নব্য বঙ্গ আন্দোলন (Young Bengal Movement)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 22:50

নব্য বঙ্গ আন্দোলন (Young Bengal Movement) :

উনিশ শতকের প্রথম ভাগে হিন্দু কলেজের অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও পরিচালিত নব্যবঙ্গ আন্দোলনের অনুগামীদের নব্যবঙ্গ বা ইয়ং বেঙ্গল বলা হয় । স্বাধীন চিন্তা ও যুক্তিবাদে বিশ্বাসী ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের সততা, ন্যায়, সত্যানুসন্ধিৎসা, দেশপ্রেম ও পরহিতৈষণার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হতে শিক্ষা দিতেন । ডিরোজিও তাঁর ছাত্রদের সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে গ্রহণ করতে বলতেন । ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাঁর এন্টালির বাসভবনে প্লেটোর 'ডেমট্রেজ' সভার আদলে 'অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন' (Academic Association) নামে একটি সমিতি গঠন করেছিলেন । এই সভায় বিভিন্ন বিষয়ের আলোচনা ও বিতর্ক হত । 'জ্ঞানান্বেষণ' (Jnananneswan), 'পার্থেনন' (Parthenon), 'দ্য এনকোয়ার' (The Enquire) ছিল এই সমিতির মুখপত্র । নবলব্ধ শিক্ষার প্রভাব ও তারুণ্যের উত্তেজনায় তাঁদের আচার-ব্যবহার ও কথাবার্তায় উচ্ছ্বাস ও উন্মাদনার আধিক্য পরিলক্ষিত হত । হিন্দুধর্ম ও সমাজকে ধ্বংস করাই যেন তাদের লক্ষ বলে অনেকে অভিমত পোষণ করতেন । আমূল সংস্কার আন্দোলন উগ্ররূপ ধারণ করায় প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । 'ওরিয়েন্টাল ম্যাগাজিন' ও 'সমাচার চন্দ্রিকা' পত্রিকাতে ইয়ং বেঙ্গল আন্দোলনের ঘোর বিরোধিতা করা হয় । অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত হিন্দুরা এই আন্দোলনকে সমর্থন করেন নি । এই পরিস্থিতির জন্য আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন নেতাগণ ডিরোজিওকে দায়ী করেন । অভিভাবকগণ তাঁদের পুত্রদের হিন্দু কলেজ ত্যাগ করতে বাধ্য করেন । অবশেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ ডিরোজিওকে পদচ্যুত করেন । কিন্তু বাঙালি যুব সমাজের মনে স্বাধীন চিন্তা করবার ক্ষমতা, দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা স্পৃহার যে বীজ তিনি বপন করেছিলেন, তাঁর মূল্য ছিল অপরিসীম ।

*****

Related Items

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Quit India Movement and the Working Class):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দো

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক