অনুশীলন সমিতি (Anushilan Samiti)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 10:37

বৈপ্লবিক আন্দোলনের ধারা : বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন (Revolutionary Movement in Bengal)

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের পরবর্তী ঘটনাবলি বাংলা তথা ভারতে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছিল । স্বদেশি আন্দোলনের সময় বাংলায় বিপ্লবের প্রস্তুতি পুরোদমে চলতে থাকে । আন্দোলনকারী ছাত্র ও যুবকবৃন্দ পুলিশী নির্যাতন এড়াতে অনেক সময় আত্মগোপন করতেন । সেই অবস্থায় তাঁরা ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন । ইউরোপের ইতিহাসে বার্লিনকে যেমন বিপ্লবী আন্দোলনের ঝটিকাকেন্দ্র বলা হয়, ভারতের ইতিহাসে বাংলাকে তেমনি বিপ্লবী আন্দোলনের ঝটিকাকেন্দ্র বলা হয়ে থাকে । ইটালির 'কার্বোনারি', চিনের 'শ্বেতপদ্ম' প্রভৃতি গুপ্ত সমিতির অনুকরণে বাংলায় 'অনুশীলন সমিতি' ও 'যুগান্তর সমিতি' প্রতিষ্ঠিত হয় । অগ্নিযুগের বাংলার বিপ্লবী আন্দোলন এইভাবে ব্রিটিশ বিরোধী সন্ত্রাস ছড়াতে সমগ্র ভারতের ইতিহাসে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিল । 

অনুশীলন সমিতি (Anushilan Samiti) : বিপ্লবী আন্দোলনের প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবে অতীস চন্দ্র বসুর উদ্যোগে এবং ব্যারিস্টার প্রমথনাথ মিত্রের সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মার্চ কলকাতার ১২ নং মদন মিত্র লেনে অনুশীলন সমিতি স্থাপিত হয় । এই সমিতির আর একজন প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন সতীশচন্দ্র বসু । এই সময় চিত্তরঞ্জন দাস সহসভাপতি এবং অরবিন্দ ঘোষ অনুশীলন সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন । বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'আনন্দমঠ' উপন্যাসে উল্লিখিত সন্তান দলের অনুশীলন সমিতির নাম থেকেই এই বিখ্যাত গুপ্ত সমিতির নামকরণ হয় । এই সমিতির বিপ্লবী তরুণদের স্বামিজীর আদর্শে শরীরচর্চা, যোগব্যায়াম, সাঁতার, অশ্বারোহণ, অসিচালনা, মুষ্টিযুদ্ধ ও লাঠি চালনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হত । স্বামিজীর 'রাজযোগ', হিন্দু গ্রন্থ 'গীতা' ইত্যাদি বিপ্লবীদের প্রেরণা দিয়েছিল । প্রথম দিকে ব্যায়াম সমিতি হিসাবেই অনুশীলন সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় । ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে তা এক গোপন বিপ্লবী সংস্থায় পরিণত হয় । এই সমিতির লক্ষ্য ছিল সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ চালিয়ে ব্রিটিশ শাসনযন্ত্রকে অচল করে দেওয়া এবং ব্রিটিশ শাসকবর্গের মনে ভীতি ও সন্ত্রাসের আবহ সঞ্চার করা ।

*****

Related Items

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar)

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার (Pritilata Waddedar):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ প্রথমদিকে পরোক্ষভাবে অংশ নি

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha)

দীপালি সংঘ (Dipali Sangha):-

বিংশ শতকে জাতীয় কংগ্রেসের উদ্যোগে জাতীয় আন্দোলগুলি ভারতবাসীর স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ করতে ব্যর্থ হলে বাংলায় ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে বৈপ্লবিক আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে । এই সময় নারীদের সংগঠিত করে বিপ্লবী কার্যকলাপে শামি

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীর অংশগ্রহণ (Nature of Women's Role in the Armed Revolution Struggles):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Quit India Movement):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে নারী আন্দোলন (Women's Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে সারা বিশ্ব জুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । এই অর্থনৈতিক মন্দা ঔপনিবেশিক ভারতের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করে । ভারতের কৃষিজাত পণ্