Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 04/20/2012 - 21:44

তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (Third Anglo-Mysore War)

১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে হায়দর আলির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপু সুলতান দ্বিতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের নেতৃত্ব হাতে নেন ।  ইংরেজদের প্রতিহত করাই ছিল টিপু সুলতানের একমাত্র লক্ষ্য । কিন্তু এর জন্য তাঁকে একা হাতেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল, কারণ এই সময় কোনো ভারতীয় শক্তি টিপু সুলতানকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় নি । বরং অন্য দিকে কিছু ভারতীয় শক্তি ইংরেজদের সাহায্য করেছিল । সেজন্য টিপু সুলতান কে একসঙ্গে ইংরেজ এবং কিছু ভারতীয় শক্তি, যেমন হায়দরাবাদের নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হয়েছিল । ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য টিপু সুলতান ফরাসিদের কাছে সাহায্য চেয়ে দূত পাঠিয়েছিলেন । তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের প্রাক্কালে ইংরেজরা হায়দরাবাদের নিজাম ও মারাঠাদের সঙ্গে আঁতাত করে । একদা ত্রিবাঙ্কুরের রাজা ইংরেজদের সহযোগী ছিলেন । স্বাধীনচেতা টিপু সুলতান ইংরেজদের প্ররোচনামূলক কার্যকলাপে ক্ষিপ্ত হয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজদের আশ্রিত ত্রিবাঙ্কুর রাজ্য আক্রমণ করলে ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধের যুদ্ধের সুত্রপাত হয় । এই যুদ্ধে ইংরেজ, মারাঠা ও নিজাম এই ত্রিশক্তি টিপু সুলতানের সঙ্গে যুদ্ধ করে । টিপু সুলতান একাই ১৭৯০ থেকে ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর ধরে বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম চালিয়ে যান । কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি সফল হতে পারেন নি । দীর্ঘদিন তাঁর রাজধানী অবরোধের পর টিপু সুলতান ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারী মাসে ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন ও ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন । এই সন্ধির মাধ্যমে টিপু সুলতান ও কর্ণওয়ালিশ এই যুদ্ধের অবসান ঘটান । 

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধি (Treaty of Seringapatam)

১৭৯২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে টিপু সুলতান ও ইংরেজ কোম্পানির মধ্যে এই সন্ধি স্বাক্ষারির হয় । শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির শর্ত অনুসারে টিপু তাঁর রাজ্যের অর্ধেক অংশ ইংরেজ, নিজাম ও মারাঠাদের ছেড়ে দিতে হয়, যার মধ্যে ডিন্ডিগুল, বরমহাল, কুর্গ ও মালাবার অঞ্চল কোম্পানির ভাগে পড়ে । এই সন্ধির ফলে টিপুর রাজ্যের অর্ধেক অংশ তাঁর হস্তচ্যুত হয় এবং দক্ষিণ ভারতে ইংরেজদের রাজ্য, শক্তি ও প্রভাব যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ।

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির শর্ত অনুসারে:

(১) টিপু সুলতান তাঁর রাজ্যের অর্ধাংশ ছেড়ে দেন, এবং তা ইংরেজ, মারাঠা ও নিজাম নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেই । 

(২) যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসাবে টিপু সুলতানকে ৩৩০ লক্ষ টাকা ইংরেজদের দিতে বাধ্য হন ।

(৩) ক্ষতিপূরণের জামিনস্বরূপ টিপু তাঁর দুই কিশোর পুত্রকে ইংরেজদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হন । যতদিন ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হয় নি, ততদিন ওই দুই পুত্র ইংরেজ শিবিরে ছিল ।

(৪) কুর্গের রাজাকে টিপু সুলতান স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হন । তারপর রাজ্যটি ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় ।

(৫) উভয় পক্ষই পরস্পর বন্দী প্রত্যর্পণ করেছিলেন ।  মহিশূরের শস্যভান্ডার ডিন্ডিগাল ও রায়্চুর দোয়াব হাতছাড়া হওয়াতে টিপু সুলতানের অপূরনীয় আর্থিক ক্ষতি হয় ।       

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির ফলে:

(১) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দাক্ষিণাত্যের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয় ।

(২) মহীশূর রাজ্যের অস্তিত্ব বজায় থাকলেও তার পতনের সম্ভাবনা একরকম অনিবার্য হয়ে ওঠে।

*****

Related Items

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে নানা পরিবর্তন ঘটে—

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ? ইতালিতে ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় দেশগুলির অর্থনৈতিক অবস্থা কীরূপ ছিল ?  ইতালি ও জার্মানিতে গণতন্ত্রের পতন হয় কেন ?

মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে আর্যবান্ধব সমাজ ও অভিনব ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:-  মহারাষ্ট্রের বিপ্লবী আন্দোলনে আর্যবান্ধব সমাজ ও অভিনব ভারতের ভূমিকা আলোচনা কর ।

ক্ষুদিরাম বসু ও লালা হরদয়ালকে মনে রাখা হয় কেন ?

প্রশ্ন :-  ক্ষুদিরাম বসু ও লালা হরদয়ালকে মনে রাখা হয় কেন ?

ক্ষুধিরাম বসুকে মনে রাখার কারণ :