Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 08/04/2021 - 20:20

ওজোন স্তর (Ozone Layer) : বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তরে অর্থাৎ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যে ২০ - ৩৫ কিমি. উচ্চতায় ওজোন (O3) গ্যাসের একটি ঘনস্তর বলয়রূপে পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে, এই স্তরটিকে ওজোনস্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয় । ফরাসি পদার্থবিদ চার্লস ফ্যেব্রি ও হেনরি বুশন ১৯৩০ সালে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তর আবিষ্কার করেন । বায়ুমণ্ডলে তাপ উৎপাদক বিক্রিয়ায় অক্সিজেন পরমাণুর (O) সঙ্গে অবিয়োজিত অক্সিজেন (O2) অণুর রাসায়নিক সংযুক্তির ফলে সৃষ্টি হয় ওজোন অণু (O3) এবং তা থেকে গঠিত হয় ওজোন গ্যাসের স্তর ।

ওজোন স্তরের গুরুত্ব :

(i) এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি পর্দা আছে, যার ফলে সূর্য থেকে বিচ্ছুরিত অতিবেগুনি রশ্মি (Ultra Violet Ray) ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে না । বায়ুমণ্ডলের এই ওজোন স্তর সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে পৃথিবীর জীবজগৎকে ছাতার মতো রক্ষা করে । তাই ওজোন স্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা ন্যাচারাল সানস্ক্রিন বলে ।

(ii) ওজোন গ্যাস সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে, ফলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয় ।

(iii) সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দুরারোগ্য ত্বকের ক্যান্সার, ব্লাড ক্যান্সার প্রভৃতি প্রাণঘাতী রোগব্যাধি ও চোখে ছানি পড়া, প্রজনন ক্ষমতার হ্রাস প্রভৃতি সমস্যা থেকে জীবকুলকে রক্ষা করে । ওজোন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে শোষণ করে পৃথিবীকে জীবকুলের বসবাসের উপযোগী করে তোলে ও জীবজগৎকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে ।

ওজোন স্তরের বিনাশ : ওজোন স্তরের সৃষ্টি ও বিনাশ একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা । কিন্তু হিমঘর, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার প্রভৃতিতে ব্যবহৃত ক্লোরোফ্লুরো কার্বন বা CFC ; অগ্নি নির্বাপক হিসাবে ব্যবহৃত ব্রোমিন সমৃদ্ধ হ্যালন গ্যাস ; মিথাইল ক্লোরোফর্ম, সালফেট যৌগ প্রভৃতির সংস্পর্শে ওজোন অণু চিরস্থায়ীভাবে ভেঙে অক্সিজেন অণু ও পরমাণুর সৃষ্টি করে । এর ফলে ওজোন স্তরের বিনাশ ঘটে ।

ওজোন স্তরের ক্ষয় প্রতিরোধ : বর্তমানে পরিবেশমিত্র গ্যাসের ব্যবহার, ওজোন ক্ষয়কারী পদার্থের পুনর্ব্যবহার ও উৎপাদনে নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণের সাহায্যে ওজোন স্তর ক্ষয়রোধের চেষ্টা চলছে ।

ওজন গর্ত :- স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব ২০০ ডবসন ইউনিটের কম হলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি এই স্তর ভেদ করে পৃথিবীপৃষ্ঠে এসে পড়ে । একে ওজোন গর্ত বলে । ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব পরিমাপের একক হল ডবসন ইউনিট (DU) ।

****

Comments

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।