Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 04/20/2012 - 21:52

চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (Fourth Anglo-Mysore War)

শ্রীরঙ্গপত্তমের সন্ধির অপমানজনক শর্ত টিপু সুলতান ভুলতে পারে নি । কিছুদিনের মধ্যে আবার তিনি ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপে ব্যস্ত হয়ে পারেন । টিপু সুলতান মরিশাসের ফরাসি শাসক ম্যালারটিকের কাছে, কাবুলের অধিপতি জামান শাহের কাছে, তুরস্কের সুলতানের কাছে এবং ফ্রান্সের বিপ্লবী সরকারের কাছে সাহায্য চেয়ে দূত পাঠান । এছাড়া আরব, কনস্ট্যানটিনোপল, ভার্সাই প্রভৃতি স্থানে ইংরেজবিরোধী সাহায্য চেয়ে আবেদন করেন । ফ্রান্সে ন্যাশনাল কনভেনশন টিপু সুলতানের সঙ্গে কোনো চুক্তি না করলেও টিপু ফ্রান্সের জ্যাকোরিন ক্লাবের সদস্য হন । টিপু সুলতানের এই সব কার্যকলাপে তৎকালীন ভারতের বড়লাট লর্ড ওয়েলেসলির (Lord Wellesley) মনে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল । লর্ড ওয়েলেসলি একজন ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন । হায়দরাবাদের নিজাম প্রথমেই ওয়েলেসলি প্রবর্তিত ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ নীতি গ্রহণ করেন । তারপর অযোধ্যা, তাঞ্জোর, সুরাট, পুণা প্রভৃতি রাজ্যগুলি এই নীতি গ্রহন করে ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় । গভর্নর জেনারেল হিসাবে ভারতের এসে তিনি প্রথমেই টিপু সুলতানের ক্ষমতা চিরকালের মত খর্ব করার জন্য মনস্থির করে ফেলেন ।  তিনি প্রথমে টিপু সুলতানকে ‘অধীনতামূলক মিত্রতা’ নীতি গ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানান । টিপু এই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন । ফলে ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সেনাবাহিনী বিভিন্ন দিক থেকে মহীশূর রাজ্য আক্রমণ করে । এই যুদ্ধ চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ বা শ্রীরঙ্গপত্তমের যুদ্ধ নামে পরিচিত । এই যুদ্ধ মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয়েছিল । কয়েকটি যুদ্ধে পরাজয়ের পর টিপু সুলতান শ্রীরঙ্গপত্তমের যুদ্ধে বীরের মতো যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দেন । তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র মহীশূরের পতন ঘটে মহীশূরের বেশিরভাগ অংশ ইংরেজদের দখলে চলে আসে ।

মূল্যায়ন:-

ওপরের যুদ্ধ ও সন্ধিগুলি পর্যালোচনা করে অনেক ঐতিহাসিক টিপু সুলতানের দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন । কিন্তু এই সব দুর্বলতা সত্ত্বেও মহীশূরের পতনের জন্য টিপু সুলতানকে এককভাবে দায়ী করা উচিত নয়, কারণঃ-

১) টিপু সুলতান মারাঠা, নিজাম ও ফরাসিদের সাহায্য পাননি;

২) দীর্ঘদিন ধরে চলা যুদ্ধে তাঁর রাজ্যে সৈন্য ও অর্থসংকট চরম আকার ধারণ করে;

৩) তিনি লর্ড ওয়েলেসলির মতো চরম সাম্রাজ্যবাদীর সন্মুখীন হয়েছিলেন । তবু তিনি আপস রফায় না গিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরের মতো মৃত্যুবরণ করেন । ব্রিটিশরা মহীশূর অধিকার করলেও এক্ষেত্রে তাদের উদ্বিগ্নতা ও অস্থিরতার শেষ ছিল না । সে বিচারে টিপু সুলতানকে একজন প্রকৃষ্ট প্রতিবাদী শক্তি রূপে চিহ্নিত করা যায় । এই বক্তব্যের যথার্থতা খুঁজে পাওয়া যায় ডঃ মহিবুল হাসানের এই মন্তব্যে ‘Tipu ranks among the greatest rulers India has produced’।

*****

Related Items

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড প্রভৃতির প্রতিবাদে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দ

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women and the Anti-partition Movement):-

সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসনকালে লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলা তথা ভারতে এ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে নারী আন্দোলনের চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Women's Movements in the Twentieth Century):-

বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল—(i) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্ব

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন(M.N.Roy and the Left Movement in India):-

মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন, যেমন— মি. মার্টিন, হরি সিং, ডা. মাহমুদ, মি.

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণ (Participation of the Left in the Anti-Colonial Movement in India):-

রুশ বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মানবেন্দ্রনাথ রায়, অবনী মুখার্জি, মহম্মদ আলি সহ ২৪ জন প্রবাসী ভারতীয়