বায়ুমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলের গঠন (Atmosphere and its Composotion)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 10/31/2013 - 10:36

বায়ুমণ্ডল (Definition of Atmosphere) : পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দশ হাজার কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত যে অদৃশ্য বায়বীয় পদার্থের আবরণ পৃথিবীকে বেষ্টন করে রয়েছে, সেই গ্যাসীয় পদার্থের আবরণ কে বায়ুমণ্ডল বলে । সৌরজগতে পৃথিবী হল একমাত্র গ্রহ, যা অদৃশ্য বায়ুর আবরণ দ্বারা বেষ্টিত । বায়ুমণ্ডলকে চোখে দেখা যায় না, শুধু এর অস্তিত্ব আমরা অনুভব করতে পারি । গাছের পাতা যখন নড়ে, যখন ঝড় হয়, তখন বায়ুকে অনুভব করা যায় । বর্ণ বা গন্ধ না থাকলেও বায়ুর ওজন, আয়তন ও প্রবাহ আছে । পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে এই বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আবর্তনের সঙ্গে আবর্তিত হয় । আবহবিদ হিডোর ও অলিভার -এর মতে বায়ুমণ্ডলের উর্ধ্বসীমা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০,০০০ কিমি. উচ্চতা পর্যন্ত ধরা হয়ে থাকে । আবহবিজ্ঞানী স্ট্রলার -এর মতে বায়ুমণ্ডলের ৯৭% ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ৩০ কিমি. উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে ।

বায়ুমণ্ডলের উপাদান (Composition of the Atmosphere) : আবাহবিজ্ঞানীদের মতে বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন প্রকার উপাদানের এক যৌগিক মিশ্রণ । যার মধ্যে বিভিন্ন প্রকার গ্যাসের পরিমাণই সর্বাধিক । বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলি পৃথিবীর জীবমণ্ডলকে প্রাণধরণে সহায়তা করে । বায়ুমণ্ডল প্রধানত তিন প্রকার উপাদানে গঠিত । যথা—  (i) গ্যাসীয় উপাদান, (ii) জলীয় বাষ্প এবং (iii) ধূলিকণা ।

(i) গ্যাসীয় উপাদান (Gaseous element) : বায়ুমণ্ডলে যেসব গ্যাসীয় উপাদান আছে সেগুলির মধ্যে নাইট্রোজেন গ্যাসের (Nitrogen) পরিমান সব চেয়ে বেশি । এর পরিমান শতকরা ৭৮.০৮ ভাগ । এরপর অক্সিজেন (Oxygen) শতকরা ২০.০৪ ভাগ এবং আর্গন (Argon) শতকরা ০.৯৩ ভাগ অধিকার করে আছে । এই গ্যাসগুলি উত্তাপ গ্রহণ করতে পারে । ফলে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার হ্রাস-বৃদ্ধিতে এরা কোনো ভূমিকা পালন করে না ।  বায়ুমণ্ডলের বাকি ০.৯৫ ভাগের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড (Carbon dioxide) (০.০৩৫%), মিথেন (Methane), ওজোন (Ozone), হাইড্রোজেন (Hydrogen) প্রভৃতি গ্যাসের পরিমাণ বায়ুমণ্ডলে অতি নগণ্য হলেও আবহাওয়া ও জলবায়ুর নিয়ন্ত্রণে এগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এ ছাড়াও বায়ুমন্ডলে নিওন (Neon), হিলিয়াম (Helium), ক্রিপ্টন (Krypton), জেনন (Xenon) প্রভৃতি কতকগুলি নিষ্ক্রিয় গ্যাস রয়েছে ।

(ii) জলীয় বাষ্প (Water Vapor) : জলের গ্যাসীয় অবস্থাকে জলীয় বাষ্প বলে । সাগর, মহাসাগর, নদনদী, হ্রদ এবং অন্যান্য জলাশয়, গাছপালা থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মিশে । বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের মাত্র শতকরা ০.২৫ ভাগ রয়েছে জলীয় বাষ্প এবং এর শতকরা ৯০ ভাগ ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬ কিমি. উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমান খুব কম হলেও ঋতুভেদে ও অঞ্চল ভেদে এর পরিমাণের তারতম্য হয় । মেরু প্রদেশ ও উষ্ণ-মরু অঞ্চলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অতি সামান্য হলেও উষ্ণ-আদ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে এর পরিমাণ থাকে প্রায় শতকরা ৪ ভাগ । বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প সৌরতাপ শোষণ করে এবং ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয় । এইভাবে জলীয় বাষ্প বায়ুর উষ্ণতাকে নিয়ন্ত্রণ করে । বায়ুমন্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির জন্যই পৃথিবীতে মেঘ, বৃষ্টি, তুষারপাত, কুয়াশা প্রভৃতির সৃষ্টি হয়ে থাকে ।

(iii) ধূলিকণা (Dust Particles) : বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে অন্যান্য গ্যাসীয় অণুর মতো অজস্র ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা বাতাসে ভেসে বেড়ায় । কলকারখানার পোড়া কয়লার ছাই, গাড়ির ধোঁয়ার অজৈব কণা, অগ্নুৎপাত ও দাবানলের ছাই, উল্কাপাতের ছাই, মরু অঞ্চল ও সমুদ্রতীরের ধুলোবালি, লবণকণা প্রভৃতি সুক্ষ্ম ধূলিকণারূপে বায়ুমণ্ডলে ভেসে থাকে । ধূলিকণা সূর্যের তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে । জলীয় বাষ্প ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই বাতাসে ভাসে বেড়ায় ও মেঘের সৃষ্টি করে ।

গঠন বিন্যাসের তারতম্য অনুসারে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়, যথা:- (১) হোমোস্ফিয়ার  এবং  (২) হেটেরোস্ফিয়ার  ।

(১) হোমোস্ফিয়ার (Homosphere):- ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের রাসয়নিক গঠন, বিশেষত বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে । এই জন্য বায়ুমণ্ডলের এই স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বলা হয় । হোমোস্ফিয়ার প্রধানত:- (ক) বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণ [নাইট্রোজেন (৭৮%), অক্সিজেন (২০.৯%) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড, আর্গন, নিওন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন প্রভৃতি গ্যাসের মিশ্রণ (১.১ %) ],  (খ) জলীয় বাষ্প এবং  (গ) জৈব ও অজৈব কণিকা যেমন- অতি ক্ষুদ্র খনিজ, লবণ, সমুদ্রতীরের বালুকণা, কয়লার গুঁড়ো বা ধোঁয়া প্রভৃতি দিয়ে গঠিত । ভু-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের প্রথম স্তরকে ট্রোপোস্ফিয়ার বলে । ট্রোপোস্ফিয়ারের উপরে ১৮ কিমি থেকে ৮০ কিমি পর্যন্ত হোমোস্ফিয়ারের দ্বিতীয় স্তরকে স্ট্রাটোস্ফিয়ার বলে ।   

(২) হেটেরোস্ফিয়ার (Heterosphere):-  বায়ূমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বলা হয় ।

*****

Related Items

বান ডাকা (Tidal Bores)

বান ডাকা (Tidal Bores) : সাধারণত বর্ষাকালে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার ভরা কোটালের সময় চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে জোয়ারের জল নদীর খাড়িপথ ও মোহনা দিয়ে খুব উঁচু হয়ে প্রবল বেগে উজানের দিকে অর্থাৎ নদী প্রবাহের বিপরীত দিকে অগ্রসর হয় । ঢেউ, জলোচ্ছ্বাসসহ নদীর এই

অ্যাপোজি ও পেরিজি (Apogee and Perigee)

অ্যাপোজি ও পেরিজি (Apogee and Perigee) : চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে গড় দূরত্ব হল ৩,৮৪,৪০০ কিমি.

সিজিগি (Syzygy)

সিজিগি (Syzygy) : জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীর একই সরলরৈখিক অবস্থানকে সিজিগি (Syzygy) বলে । সিজিগি আবার সংযোগ অবস্থান ও প্রতিযোগ অবস্থান — এই দু-প্রকারের হয় ।

জোয়ার ভাটার ফলাফল (Effect of Tides)

জোয়ার ভাটার ফলাফল (Effect of Tides) : বিভিন্ন ক্ষেত্রে জোয়ার ভাটার যথেষ্ট প্রভাব লক্ষ্য করা যায় । সমুদ্র উপকূলে ও উপকুলের কাছে নদনদীতে জোয়ার ভাটার প্রভাব বেশি । জোয়ার ভাটার নিম্নলিখিত ফলাফল গুলি হল —

ভরা জোয়ারের তুলনায় মরা জোয়ারে জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয়

ভরা জোয়ারের তুলনায় মরা জোয়ারে জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয়