নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 01/12/2022 - 15:24

প্রশ্ন :- নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী ছিল ? নাৎসি দল জার্মানিতে কীভাবে সরকারি ক্ষমতা দখল করে ?

হিটলার বা তাঁর নাৎসি দলের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল:-

(১) ভার্সাই সন্ধির বিরোধিতা করে এক শক্তিশালী জার্মান রাষ্ট্র গঠন করা ।

(২) জার্মান ভাষাভাষী জনগণকে নিয়ে বৃহত্তর জার্মান রাষ্ট্র গঠন করা ।

(৩) ইহুদিদের বিতাড়িত করা ।

(৪) জার্মানিতে সমাজতান্ত্রিক বা ক্যাথলিক দলের বিরোধীতা করা । 

(৫) জার্মানির বেকার সমস্যার সমাধান, আমূল ভূমিসংস্কার, নারী ও শিশু কল্যাণ প্রভৃতি প্রগতিমূলক বিষয়ও নাৎসি দলের কর্মসূচির অন্তরর্ভুক্ত ছিল ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে—

(১) জার্মানির সামনে অসংখ্য সমস্যা, জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতান্ত্রিক সরকারের দুর্বলতা নানা দিকে ফুটে বেরুচ্ছে, দেশে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অর্থনৈতিক সংকট ও বেকার সমস্যা যখন চরমে, ভার্সাই সন্ধির অপমানজনক শর্তগুলি জার্মানদের মধ্যে যখন গভীর উত্তেজনা ও প্রতিশোধ স্পৃহা জাগিয়ে তুলেছে— সেই সময় হিটলারের নাৎসিবাদে আকৃষ্ট হয়ে জার্মানির অসংখ্য যুবক যুবতী, কৃষক ও ব্যবসায়ী নাৎসি দলে যোগদান করতে থাকে ।

(২) এই সময় জার্মানিতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে অ্যাড্‌ল্‌ফ্‌ হিটলার ও তাঁর নাৎসি দল জার্মানির শাসক দলের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয় । ধীরে ধীরে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের গ্রেফতার, অপহরণ, নির্বাসন, গোপন হত্যা প্রভৃতির মাধ্যমে জার্মানির কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীদের নির্মম ভাবে দমন করে হিটলার তাঁর নাৎসি দলের সাহায্যে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতা দখল করে নেয় ।

(৩) অতঃপর নাৎসি পার্টি জার্মানিতে একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হয় এবং হিটলার হন তার একচ্ছত্র ডিক্টেটর- অর্থাৎ দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে সংসদীয় গণতন্ত্রের পথে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তাকেই গ্রাস করে নিয়ে হিটলার দেশে ফ্যাসিবাদী স্বৈর তান্ত্রিক নাৎসি শাসনব্যবস্থা চালু করেছিলেন । এই ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে জার্মানিতে নাৎসিবাদের উত্থান ঘটেছিল ।

*****

Comments

Related Items

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Anti-partition Movement):-

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলা তথা ভারতে এ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Women's Movements in the Twentieth Century):-

বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল—(i) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্ব

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন(M.N.Roy and the Left Movement in India):-

মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন, যেমন— মি. মার্টিন, হরি সিং, ডা. মাহমুদ, মি.

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ (Participation of the Left in the Anti-Colonial Movement in India):-

রুশ বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি সহ ২৪ জন প্রবাসী ভারতীয়

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Quit India Movement and the Working Class):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দো