প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 10/03/2014 - 11:15

প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণ :

ফার্গুসনের মতে, সুলতানি স্থাপত্যের প্রকৃতি ছিল ইন্দো-স্যারাসিনিক (Indo-Saracenic) বা পাঠান । আবার হ্যাভেলের মতে, এই শিল্পরীতির ‘দেহ ও আত্মা’ ছিল ভারতীয় । আসলে সুলতানি যুগের স্থাপত্য প্রাচীন ভারতীয় শিল্পরীতি ও মুসলিম শিল্পরীতির সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে । অবশ্য এই সংমিশ্রণে কার অবদান কতটুকু তা বলা সম্ভব নয় । ভারতে তুর্কি সুলতানরা যে মুসলিম শিল্পরীতি আমদানি করেছিলেন, তাও আবার পশ্চিম ও মধ্য এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপীয় শিল্পরীতির সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছিল । সুতরাং এইসব বিভিন্ন শিল্পরীতির সঙ্গে ভারতীয় শিল্পরীতির মিশ্রণ ঘটিয়ে সুলতানদের ব্যক্তিগত রুচি ও ধর্মীয় চাহিদার ফলস্বরূপ যে নতুন শিল্পরীতি গড়ে উঠেছিল, তাকেই আমরা সুলতানি যুগের শিল্পরীতি বলতে পারি ।

ভারতীয় এবং মুসলিম শিল্পের সমন্বয়ের কারণ : সুলতানি আমলে এই সংমিশ্রণের কয়েকটি কারণ ছিল ।

(১) নির্মাণ কার্যে মুসলমান শাসকরা ভারতীয় শিল্পী ও কারিগরদের নিযুক্ত করতে বাধ্য হন । 

(২) অনেক সময় হিন্দু ও জৈন মন্দির ভেঙ্গে সেই সমস্ত মালমসলা দিয়ে অথবা সেই মন্দিরকেই সামান্য রদবদল করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল ।

(৩) কয়েকটি ক্ষেত্রে উভয় শিল্পরীতির মধ্যে তফাত থাকলেও দু-একটি ক্ষেত্রে মিলও ছিল । যেমন— মন্দির ও মসজিদ উভয় ক্ষেত্রেই সামনে খোলা চত্বর থাকত আর চারপাশে সারিবদ্ধভাবে ঘরদোর থাকত । উভয় শিল্পরীতিতেই অলংকরণের ওপর জোর দেওয়া হত, যদিও অলংকরণের পদ্ধতি এক ছিল না । ভারতীয় শিল্পরীতিতে মানুষ ও জীবজন্তুর মুর্তি মুদ্রিত হত । মুসলিম শিল্পরীতিতে লতাপাতা, জ্যামিতিক চিত্র প্রভৃতি দিয়ে নকশা করা হত । কোরানের পঙক্তিগুলিকে আরবি হরফে কায়দা করে লিখে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হত ।

*****

Related Items

ইলতুৎমিস (Iltutmish)

দিল্লি সুলতানির প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ইলতুৎমিস । তিনি ১২১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । কুতুবউদ্দিন তাঁকে ক্রীতদাস হিসাবে ক্রয় করেন । পরে তাঁর প্রতিভায় আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে বদাউনের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন ও নিজ কন্যার সঙ্গে বিবাহ দেন । ...

কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutb-ud-din Aibak)

১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মহম্মদ ঘুরিকে পরাস্ত করেন । পরের বছর অর্থাৎ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বীরাজকে পরাজিত নিহত করে দিল্লী ও আজমীর দখল করেন ...

সুলতানি আমল (Delhi Sultanate)

সুলতানি আমলে পর পর পাঁচটি রাজবংশ দিল্লির সিংহাসনে ক্ষমতাসীন ছিল । সেই পাঁচটি রাজবংশ হল - ইলবেরি তুর্কি বংশ বা দাসবংশ, খলজি বংশ, তুঘলক বংশ, সৈয়দ বংশ, লোদী বংশ। সুলতানি আমলে বলপূর্বক ও হত্যা করে সিংহাসন দখল করা ছিল অতি স্বাভাবিক ঘটনা ...

মহম্মদ ঘুরি (Muhammad Ghori)

আফগানিস্তানের গজনী ও হিরাটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ছিল ঘোর রাজ্য । সেই সময় উত্তর ভারতের হিন্দু রাজাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না । এই সব হিন্দু রাজাদের মধ্যে আজমীর ও দিল্লির অধিপতি পৃথ্বীরাজ চৌহান ও কনৌজ-রাজ জয়্চাঁদ ছিলেন সবচেয়ে শক্তিশালী ...

সুলতান মামুদ (Sultan Mahmud of Gazni)

মহম্মদ বিন কাশিমের সিন্ধু জয়ের ৩০০ বছর বাদে ১০০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১০২৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে গজনির সুলতান মামুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেন । সুলতান মামুদ একজন লোভী, লুন্ঠনকারী, রূপেই পরিচিত । ভারতে রাজ্য স্থাপনের কোনো ইচ্ছা তার ছিল না । ইসলাম ধর্মের প্রসার ...