মুঘল যুগের স্থাপত্য

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 10/04/2014 - 10:28

মুঘল যুগের স্থাপত্য (Architecture during Mughal Period) :

স্থাপত্য ও চিত্রকলার ইতিহাসে মুঘল যুগের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । নির্মাতা হিসাবে মুঘল সম্রাটদের খ্যাতি ছিল জগৎজোড়া । এই যুগের স্থাপত্য ভারতীয় ও পারস্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল ।

(১) মুঘল স্থাপত্যে আকবরের অবদান (Akbar's Contribution on Mughal architecture) : মুঘল স্থাপত্যরীতির সূচনা হয় আকবরের সময়ে । তাঁর সময়ে নির্মিত আগ্রার দুর্গ ও ফতেপুর সিক্রি সম্রাটের শিল্পানুরাগের পরিচয় দেয় । উভয় ক্ষেত্রেই পারস্যের প্রভাব স্পষ্ট । ফার্গুসনের মতে, ফতেপুর সিক্রি হল ‘এক মহান ব্যক্তির মনের প্রতিবিম্ব’ । ফতেপুর সিক্রির সৌধগুলির মধ্যে যোধাবাঈ প্রাসাদ, দেওয়ানি খাস, দেওয়ানি আম, জামি মসজিদ এবং বুলন্দ দরওয়াজা বিখ্যাত । এগুলির মধ্যে হিন্দু স্থাপত্য রীতির প্রভাব দেখা যায় । হুমায়ুনের সমাধিতেও হিন্দু স্থাপত্য রীতির প্রভাব পড়েছিল ।

(২) মুঘল স্থাপত্যে জাহাঙ্গিরের অবদান (Jahangir's Contribution on Mughal architecture) : জাহাঙ্গিরের রাজত্বের শেষ দিকে ‘পিয়েত্রা দুরা নামে এক শিল্পরীতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । এই রীতির বৈশিষ্ট্য হল নির্মাণের ক্ষেত্রে মার্বেলের ব্যাপক ব্যবহার ও দামি পাথর দিয়ে দেওয়ালে কারুকার্য করা । শাহজাহানের আমলে এই রীতির আরও ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায় তাজমহল তৈরির ক্ষেত্রে । জাহাঙ্গিরের আমলে নির্মিত সেকেন্দ্রায় আকবরের সমাধি ও আগ্রায় ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি বিখ্যাত । সাদা ও মার্বেল পাথরে নির্মিত দ্বিতীয় সমাধিটি পিতার স্মৃতিতে নির্মাণ করান নুরজাহান । এই সমাধি নির্মাণে রাজপুত শিল্পরীতির প্রভাব পড়েছিল ।

(৩) মুঘল স্থাপত্যে শাহজাহানের অবদান (ShahJahan's Contribution on Mughal architecture) : মুঘল স্থাপত্যের চরম বিকাশ ঘটে শাহজাহানের আমলে । তাঁর নির্মিত অসংখ্য শিল্প নিদর্শন আগ্রা, দিল্লি, লাহোর, কাবুল, কান্দাহার, কাশ্মীর, আজমির প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে আছে । জাঁকজমকের দিক থেকে তাঁর আমলে নির্মিত সৌধগুলি আকবরের আমলে নির্মিত অট্টালিকাগুলির তুলনায় অনেক নিস্প্রভ হলেও এগুলির অলংকরণ ও হাতের কাজ ছিল অসাধারণ । আগ্রার তাজমহল, মোতি মসজিদ, জামি মসজিদ এবং দিল্লির দেওয়ানি খাস ও দেওয়ানি আমে তার পরিচয় পাওয়া যায় । শাহজাহানের একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল ময়ূর সিংহাসন । ময়ূর সিংহাসন তৈরি করতে সময় লেগেছিল আট বছর এবং খরচ হয়েছিল তখনকার সময়ে ৮ কোটি টাকা । এই সিংহাসনের চারটি পায়াই ছিল সোনার তৈরি । পরে নাদির শাহ এটি লুঠ করেন ।

(৪) ঔরঙ্গজেবের আমলে অবশ্য স্থাপত্য শিল্পের অবনতি ঘটেছিল ।

*****

Related Items

মুঘল যুগে ভারতের কৃষি নির্ভর শিল্প

মুঘল আমলে গ্রামীন অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি ও হস্তশিল্প বা কুঠির শিল্প । কুঠির শিল্পকে দুই ভাগে ভাগ করে আলোচনা করা যেতে পারে । প্রথমত, কৃষিনির্ভর শিল্প এবং দ্বিতীয়ত অকৃষি শিল্প । কৃষিনির্ভর শিল্পের মধ্যে পড়বে শর্করা শিল্প, তৈল, তামাক, নীল, মদ প্রভৃতি শিল্প । ...

সুলতানি ও মুঘল আমলের চিত্রকলা

একটি সময় ছিল যখন মনে করা হত সুলতানি আমলে চিত্রকলার কোনো চর্চা হত না । ইসলামে ছবি আঁকা নিষিদ্ধ ছিল । বর্তমানে এই ধারণা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে । আসলে ভারতে ইসলামের আর্বিভাবের ফলে যে সমন্বয়ী প্রক্রিয়ার সূত্রপাত হয়েছিল, তা ভারতের সংস্কৃতিকে গভীরভাবে ...

সুলতানি যুগের স্থাপত্য

দিল্লির কুতুবমিনার (Qutb Minar) হল এয়োদশ শতকের মুসলিম স্থাপত্যের সবচেয়ে বড় নিদর্শন । সুফি সাধক কুতুবউদ্দিন বখতিয়ার কাকির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল । কুতুবমিনারের নির্মাণ কার্য শুরু করেন কুতুবউদ্দিন আইবক এবং সম্পূর্ণ হয় ইলতুৎমিসের আমলে । ...

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ :

ফার্গুসনের মতে, সুলতানি স্থাপত্যের প্রকৃতি ছিল ইন্দো-স্যারাসিনিক (Indo-Saracenic) বা পাঠান । আবার হ্যাভেলের মতে, এই শিল্পরীতির ‘দেহ ও আত্মা’ ছিল ভারতীয় । আসলে সুলতানি যুগের স্থাপত্য প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরী

সুলতানি যুগে আঞ্চলিক ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ

সুলতানি ও মুঘল আমল ছিল বাংলা সাহিত্যের সুবর্ণময় যুগ । বিখ্যাত বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাস সম্ভবত চতুর্দশ শতকের শেষ দিকে বীরভূম জেলার নানুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন । সমকালীন কবি বিদ্যাপতি মিথিলার অধিবাসী হলেও আদতে বাংলার কবি বলেই স্বীকৃত ছিলেন । ...