Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 14:07

চম্পারণ সত্যাগ্রহ (Champaran Satyagraha)

১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে সদ্যসমাপ্ত সফল সত্যাগ্রহ আন্দোলনের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভারতে ফেরেন । তিনি প্রথমেই ব্রিটিশ সরকারকে ভাড়াটে শ্রমিক আইন রদ করতে অনুরোধ করেন । এই আইন বলে ভারত থেকে ঠিকা শ্রমিকদের দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠানো হত । তিনি ঘোষণা করেন ভাড়াটে শ্রমিক আইন প্রত্যাহৃত না হলে তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু করবেন । সরকার গান্ধিজির দাবি মেনে নিলে গান্ধিজি নিবৃত্ত হন । এভাবে তাঁর সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রথম প্রয়াস জয়যুক্ত হয় । এরপর তিনি উত্তর বিহারের চম্পারণের কৃষকদের দুঃখ দুর্দশা দূর করার জন্য ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁদের পাশে এসে দাঁড়ান । সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনি সেখানকার নীল চাষীদের দুঃখ দুর্দশা ও অসন্তোষের কথা শোনেন । বিহারের চম্পারণে 'তিন কাঠিয়া প্রথা' অনুসারে নীলকর সাহেবরা কৃষকের জমির ৩/২০ ভাগ বা বিঘাপ্রতি তিন কাঠাতে নীল চাষ করতে বাধ্য করত । চম্পারণের কৃষকদের দুঃখ দুর্দশার অবসানকল্পে ও ব্রিটিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে গান্ধিজি চম্পারণ সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করেন । গান্ধিজির অসাধারণ দৃঢ়তার ফলে—

(১) সরকার নীল চাষীদের ওপর সর্বপ্রকার জুলুম বন্ধ করতে বাধ্য হন ।

(২) চম্পারণের কৃষকদের অসন্তোষের কারণ অনুসন্ধানের জন্য সরকার চম্পারণে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে বাধ্য হন ।

(৩) গান্ধিজি এই কমিটির সদস্য হন ।

(৪) তিন কাঠিয়া প্রথা তুলে দেওয়া হয় ।

(৫) বর্ধিত খাজনার ২০ - ২৫ % হ্রাস করা হয় ।

(৬) নীলকর সাহেবরা চম্পারণ ছেড়ে চলে যায় ।

এ সময় বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদ, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, জে.বি. কৃপালনী, এ.এন.সিংহ, ব্রজকিশোর প্রমুখ নেতৃবর্গ গান্ধিজির সঙ্গী হয়েছিলেন ।

এই বছর তিনি অনশন ও সত্যাগ্রহ করে আমেদাবাদের মিল মালিক এবং শ্রমিকদের বিরোধের নিষ্পত্তি করেন ।  তিনি 'মজুর মহাজন সভা' গঠন করে আন্দোলনের দ্বারা শ্রমিকদের দিনে ৮ ঘন্টা কাজের সীমা ধার্য করেন ।  

*****

Related Items

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দ

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Anti-partition Movement):-

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলা তথা ভারতে এ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Women's Movements in the Twentieth Century):-

বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল—(i) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্ব

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন(M.N.Roy and the Left Movement in India):-

মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন, যেমন— মি. মার্টিন, হরি সিং, ডা. মাহমুদ, মি.

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ (Participation of the Left in the Anti-Colonial Movement in India):-

রুশ বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি সহ ২৪ জন প্রবাসী ভারতীয়