বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/29/2022 - 22:19

প্রশ্ন : বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

উত্তর : বিকল্প শিক্ষানীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলায় উনিশ শতক থেকে ভাবনাচিন্তা শুরু হয় । গণমুখী এই শিক্ষাব্যবস্থার ঝোঁক ছিল বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার ওপর । কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে যোগেশচন্দ্র ঘোষ একটি অর্থ ভাণ্ডার গড়ে তোলেন, লক্ষ্য বিদেশে গিয়ে কারিগরি বিষয়ে জ্ঞানার্জনকারী ছাত্রদের আর্থিক সাহায্য করা ।

(i) বাঙালির কারগরি কল্পনার ইতিহাস ঘাঁটলে যে নামটি প্রথম উঠে আসে তিনি হলেন গোলকচন্দ্র, যিনি ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে বিলেত থেকে শ্রীরামপুর কাগজ কলে আনা বাষ্পীয় ইঞ্জিন সযত্নে পর্যবেক্ষণ করতে করতে কোনো বিদেশী সাহায্য ছাড়া নিজে একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিন নির্মাণ করে ফেলেন ।

(ii) ১৮৫২ খ্রিস্টাব্দে সরকার এদেশে টেলিগ্রাফ লাইন পাতার কাজ শুরু করলে এই বিভাগে প্রথম ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ার শিবচন্দ্র নন্দী দুর্বার গতিতে পদ্মার বুকে সাবমেরিন কেবল পাতার কাজ খুব অল্পব্যয়ে শেষ করেন ।

(iii) বাংলায় কারিগরি শিক্ষার প্রতিষ্ঠা ও প্রসারে পি. এম. বাগচি অ্যান্ড কোম্পানির অবদান গুরুত্বপূর্ণ । এই কোম্পানি প্রাচ্যে প্রথম কালি, সুগন্ধি প্রসাধন, রাবার স্ট্যাম্প, পঞ্জিকা তৈরি করে ।

(iv) কারিগরি শিক্ষা ও শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন অনুভূত হয় । কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সরকার ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে 'কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ' প্রতিষ্ঠা করে, পরে এর নাম হয় বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে কলেজটি হাওড়ায় স্থানান্তরিত করা হয় ।

(v) বাংলায় স্বদেশী আন্দোলনকালে জাতীয় নেতৃবৃন্দ সরকারি শিক্ষার বিকল্প হিসেবে জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুভব করেন, যার মাধ্যমে তাঁরা জাতীয়তাবাদী ও বাস্তবমুখী শিক্ষাদানের কথা বলেন । এই ভাবনা থেকে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই নভেম্বর পার্ক স্ট্রিটে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভার সিদ্ধান্ত মত ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ই মার্চ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয় । যার অন্যতম একটি লক্ষ্য ছিল বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো । জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অরবিন্দ ঘোষকে অধ্যক্ষ করে বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় । জাতীয় শিক্ষা পরিষদের অধীনে অসংখ্য বিদ্যালয় তৈরি হয় ।

(vi) জাতীয় শিক্ষা পরিষদের উল্লেখযোগ্য সদস্যদের মধ্যে তারকনাথ পালিত, নীলরতন সরকার, রাসবিহারী ঘোষ কারিগরি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক শিক্ষাদানের পক্ষে ছিলেন । এই উদ্দেশ্যে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তারকনাথ পালিত 'সোসাইটি ফর প্রমোশন অব টেকনিক্যাল এডুকেশন ইন বেঙ্গল' গঠন করেন । ওই বছরই আবার কলকাতার আপার সার্কুলার রোডে 'বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট' নামে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন । কারিগরি ও প্রযুক্তিবিদ্যা শিক্ষার উন্নতি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে এর প্রসার ঘটাতে এই প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ।

(vii) আর্থিক ও অন্যান্য কারণে বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট এর সঙ্গে মিশে যায় । ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠান প্রথম কেমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাঠ দেওয়া শুরু করে । ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এটি যাদবপুরে স্থানান্তরিত হয় । ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ হয় 'কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি' । ১৯৫৫ তে এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় ।

*****

Comments

Related Items

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

বিশ শতকের ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (Working Class Movement in the Twentieth Century):-

দীর্ঘ চার বছর ধরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা চলার পর ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ১১ই নভেম্বর জার্মানি আত্মসমর্পণ করলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান  ঘটে । বিশ শ