অক্সিন (Auxin)
অক্সিন উদ্ভিদদেহের প্রধান বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক হরমোন । এই হরমোন হেটরো-অক্সিন [Heteroauxin] নামেও পরিচিত । এর রাসায়নিক নাম ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড [Indole Acetic Acid বা IAA] ।
সংজ্ঞা:- উদ্ভিদের কান্ড ও মূলের অগ্রভাগ, মুকুলাবরণী, বর্ধনশীল পাতার কোশ ইত্যাদি থেকে উত্পন্ন নাইট্রোজেন ঘটিত যেসব জৈব অ্যাসিড উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে, তাদের একসঙ্গে অক্সিন বলে । যথা : ইন্ডোল অ্যাসিটিক অ্যাসিড [IAA] প্রভৃতি ।
অক্সিনের উৎসস্থল [Site of Auxin formation]:- অক্সিন উদ্ভিদের অগ্রস্থ ভাজক কলায়, বিশেষ করে কান্ডের অগ্রভাগ, ভ্রূণমুকুলাবরণী বা কোলিওপটাইল, ভ্রূণ ও কচিপাতা বা বর্ধনশীল পাতার কোশে উত্পন্ন হয় ।
অক্সিনের কাজ (Functions of Auxin)
[1] বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রণ:- অক্সিন প্রধানত উদ্ভদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে । এছাড়া অক্সিনের প্রভাবে :
(i) উদ্ভিদ কোশ বিভাজিত হয় ।
(ii) কোশ আয়তনে প্রসারিত হয় ।
(iii) ক্যাম্বিয়ামের সক্রিয়তা বৃদ্ধি পায় ।
(iv) কাক্ষিক মুকুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, ফলে উদ্ভিদের সামগ্রিক বৃদ্ধি ঘটে ।
[2] ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ:- অক্সিন উদ্ভিদের ফটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা গ্রহন করে । অক্সিন আলোর উত্সের বিপরীত দিকে বেশি মাত্রায় সঞ্চিত হয়ে ওই অঞ্চলের কোশগুলির দ্রুত বিভাজন ঘটায়, ফলে উদ্ভিদের কান্ড আলোর উত্সের দিকে বেঁকে যায় । উদ্ভিদের মুল স্বল্প অক্সিনে বেশি অনুভূতিশীল হওয়ায় আলোর উত্সের দিকের কোশগুলি দ্রুত বিভাজিত হয়, ফলে মূল আলোর উত্সের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায় ।
[3] অঙ্গমোচন রোধ:- অক্সিন উদ্ভিদের অপরিণত অঙ্গের (পাতা, মুকুল, ফুল, ফল ইত্যাদি) অকাল পতন রোধ করে ।
[4] অঙ্গ বিভেদ নিয়ন্ত্রণ:- লঘু ঘনত্বের অক্সিন উদ্ভিদের বিভিন্ন অঙ্গের, যেমন মূল, কান্ড, পাতা, ফুল, ফল ইত্যাদির পরিস্ফুটন ঘটায় । এইভাবে অক্সিন উদ্ভিদের ফল ও বীজ গঠনেও সাহায্য করে ।
[5] ফলের পরিস্ফুটন:- অক্সিনের প্রভাবে নিষেক ছাড়াই ডিম্বাশয়টি ফলে পরিণত হয়, ফলে বীজহীন ফল সৃষ্টি হয় । অক্সিনের প্রভাবে নিষেক ছাড়াই বীজ বিহীন ফল সৃষ্টি হওয়ায় এই পদ্ধতিকে পার্থেনোকার্পি বলে ।
[6] উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণ:- উদ্ভিদের লিঙ্গ নির্ধারণে অক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে ।
অক্সিনের ব্যবহারিক প্রয়োগ :- কৃষিকার্যে অক্সিন হরমোনের ব্যবহারিক প্রয়োগ হল :
[1] বীজহীন ফল উত্পাদন:- বীজহীন ফল (টম্যাটো, বেগুন, লঙ্কা, লাউ, কুমড়ো, পেঁপে, তরমুজ আঙ্গুর প্রভৃতি) উত্পাদনের জন্য অক্সিন প্রয়োগ করা হয় ।
[2] কলম তৈরি:- শাখা কলমের সাহায্যে বংশ বিস্তারের জন্য নানান ফুল ও ফলের গাছে অক্সিন প্রয়োগ করে দ্রুত সৃষ্টি করা হয় ।
[3] আগাছা দমন:- চাষের খেতে আগাছা দমনের জন্য কৃত্রিম অক্সিন [2,4-D] ব্যবহার করা হয় ।
[4] অকাল পতন রোধ:- পাতা, ফুল ও ফলের মোচন অর্থাৎ ঝরে পড়া রোধ করার জন্য কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করা হয় ।
[5] ক্ষত নিরাময়:- উদ্ভিদ-অঙ্গ (প্রধানত ডালপালা ) ছাঁটার পর ওই অঞ্চলের ক্ষতস্থান পূরণের জন্য কৃত্রিম অক্সিন প্রয়োগ করা হয় ।
অক্সিন, জিব্বেরেলিন ও সাইটোকাইনিন -এর পার্থক্য
বৈশিষ্ট্য | অক্সিন | জিব্বেরেলিন | সাইটোকাইনিন |
১. প্রকৃতি | এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ । | এটি নাইট্রোজেনবিহীন জৈব যৌগ । | এটি নাইট্রোজেনঘটিত জৈব যৌগ । |
২. উত্পত্তিস্থল | এটি প্রধানত কান্ড ও মূলের অগ্রস্থ ভাজক কলায় উত্পন্ন হয় । | এটি প্রধানত পরিণত বীজ, অঙ্কুরিত চারা গাছ এবং বীজপত্রে উত্পন্ন হয় । | এটি প্রধানত শস্য কলায় এবং ফুল ও ফলের নির্যাসে পাওয়া যায় । |
৩. কাজ | এটি প্রধানত উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে । | এটি প্রধানত উদ্ভিদের ফুল সৃষ্টিতে এবং বীজের সুপ্ত অবস্থা ভঙ্গ করে অঙ্কুরোদগমে সাহায্য করে । | এটি প্রধানত উদ্ভিদের কোষ বিভাজন ঘটায় । |
৪. বিশেষ ভূমিকা |
ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের বিশেষ ভূমিকা আছে |
ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এই হরমোনের কোনো ভূমিকা নেই । |
ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে এর কোনো ভূমিকা নেই । |
*****
- 16519 views