বায়ুমণ্ডলের উপাদান (Composition of the Atmosphere)

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 08/01/2021 - 12:07

বায়ুমণ্ডলের উপাদান (Composition of the Atmosphere) : আবাহবিজ্ঞানীদের মতে বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন প্রকার উপাদানের এক যৌগিক মিশ্রণ । যার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার গ্যাসের পরিমাণই সর্বাধিক । বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি পৃথিবীর জীবমণ্ডলকে প্রাণধারণে সহায়তা করে । বায়ুমণ্ডল প্রধানত তিন প্রকার উপাদানে গঠিত । যথা—  (i) গ্যাসীয় উপাদান (Gaseous element), (ii) জলীয় বাষ্প (Water Vapour) এবং (iii) ধূলিকণা (Dust Particles) ।

(i) গ্যাসীয় উপাদান (Gaseous element) : বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন গ্যাসের (Nitrogen) পরিমান সব চেয়ে বেশি । এর পরিমান শতকরা ৭৮.০৮ ভাগ । এরপর অক্সিজেন (Oxygen) শতকরা ২০.০৪ ভাগ এবং আর্গন (Argon) শতকরা ০.৯৩ ভাগ অধিকার করে আছে । এই গ্যাসগুলি উত্তাপ গ্রহণ করতে পারে । ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধিতে এরা কোনো ভূমিকা পালন করে না ।  বায়ুমণ্ডলের বাকি ০.৯৫ ভাগের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড (Carbon dioxide) (০.০৩৫%), মিথেন (Methane), ওজোন (Ozone), হাইড্রোজেন (Hydrogen) প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে অতি নগণ্য হলেও আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণে এগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এ ছাড়াও বায়ুমন্ডলে নিওন (Neon), হিলিয়াম (Helium), ক্রিপ্টন (Krypton), জেনন (Xenon) প্রভৃতি কতকগুলি নিষ্ক্রিয় গ্যাস রয়েছে ।

(ii) জলীয় বাষ্প (Water Vapor) : জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে জলীয় বাষ্প বলে । সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়, গাছপালা থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মিশে । বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র শতকরা ০.২৫ ভাগ রয়েছে জলীয় বাষ্প এবং এর শতকরা ৯০ ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ কিমি. উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমান খুব কম হলেও ঋতুভেদে ও অঞ্চল ভেদে এর পরিমাণের তারতম্য হয় । মেরু প্রদেশ ও উষ্ণ-মরু অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অতি সামান্য হলেও উষ্ণ-আদ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে এর পরিমাণ থাকে প্রায় শতকরা ৪ ভাগ । বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় । এইভাবে জলীয় বাষ্প বায়ুর উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে । বায়ুমন্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই পৃথিবীতে মেঘ, বৃষ্টি, তুষারপাত, কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

(iii) ধূলিকণা (Dust Particles) : বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে অন্যান্য গ্যাসীয় অণুর মতো অজস্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা বাতাসে ভেসে বেড়ায় । কলকারখানার পোড়া কয়লার ছাই, গাড়ির ধোঁয়ার অজৈব কণা, অগ্নুৎপাত ও দাবানলের ছাই, উল্কাপাতের ছাই, মরু অঞ্চল ও সমুদ্রতীরের ধুলোবালি, লবণকণা প্রভৃতি সুক্ষ্ম ধূলিকণারূপে বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকে । ধূলিকণা সূর্যের তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে । জলীয় বাষ্প ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই বাতাসে ভাসে বেড়ায় ও মেঘের সৃষ্টি করে ।

অ্যারোসল:- বায়ুমণ্ডলে ভাসমান বিভিন্ন প্রকার কঠিন কণাকে অ্যারোসল বলে । ধূলিকণা, লবনকণা, উল্কার ছাই, অগ্ন্যুদগমের ছাই প্রভৃতি অ্যা্রোসলের প্রধান উৎস ।

******

Comments

Related Items

মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere)

মেসোস্ফিয়ার (Mesosphere) : স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে । মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজের ওপরে স্ট্র্যাটেস্ফিয়ার ও আয়নোস্ফিয়ারের মধ্যে ৮০ কিমি.

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডল (Stratosphere)

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমন্ডল (Stratosphere) : ট্রপোপজের ওপরে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৫০ কিমি.

ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমন্ডল (Troposphere)

ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমন্ডল (Troposphere) : গ্রিক শব্দ ট্রপো (Tropo) কথার অর্থ হল পরিবর্তন (Change) এবং দৈনন্দিন আবহাওয়ায় আমরা যেরকম বিভিন্ন পরিবর্তন অনুভব করি, এই বায়ুস্তরেও সে ধরনের পরিবর্তন দেখা যায় । বায়ুমণ্ডলের একেবারে নীচের স্তরে অবাধে তাপীয় ম

উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস

উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস (Layers of Atmosphere based on variation in temperature) : বিভিন্ন স্তরে উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডল আবার ৬টি স্তরে বিভক্ত । যেমন— (i) ট্রপোস্ফিয়ার বা ক্ষুব্ধমন্ডল, (ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শ

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere)

বিষমমন্ডল বা হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere) : সমমণ্ডলের ওপরে ৮০ কিমি. থেকে ১০,০০০ কিমি.