Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 04/20/2012 - 20:03

প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ (First Anglo-Maratha War)

১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে পাণিপথের তৃতীয় যুদ্ধে আহম্মদ শাহ আবদালির কাছে মারাঠাদের পরাজয়ের পর পেশোয়া বালাজি বাজিরাও প্রাণ ত্যাগ করেন । তখন তাঁর ১৭ বছর বয়স্ক পুত্র প্রথম মাধব রাও [১৭৬২-১৭৭২] পেশোয়া হন পেশোয়া প্রথম মাধব রাও-এর আমলে মারাঠারা আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে । প্রথম মাধব রাও-এর অকাল মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নারায়ণ রাও ১৭৭২-১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে পেশোয়া পদ লাভ করেন । কিন্তু তাঁর পিতৃব্য রঘুনাথ রাও ষড়যন্ত্র করে নারায়ণ রাওকে হত্যা করে ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে নিজেই পেশোয়া পদ দখল করেন । এরপর মারাঠা সর্দার নানা ফড়নাবীশ [Nana Phadnavis] প্রমুখ মারাঠা নেতারা রঘুনাথ রাও-কে গদিচ্যুত করে নারায়ন রাওয়ের শিশুপুত্র দ্বিতীয় মাধবরাও নারায়নকে পেশোয়া পদে অভিষিক্ত করেন । তখন রঘুনাথ রাও বোম্বাইয়ে ইংরেজদের সাহায্যপ্রার্থী হন । তিনি ইংরেজদের সলসেট বেসিন এবং আর কয়েকটি দ্বীপ দেবার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে তাঁদের সঙ্গে ১৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে সুরাটের সন্ধি করেন । কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংস ও তাঁর কাউন্সিল এই সন্ধি সমর্থন না করে পুনরায় পেশোয়ার সঙ্গে ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে পুরন্দরের সন্ধি স্বাক্ষর করেন । এই সন্ধির শর্ত অনুসারে ইংরেজগণ সলসেট এবং বেসিন বন্দর দুটি লাভের বিনিময়ে রঘুনাথ রাও-এর পক্ষ ত্যাগে স্বীকৃত হন । এই অবস্থায় ইংল্যান্ডে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুরাটের সন্ধি অনুমোদন করায় বোম্বাইয়ের ইংরেজ বাহিনী পেশোয়ারের বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে মারাঠারা ১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে তেলেগাঁও -এর যুদ্ধে ইংরেজদের শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন ও ওয়াড়গাঁও -এর সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন । এই সন্ধিতে উভয় পক্ষই স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে সম্মত হন । কিন্তু বড়লাট ওয়ারেন হেস্টিংস এই শর্ত মানতে অসম্মত হলে পুনরায় যুদ্ধ শুরু হয় । এই যুদ্ধ প্রথম ঈঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধ নামে পরিচিত । অবশেষে ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধিয়ার মধ্যস্থতায় ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে সলবাই [Treaty of Salbai] -এর চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । এই চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের অবসান ঘটে । এই সন্ধির শর্ত অনুযায়ী :

(ক) দ্বিতীয় মাধবরাও নারায়ন পেশোয়া রূপে স্বীকৃতি পান । ইংরেজরা রঘুনাথের পক্ষ ত্যাগ করে মাধব রাওয়ের পক্ষ নেয় ।

(খ) ইংরেজরা বিজিত অঞ্চলগুলি পেশোয়াকে ফিরিয়ে দেয়, বিনিময়ে সলসেট, থানে ও বম্বের কিছু স্থানের অধিকার লাভ করে ।    

(গ) বিতাড়িত রঘুনাথ রাওকে মাসিক ২৫ হাজার টাকা বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা হয়  ।

(ঘ) মহাদজি সিন্ধিয়া যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের বিশাল ভু-খন্ড ফিরে পায় ।

(ঙ) সলবাইয়ের সন্ধি অনুসারে মারাঠারা মহীশূরের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সাহায্য দেবার প্রতিশ্রুতি দেন ।

এই ভাবে ইংরেজরা অসামান্য কূটনীতির মাধ্যমে ভারতীয় শক্তিগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেন ।

****

 

 

Related Items

কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

কাশ্মীর রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Kashmir):-

ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ্ডিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দু

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি

হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারত অন্তর্ভুক্তি (Annexation of Hyderabad):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' -এ বলা হয় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের সম্পাদিত চুক্তির পরিসমাপ্তি ঘটবে ।

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক

দেশীয় রাজ্যগুলির ভারতভুক্তির উদ্যোগ ও বিতর্ক (Initiatives Undertaken and Controversies Related to the Accession of Princely State with India):-

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা আইন' অনুসারে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ই আগস্ট অবিভক্ত ভারত দ্বিখণ

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪)

উত্তর ঔপনিবেশিক ভারত : বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব (১৯৪৭ - ১৯৬৪) [Post-Colonial India : Second Half od the 20th Century (1947-1964)]:-

দীর্ঘদিনের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও আত্মবলিদানের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হওয়া ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের 'ভারতের স্বাধীনতা

বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলন

হিন্দু জাতিভুক্ত নিম্নবর্গীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে নমঃশূদ্র সম্প্রদায় ছিল ঔপনিবেশিক আমলে বাংলার উল্লেখযোগ্য দলিত হিন্দু সম্প্রদায় । নমঃশূদ্ররা হিন্দু জাতিভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তথাকথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত । নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন ধরণের নির্যাতন, বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার হয়েছিল । ...