বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ - বাংলা

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 21:50

বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির আত্মপ্রকাশ — বাংলা

শশাঙ্ক (Sasanka) : গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর গৌড়রাজ শশাঙ্কের আমলে বাংলা প্রথম সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে । শশাঙ্ক ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । সম্ভবত তিনি কোনো গুপ্ত রাজার সামন্ত ছিলেন । গৌড় বলতে তখন প্রধানত উত্তর ও পশ্চিম বঙ্গের কিছু অংশকে বোঝাত । তাঁর রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদের কর্ণসুবর্ণতে । তিনি থানেশ্বর ও কামরূপে সাহায্যপুষ্ঠ মৌখরী রাজ গ্রহবর্মণকে পরাজিত করেন । মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি গৌড়, মগধ, উৎকল, কঙ্গোজ প্রভৃতি অধিকার করেছিলেন ।

পাল বংশ (Pal Dynasty) :

ধর্মপাল (Dhamapala) : শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলায় এক রাজনৈতিক অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ায় গোপাল রাজা নির্বাচিত হন । পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা গোপালের সুযোগ্য পুত্র ধর্মপাল প্রথমে প্রতিহার রাজ বৎসরাজ ও পরে রাষ্ট্রকূট রাজ ধ্রুবর হাতে পরাজিত হন । কিন্তু তা সত্ত্বেও অবন্তী, কীর, মদ্র, মংস্য, যদু, ভোজ, পুরু, গান্ধার প্রভৃতির রাজারা তাঁর বশ্যতা স্বীকার করেন বলে খলিমপুর লিপিতে দাবি করা হয়েছে । বাংলা ও বিহার তাঁর প্রত্যক্ষ শাসনাধীন ছিল । ধর্মপাল সম্ভবত গোকর্ণ বা নেপালও জয় করেছিলেন । ধর্মপাল ৭৭০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন ।

দেবপাল (Devpala) : ধর্মপালের পুত্র দেবপাল পাল বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন । দেবপাল ৮১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৮৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বিন্ধ্য পর্বত পর্যন্ত এবং পূর্বে কামরূপ থেকে পশ্চিমে কাশ্মীর ও পাঞ্জাব পর্যন্ত তাঁর রাজ্য বিস্তৃত ছিল । তিনি হুনদের পরাজিত করেন । প্রতিহার রাজ রামচন্দ্র ও প্রথম ভোজ এবং রাষ্ট্রকূট রাজ অমোঘবর্ষ তাঁর হাতে পরাজিত হন ।

সেন বংশ (The Sena Kingdom) :

(১) পাল বংশের শেষ রাজা মদন পালকে পরাজিত করে বিজয় সেন (Vijay sena) সেন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন । বিজয় সেন ১০৯৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন ।

(২) বিজয় সেনের পুত্র বল্লাল সেন ছিলেন এই বংশের শ্রেষ্ঠ সন্তান । তিনি মগধ ও মিথিলা জয় করেন । কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তক হিসাবে বল্লাল সেন বাংলার ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন । তিনি দানসাগর অদ্ভূতসাগর নামে দুটি গ্রন্থ রচনা করেন ।

(৩) বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষ্মণ সেনের (Lakshmana sena) আমলে তুর্কি সেনাপতি বক্তিয়ার খলজি বাংলা আক্রমণ করেন । বৃদ্ধ লক্ষ্মণ সেন সেই আক্রমণ প্রতিহত করতে পারেন নি । ড. নীহাররঞ্জন রায়ের ভাষায় “বক্তিয়ারের নবদ্বীপ জয় এবং একশ বছরের মধ্যে সারা বাংলাদেশ জুড়ে মুসলমান রাজশক্তির প্রচেষ্টা মোটেই আকস্মিক ঘটনা নয় । সেন আমলের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধোগতিরই অনিবার্য পরিণাম” ।

*****

Related Items

ঔরঙ্গজেবের রাজত্বকাল (The Reign of Aurangzeb)

এক নাটকীয় ভ্রাতৃবিরোধ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ঔরঙ্গজেব দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন । ঔরঙ্গজেবের আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের চরম বিস্তৃতি ঘটে । আবার তাঁর সময় থেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন প্রক্রিয়াও সূচিত হয় । তাঁর সময়ে রাজ্য জয়ের সুযোগ অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছিল । ...

শাহজাহানের রাজত্বকাল (The Reign of Shahjahan)

পরবর্তী মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গিরের পুত্র শাহজাহানের আমলে মুঘল সাম্রাজ্যবাদী নীতি অব্যাহত ছিল। তাঁর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হল দাক্ষিণাত্য বিজয় । পিতা ও পিতামহের অসম্পূর্ণ কাজ তিনি সম্পূর্ণ করেন । সুন্নি মতাবলম্বী ও শাহজাহানের কাছে শিয়া মতাবলম্বী দাক্ষিণাত্যের রাজ্যগুলির ...

জাহাঙ্গীরের রাজত্বকাল (The Reign of Jahangir)

আকবর তাঁর বিজ্ঞতা, বিচক্ষণতা, উদারতা ও দূরদর্শিতায় মুঘল সাম্রাজ্যকে যে গৌরব শীর্ষে উন্নীত করে যান, পরবর্তী কালে তার উত্তরাধিকারী জাহাঙ্গিরের আমলে তা মোটের উপর অক্ষুণ্ণ ছিল । অবশ্য পরবর্তী যুগের কিছু দুর্বলতা ও সমস্যার বীজ এই সময়েই অনুসন্ধান করা সম্ভব । ...

আকবরের রাজত্ব কাল (The Age of AKbar)

এক চরম সংকটজনক মুহূর্তে আকবর ১৫৫৬ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন । তখন তাঁর সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল হিমুকে দমন করা । হিমু ছিলেন চুনার থেকে বাংলা সীমান্ত পর্যন্ত তামাম এলাকার শাসক আদিল শাহের উজির । হিমু আগ্রা অধিকার করে দিল্লির অভিমুখে রওনা হন । ...

শেরশাহের উত্থান ও রাজত্ব (Rise of Sher Shah)

শেরশাহের আসল নাম ছিল ফরিদ । তিনি সম্ভবত ১৪৭২ সালে জন্মগ্রহণ করেন । তাঁর পিতা হাসান ছিলেন সাসারামের জায়গিরদার । ফরিদের বাল্যজীবন সুখের ছিল না । বিমাতার কোপে পড়ে তিনি সাসারাম ছাড়তে বাধ্য হন । পিতার মৃত্যুর পর তিনি সাসারামের জায়গিরদার রূপে নিজ ...