বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 08/30/2021 - 07:06

বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ : বায়ু কোনদিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে, তা বাতপতাকার (Windvane)-এর সাহায্যে সহজেই নির্ণয় করা যায় । অ্যানিমোমিটার (Anemometer) নামক যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ পরিমাপ করা হয় । বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ মাপার একক হল নট (১ নট = ১.৮ কিমি. / ঘন্টা) ।

জেট বায়ু (Jet stream) : মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলে ট্রপোস্ফিয়ারের উর্ধ্ব সীমানায় নিরক্ষরেখার সমান্তরালে যে তীব্র গতিবেগসম্পন্ন সর্পিলাকার ও বায়ুচাপ ঢাল অনুসারী বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে জেট বায়ু বলে ।

(i) ঊর্ধ্ব বায়ুমণ্ডলে জেট বায়ুপ্রবাহ সমচাপরেখার সমান্তরালে প্রবাহিত হয় । তাই এটি জিওস্ট্রফিক বায়ু নামে পরিচিত ।

(ii) সংকীর্ণ ঝরনা বা নদীর মতো প্রবাহিত হয় বলে একে জেট স্ট্রিম বা জেট প্রবাহ বলে । 

(iii) উত্তর গোলার্ধে জেট বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে পূর্ব থেকে পশ্চিমে ঘড়ির কাটার দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।

(iv) জেট বায়ুর গভীরতা মাত্র কয়েক কিমি. হলেও দৈর্ঘ্যে ১০০০ কিমি. এবং প্রস্থে ১০০ কিমি. -র বেশি হয়ে থাকে ।

(v) জেট বায়ু ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানের ঝড়ঝঞ্ঝা এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে । 

মৌসুমী বায়ুর সঙ্গে জেট বায়ুর সম্পর্ক : মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তি ও তার প্রবাহের সঙ্গে জেট বায়ুর এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে । যেমন—

(i) গ্রীষ্মকালে উত্তর ভারতে অবস্থানরত উপক্রান্তীয় পশ্চিমী জেট বায়ু হঠাৎ দুর্বল হয়ে পড়ে হিমালয় থেকে আরও উত্তরে সরে যায় । এর ফলে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত ক্রান্তীয় পূবালি জেট বায়ু দক্ষিণ ভারতের ওপর এসে অবস্থান করে । এই ক্রান্তীয় পূবালি জেট বায়ু ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করে । দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু তখন দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুরূপে ভারতে প্রবেশ করে ও ভারতে মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটে ।

(ii) শীতকালে পশ্চিমী জেট বায়ু এশিয়া মহাদেশের ওপর অবস্থান করে । এই বায়ু তিব্বত হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে হিমালয় পর্বতের দক্ষিণ ঢাল দিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করে । এর দক্ষিণে আফগানিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের ওপর যে উচ্চচাপ গড়ে ওঠে, সেখানে বায়ু অবনমিত হয়ে শুষ্ক আবহাওয়ার সৃষ্টি করে । এর প্রভাবে উত্তর-পূর্ব শীতকালীন মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় ।

****

Comments

Related Items

পিরামিড চূড়া (Pyramidal Peak)

পিরামিড চূড়া (Pyramidal Peak) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, পিরামিড চূড়া [Pyramidal Peak] হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের অত্যাধিক চাপ ও ঘর্ষণের ফলে অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় হিমবাহের ক্ষয়্কার্যের

অ্যারেট (Aretes)

অ্যারেট (Aretes) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, অ্যারেট হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের অত্যাধিক চাপ ও ঘর্ষণের ফলে অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা উপত্যকা

করি (Corrie) বা সার্ক (Cirque)

করি (Corrie) বা সার্ক (Cirque) : হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে যে সমস্ত রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, করি (Corrie) বা সার্ক (Cirque) হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । হিমবাহের উৎসমুখী ক্ষয়কার্যের কারণে উঁচু পার্

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ

হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ (Landforms formed by Erosional works of Glaciers) :- পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহ প্রধানত (ক) ক্ষয়সাধন (Erosion), (খ) বহন বা অপসারণ (Transportation) ও (গ) অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় (Deposition) —এই তিন প্রকারে কাজ করে থাকে । হিমবাহ (ক) অবঘর্ষ ক্ষয় (Abras

হিমবাহের কাজ (Works of Glaciers)

হিমবাহের কাজ (Works of Glaciers) : পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চলে ও উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে অত্যধিক ঠান্ডা । এইসব অঞ্চলে তুষারক্ষেত্র ও হিমবাহ দেখা যায় । অত্যধিক শীতের জন্য পর্বতের উঁচু চুড়ায় ও মেরু অঞ্চলের বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প সারা বছর তুষারে জমে থাকে । পার্বত্