সমকালীন সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 10:28

সমকালীন সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক (Relation with Contemporary Civilisations) :

সিন্ধু জনগণ কূপমন্ডূক ছিল না । সমকালীন অন্যান্য সভ্যতা মিশর, ব্যাবিলন ও সুমেরীয় বা মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে সিন্ধু জনগণের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক ছিল ।

(১) সিন্ধু ও সুমেরীয় উভয় সভ্যতাই উন্নত নাগরিক জীবন ও সুখস্বাচ্ছন্দ্যের স্বাক্ষর বহন করে ।

(২) উভয় অঞ্চলের মানুষ মাতৃপূজা করত ।

(৩) উভয় অঞ্চলই ছিল মৃৎশিল্পে উন্নত এবং পোড়া ইট দিয়ে ঘড়বাড়ি তৈরি করা হত ।

(৪) উভয় অঞ্চলেরই মানুষ লেখাপড়া জানত । সিন্ধু সভ্যতার বহু সিলমোহর মেসোপটেমিয়ায় পাওয়া গেছে ।

(৫) গর্ডন চাইল্ড মনে করেন যে, সিন্ধু অঞ্চলের মানুষ সমুদ্র পার হয়ে ব্যাবসাবাণিজ্য করত । মিশরের সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার সরাসরি যোগাযোগ না থাকলেও মিশরের তৈরি কিছু জিনিসপত্র ভারতে পাওয়া গেছে । হয়তো সুমেরীয় বণিক মারফত ওইসব দ্রব্য ভারতে আসত । রুশ প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যাসনের গবেষণা থেকে জানা যায় সিন্ধু শহরগুলির সঙ্গে দক্ষিণ তুর্কমেনিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল ।

সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে মেসোপটেমিয়ার সাদৃশ্য লক্ষ করে অনেকেই এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, সিন্ধু সভ্যতার নির্মাণকর্তা সুমেরীয়গণ । এই অনুমান অনেকাংশে ভ্রান্ত । বস্তুত, উভয় সভ্যতার মধ্যে মিল যেমন আছে, অমিলও তেমনই আছে ।

(১) সিন্ধু সভ্যতায় বস্ত্রশিল্পের ঐতিহ্য থাকলেও মেসোপটেমিয়ায় তা ছিল না ।

(২) উভয় অঞ্চলের মৃৎশিল্পের মধ্যেও পার্থক্য ছিল ।

(৩) সিন্ধুলিপির সঙ্গে সুমেরীয় লিপির কোনো মিল নেই ।

(৪) ইটের আকৃতিও আলাদা ।

(৫) উভয় অঞ্চলের মৃতদেহ সৎকারের পদ্ধতিও একরকম ছিল না ।

কাজেই দুটি সভ্যতা সম্পূর্ণ ভিন্ন ও পৃথক । কিন্তু তার ফলে উভয় অঞ্চলের মধ্যে আদানপ্রদানে কোনো অসুবিধা হয়নি ।

*****

Related Items

সুলতান মামুদ (Sultan Mahmud of Gazni)

মহম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু জয়ের ৩০০ বছর বাদে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গজনির সুলতান মামুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন । সুলতান মামুদ একজন লোভী, লুন্ঠনকারী, রূপেই পরিচিত । ভারতে রাজ্য স্থাপনের কোনো ইচ্ছা তার ছিল না । ইসলাম ধর্মের প্রসার ...

আরবদের সিন্ধু বিজয়

হজরত মহম্মদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন ও ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে দেহত্যাগ করেন । হজরত মহম্মদ মারা যাওয়ার পর একশো বছরের মধ্যে আরবরা পারস্য দখল করে ভারতের দিকে অগ্রসর হয় । ভারতে প্রথম মুসলিম আক্রমণ শুরু হয় সিন্ধুতে । সে সময় সিন্ধুর রাজা ছিলেন ব্রাহ্মণ্যধর্মী দাহির । ...

প্রাচীন ভারতের শিল্প ও চিত্রকলা

চূড়া ও শিখরের আকৃতির বিচারে গুপ্ত যুগের পর থেকে প্রাচীন যুগের শেষ পর্যন্ত সময়ের শিল্পরীতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে । ইন্দো-এরিয়ান বা উত্তর ভারতীয় শিল্পরীতি এবং দক্ষিণ ভারতীয় দ্রাবিড়ীয় শিল্পরীতি । মহাবলী পুরম বা মামল্লপুরমের রথগুলি পল্লব শিল্পরীতির সবচেয়ে বড় উদাহরণ ...

প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞান চর্চা

গুপ্তযুগের আর্যভট্ট, বরাহমিহির, গর্গ, লাটদেব ও আর্যভট্টের শিষ্যগণ গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায় মৌলিক অবদান রেখেছিলেন । পৃথিবীর আহ্নিকগতি ও বার্ষিকগতির কথা আর্যভট্টের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি । আর্যভট্টের লেখা ‘সুর্যসিদ্ধান্ত’ একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ...

প্রাচীন ভারতের সাহিত্য

প্রাচীন ভারতে সংস্কৃত ভাষায় সাহিত্যের স্বর্ণভান্ডার ছিল । এ ছাড়া পালি,প্রাকৃত,বাংলা,হিন্দি,তামিল প্রভৃতি ভাষাতেও উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচিত হয়েছিল । বৈদিক সাহিত্য, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, স্মৃতি প্রভৃতি কালজয়ী সাহিত্য সংস্কৃত সাহিত্যকে প্রভূতভাবে প্রভাবিত করেছিল । ...