প্রাচীন ভারতের সামাজিক রূপান্তর

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 22:42

প্রাচীন ভারতের সামাজিক রূপান্তর (Social transformation in ancient India) :

আর্যরা প্রথমে যাযাবর জীবনযাপন করত । তাদের প্রধান উপজীবিকা ছিল পশুপালন ও খাদ্য সংগ্রহ । যেহেতু তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াত তাই তারা কৃষিকাজ বা চাষবাস করত না । তারা খাদ্য-উৎপাদকের ভুমিকা পালন করত না, বরং খাদ্য-সংগ্রাহকের ভূমিকা পালন করত । পরবর্তী কালে তারা গ্রাম স্থাপন করে কৃষিকার্যকে উপজীবিকা হিসাবে গ্রহণ করেছিল । বৈদিক সমাজ ছিল মূলত গ্রামকেন্দ্রিক ও কৃষিভিত্তিক । গ্রামকেন্দ্রিক এই সমাজব্যবস্থায় প্রথমে জমি ছিল যৌথ সম্পত্তি । কিন্তু আর্যদের উপজাতীয় জীবনের রূপান্তরের ফলে জমি ধীরে ধীরে বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায় । এই ভাবে ব্যক্তি সম্পত্তির উদ্ভব ঘটে । ব্যক্তিগত মালিকানার অনিবার্য পরিণতি ছিল উত্তরাধিকার সমস্যা ও জমিকে কেন্দ্র করে বিরোধ । আবার কৃষির প্রসারের অনিবার্য পরিণতি ছিল ব্যবসাবাণিজ্য । গাঙ্গেয় উপত্যকায় জঙ্গল পরিষ্কার করবার ফলে নদীতীর ধরে অসংখ্য বসতি গড়ে উঠতে থাকে । এই বসতিগুলি ক্রমে বাণিজ্যকেন্দ্রে রূপান্তরিত হতে থাকে । সম্পন্ন কৃষকেরা তাদের জমিজমা অন্যদের দিয়ে চাষ করিয়ে ক্রমশ ব্যবসাবাণিজ্যের দিকে ঝুঁকতে থাকে । প্রথমে বাণিজ্যিক কার্যকলাপ আঞ্চলিক সীমার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল । এরপর ক্রমশ তার পরিধি বিস্তৃত হতে থাকে । এভাবে গ্রামকেন্দ্রিক আর্যসমাজের রূপান্তর ঘটতে থাকে । খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে, গৌতম বুদ্ধের সময় আর্য সমাজে আদিম উপজাতি ধনী বণিক সম্পপ্রদায় ও শিক্ষিত মানুষের সহাবস্থান দেখা যায় । এই সময় গ্রাম ছিল স্বশাসিত । গ্রামবাসীরা নিজেদের কর ব্যবস্থা, শিক্ষা, জনকল্যাণ এবং বিরোধের নিষ্পত্তি নিজেরাই করে নিত । গ্রামে আমোদপ্রোমদ, গানবাজনা, নাটক, পশুর লড়াই, যাদু, শারীরিক কসরত প্রদর্শন প্রভৃতি নিয়ে মানুষের অবসর সময় কাটত । জুয়া, মদ ও অসামাজিক জীবনযাত্রা গ্রামজীবনকে কলুষিত করেছিল ।

*****

Related Items

সুলতানা রাজিয়া (Razia)

ইলতুৎমিসের মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন । রাজিয়া ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ইলতুৎমিসের পুত্ররা অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় ইলতুৎমিস নিজেই কন্যা রিজিয়াকে দিল্লির সুলতান পদে মনোনীত করেন । তাঁর সিংহাসন লাভ ...

ইলতুৎমিস (Iltutmish)

দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলতুৎমিস । তিনি ১২১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । কুতুবউদ্দিন তাঁকে ক্রীতদাস হিসাবে ক্রয় করেন । পরে তাঁর প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বদাউনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন ও নিজ কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন । ...

কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutb-ud-din Aibak)

১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মহম্মদ ঘুরিকে পরাস্ত করেন । পরের বছর অর্থাৎ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত নিহত করে দিল্লী ও আজমীর দখল করেন ...

সুলতানি আমল (Delhi Sultanate)

সুলতানি আমলে পর পর পাঁচটি রাজবংশ দিল্লির সিংহাসনে ক্ষমতাসীন ছিল । সেই পাঁচটি রাজবংশ হল - ইলবেরি তুর্কি বংশ বা দাসবংশ, খলজি বংশ, তুঘলক বংশ, সৈয়দ বংশ, লোদী বংশ। সুলতানি আমলে বলপূর্বক ও হত্যা করে সিংহাসন দখল করা ছিল অতি স্বাভাবিক ঘটনা ...

মহম্মদ ঘুরি (Muhammad Ghori)

আফগানিস্তানের গজনী ও হিরাটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ঘোর রাজ্য । সেই সময় উত্তর ভারতের হিন্দু রাজাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না । এই সব হিন্দু রাজাদের মধ্যে আজমীর ও দিল্লির অধিপতি পৃথ্বীরাজ চৌহান ও কনৌজ-রাজ জয়্চাঁদ ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী ...