্ন প্রতিবাদ ও আন্দোলন শুরু করেছিল । উড়িষ্যার ঢেঙ্কানলে উচ্চবর্ণের ভূস্বামীরা উৎসব উপলক্ষ্যে বলপূর্বক উপহার আদায় করলে এবং বনজ উৎপাদনের ওপর কর আরোপ করলে সমাজবাদী কংগ্রেস নেতা নবকৃষ্ণ চৌধুরীর নেতৃত্বে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মানুষ ঢেঙ্কানলে সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে । এই আন্দোলন ক্রমেই হিংসাত্মক আন্দোলনে পরিণত হয় । হায়দ্রাবাদে নিজামের অত্যাচারে স্থানীয় মানুষেরা জর্জরিত ছিল । তারা সরকারি চাকুরির ৯০শতাংশ নিজেদের দখলে রেখেছিল । প্রথমে কংগ্রেস ও পরে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে এখানকার উচ্চবর্গের মুসলমানদের একটা অংশ নিজামের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় । বিহারে মুঙ্গের, গয়া, রেওয়া জেলায় কৃষকরা অতিরিক্ত কর না দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে । পাঞ্জাবে কমিউনিস্ট প্রভাবিত সংগঠন 'নওজোয়ান ভারত সভা' ও 'কীর্তি কিষাণ সভা'র উদ্যোগে কৃষকরা সংঘবদ্ধ হয় । পাঞ্জাবের পাতিয়ালায় ভগবান সিং লঙ্গয়াল -এর নেতৃত্বে কৃষকরা ফসলের ভাগ চাষকে কেন্দ্র করে আন্দোলন শুরু করে ।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করলে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম, উত্তরপ্রদেশ,  মধ্যপ্রদেশ, বোম্বাই, মাদ্রাজ, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, কেরল প্রভৃতি প্রদেশের কৃষকেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে যোগ দিয়ে আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলে । ভূমিহীন কৃষক, খেত মজুর, ধনী কৃষক এমনকি জমিদারেরাও একযোগে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ।

বিহারের পালামৌ জেলায় কৃষকরা যদুবংশ সাহারের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তোলে । বিহারের মুঙ্গের, ভাগলপুর, মুজফফরপুর, পূর্ণিয়া, সাঁওতাল পরগণা প্রভৃতি অঞ্চলের আদিবাসী কৃষকরা আন্দোলনে যোগ দেয় । বিহারের দ্বারভাঙ্গার জমিদার আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করার সরকারি আদেশ প্রত্যাখান করেন এবং বন্দি কৃষকদের মুক্তির জন্য উদ্যোগ নেন । বোম্বাই -এর খান্দেশ, সাতারা এবং গুজরাটের ব্রোচ জেলায় ব্যাপকভাবে কৃষকেরা আন্দোলনে শামিল হয় । বহু জায়গায় খাজনা বন্ধের আন্দোলন শুরু হয় । বাংলার বীরভূম, দিনাজপুরে মুসলিম কৃষিজীবীরা প্রবল উৎসাহের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় । গুজরাটের আমেদাবাদ, রাজকোট, পোরবন্দর; উড়িষ্যার বালেশ্বর, কটক, তালচের; মধ্যপ্রদেশের নাগপুর, ওয়ার্ধা, অসমের তেজপুর, গোয়ালপাড়া ইত্যাদি অঞ্চলে ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলাকালে কৃষকসমাজ আন্দোলনে শামিল হয় । 

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সারা ভারতে সংগঠিত কৃষক আন্দোলনগুলি ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে তোলে । এই সময় জমিদারদের বিরোধিতা না করে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতাই ছিল কৃষক আন্দোলনগুলির অন্যতম লক্ষ্য ।

****

Comments

Related Items

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কী কী কারণে ইউরোপীয় দেশগুলির গণতন্ত্রের পতন ঘটে ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ আলোচনা কর ।

হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

প্রশ্ন:- হিটলার কীভাবে পররাজ্য গ্রাস শুরু করেছিলেন ? হিটলারের আক্রমণ প্রতিহত না করে পশ্চিমী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি কোন নীতি গ্রহণ করেছিল এবং কেন ? এর ফল কী হয়েছিল ?

(ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি, (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

প্রশ্ন:- (ক) পোল্যান্ড-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি, (খ) মিউনিখ চুক্তি,  (গ) রুশ-জার্মান অনাক্রমণ চুক্তি— এই  চুক্তিগুলি হিটলার কেন স্বাক্ষর করেছিলেন ?

নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

প্রশ্ন:- নাৎসি দলের পররাষ্ট্র নীতির মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

জার্মানির নাৎসি দলের পররাষ্ট্রনীতির মূল উদ্দেশ্য —

(ক) ইউরোপ তথা সারা বিশ্বে জার্মানিকে প্রধান শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা ।

(খ) ভার্সাই সন্ধির অপমান জনক চুক্তিগুলি অমান্য করা ।

নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

প্রশ্ন :- নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

হিটলার বা তাঁর নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল:-