Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 17:38

কৃষক বিদ্রোহের কারণ (Cause of Peasant Movement) :

ভারতে ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনা থেকেই অর্থাৎ ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে জয়লাভের পর থেকে একের পর এক কৃষক বিদ্রোহ সংঘটিত হয় । এই সব কৃষক বিদ্রোহের অনেকগুলি কারণ ছিল, যেমন —

(১) কোম্পানি প্রবর্তিত নতুন ভূমিরাজস্ব নীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকশ্রেণি : ব্রিটিশ শাসনের প্রথম শতকে কোম্পানি প্রবর্তিত নতুন ভূমিরাজস্ব নীতি ও ভুমিরাজস্ব ব্যবস্থা, রাজস্ব আদায়ের জন্য আমিলদার ও ইজারাদারদের অত্যাচার, প্রচলিত ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সংগতিবিহীন নতুন আইন ও বিচারব্যবস্থায় ভারতীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়, যা তাদের ব্রিটিশ বিরোধী করে তুলেছিল । দরিদ্র ভূমিহীন প্রজাদের বিদ্রোহ তারই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ ।  

(২) কোম্পানি প্রবর্তিত ভূমিরাজস্বের উচ্চ হার : চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, মহলওয়ারি, রায়তওয়ারি ও অন্যান্য ধরণের রাজস্বব্যবস্থা এবং নতুন ভুমিরাজস্ব ব্যবস্থায় ভুমিরাজস্বের হার ছিল খুবই বেশি । এইসব ভুমি-রাজস্ব ব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ায় ভারতের গ্রামীণ জীবনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো প্রায় ভেঙ্গে পড়ে ।

(৩) শিল্পবিপ্লব : ইংল্যান্ডে ১৮শ ও ১৯শ শতকের শিল্পবিপ্লবের ফলে ভারতীয় কুটির শিল্প ধ্বংস হয়ে যায় । এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল কৃষকরা তাই ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে ওঠেন ।

(৪) জমিদারী উত্পীড়ন : জমিদার ও তাঁদের নায়েব গোমস্তাদের প্রজাপীড়নও কৃষকদের বিদ্রোহে ইন্ধন যোগায় ।

(৫) মহাজনদের শোষণ : মহাজনদের শোষণ ও বঞ্চনাও কৃষক বিদ্রোহে অন্যতম কারণ ।

(৬) সরকারি বঞ্চনা : সবশেষে কৃষকদের প্রতি সরকারের বঞ্চনা ও উপেক্ষা তাদের বিদ্রোহে প্ররোচিত করে ।

*****

Related Items

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ : বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ (Resistance and Rebellion) : ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে জুন নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পলাশির যুদ্ধে পরাজিত করার পর ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে তাদের ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করে । এদিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অপশাসনের বিরুদ্ধে ভারতের বি

উনিশ শতকের বাংলার 'নবজাগরণ' ধারণার ব্যবহার বিষয়ক বিতর্ক

পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে উনিশ শতকে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, শিক্ষা প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় কেউ কেউ তাকে 'নবজাগরণ' বলে অভিহিত করেছেন । প্রকৃত অর্থে এই অগ্রগতিকে নবজাগরণ বলা যায় কি না তা নিয়ে ঐতিহাসিক ও পন্ডিতমহলে বিতর্কের শেষ নেই । ঐতিহাসিক যদুনাথ

বাংলার নবজাগরণ -এর চরিত্র ও পর্যালোচনা

ঊনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতি, শিল্পকলা, রাজনীতি, ধর্ম, সমাজ প্রভৃতি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায় । এই অগ্রগতি সাধারণভাবে 'ঊনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণ' নামে পরিচিত । রেনেসাঁস (Renaissance) কথাটির আক্

লালন ফকির

ঊনিশ শতকে বাংলায় সর্বধর্মসমন্বয়ের ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখেছিলেন লালন ফকির বা লালন সাঁই হলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আধ্যাত্মিক বাউলসাধক । তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও বাংলাদেশের বাউলগানের শ্রেষ্ঠতম রচয়িতা ছিলেন । তিনি সাধারণ মানুষের কাছে লালন ফকির ...

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের অভিমুখ : নব্য বেদান্ত — বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা

ভারতের প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের ব্যাখ্যাকর্তা ছিলেন আদি জগৎগুরু 'শঙ্করাচার্য' । 'বেদান্ত' শব্দের অর্থ হল বেদের অন্ত বা শেষ, আর বেদের অন্ত হল উপনিষদসমূহ । ব্রহ্ম হল বেদান্ত দর্শনের মূল আলোচ্য বিষয় । উপনিষদ, ভগবতগীতা এবং ব্রহ্ম সূত্র ও তার ভাষ্য বি