বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 02/02/2021 - 23:13

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (Working Class Movement in the Twentieth Century):-

দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান  ঘটে । বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল—(i) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দোলন, (ii) ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, (iii) ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন, (iv) ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছাড়ো আন্দোলন । এই চারটি আন্দোলনের সময় ভারতে শ্রমিক আন্দোলনও যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে ওঠে । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । যেমন—

(i) ভারতীয় শ্রমিকদের অধিকাংশই অশিক্ষিত ও নিরক্ষর হলেও, তাদের নিজস্ব স্বাভাবিক চেতনা দিয়ে তারা তাদের সমস্যা উপলব্ধি করে তা প্রতিকারের উপায় খুঁজে বার করতেন । তাদের আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং মানসিক দৃঢ়তা ও ঐক্যবোধ ছিল প্রশংসার যোগ্য ।

(ii) শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ । এইসব নেতাদের ওপরই শ্রমিক আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্ভরশীল থাকত । নেতাদের মধ্যে অনৈক্যের জন্য কখনো কখনো শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হতেন । এসব সত্ত্বেও ভারতের শ্রমিক সংগ্রামের ইতিহাসে তাদের ভূমিকা ও অবদান ছিল প্রশংসনীয় । কংগ্রেসের মধ্যে নানা মতভেদ, কমিউনিস্টদের পরিবর্তনশীল নীতি এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের রাশিয়া অভিযান প্রভৃতি শ্রমিক আন্দোলনের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করেছিল ।

(iii) ভারতের শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন মাধ্যমে তাদের দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করতেন । দাবি আদায়ের জন্য শ্রমিকরা হিংসার আশ্রয় নিতেন না । কমিউনিস্ট নেতারাও শ্রমিকদের নিয়ে তেমন কোনো জঙ্গি আন্দোলন গড়ে তোলেননি ।

(iv) ধর্ম ও বর্ণের বিভেদ এবং আঞ্চলিক বৈষম্যের ফলে ভারতের শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়েছিল । শ্রমিকরা শ্রেণিগত দাবি ও সমস্যা নিয়ে না ভেবে বেশির ভাগ সময় ধর্মীয় ও গোষ্ঠীবদ্ধ স্বার্থের ওপর গুরুত্ব দিতেন । মুসলিম শ্রমিকরা ঈদ বা মহরমের ছুটি দাবি করলে হিন্দুরা রথযাত্রা বা অন্যান্য হিন্দুধর্মের উৎসবে ছুটির দাবি করতেন । অনেক সময় উভয় সম্প্রদায়ের শ্রমিকেরা সামগ্রিকভাবে শ্রমিক শ্রেণির অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তেন । ১৮৯৬-৯৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এই ধরণের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা হয়েছিল ।

(v) শ্রমিকরা নিজেদের অর্থনৈতিক দাবিগুলি নিয়ে সংগ্রাম করার পাশাপাশি জাতীয় আন্দোলনের মূল স্রোতেও অংশ নিয়েছিলেন । ব্রিটিশ সরকারও শ্রমিকদের ব্রিটিশ-বিরোধী ভূমিকায় যথেষ্ট উদ্বেগের মধ্যে ছিল । জাতীয় নেতারা অনেক সময় শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘবদ্ধ সংগ্রামে অনিচ্ছুক ছিলেন । কখনো কখনো জাতীয় নেতাদের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপে শ্রমিক আন্দোলন মাঝপথে বন্ধ হয়ে যেত ।

*****

Comments

Related Items

ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:-  ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রকাশ করা হয় । ভারতীয় সংবিধানের চারটি উল্লেখযোগ্য প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—

মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

প্রশ্ন:-  মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:- ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?