প্রতিবাদী আন্দোলন (Protest Movement)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 10:49

প্রতিবাদী আন্দোলন (Protest Movement) :

খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে প্রচলিত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি অনেক মানুষ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও আস্থা হারিয়ে ফেলে । ফলে এই শতাব্দীতে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধে কয়েকটি প্রতিবাদী আন্দোলন ঘটে এবং নতুন নতুন ধর্মমতের উদ্ভব হয় । এর মধ্যে বৌদ্ধধর্ম ও জৈনধর্ম প্রধান ।

(ক) প্রতিবাদী আন্দোলনের কারণ (Causes of Protest Movements) :

(১) ধর্মীয় কারণ (Religious Cause) : যে-কোনো প্রতিবাদী ধর্ম আন্দলনের প্রাথমিক শর্ত হল মূল ধর্মের প্রতি মানুষের অশ্রদ্ধা এবং এই অশ্রদ্ধার কারণ মূল ধর্মমত থেকে বিচ্যুতি । বিগত প্রায় এক হাজার বছরে বৈদিক যুগের অনাড়ম্বর ও সরল ধর্মমত বিকৃত রূপ ধারণ করে আচার সর্বস্ব বাহ্যিক আড়ম্বরে পরিণত  হয় । ব্রাহ্মণের প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব অনেকেই মেনে নিতে পারেনি । জাতিভেদের কঠোরতা মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল । কিন্তু কেবল মাত্র ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অধঃপতনের মধ্যে প্রতিবাদী ধর্ম আন্দলনের উৎস অনুসন্ধান করা অনুচিত । সমাজকে বাদ দিয়ে ধর্ম টিকতে পারে না । কিন্তু ধর্ম যখন মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে, তখন মানুষ তার বিধিনিষেধ মানতে চায় না ।

(২) সামাজিক কারণ (Social Cause) : খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকের প্রতিবাদী আন্দলনের পিছনে ব্যাপকতর সামাজিক ও অর্থনৈতিক কারণ ছিল । বিগত হাজার বছরে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতিতে যে সব পরিবর্তন ঘটেছিল, ব্রাহ্মণ্য ধর্ম তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি । এই সময়ের মধ্যে বৈদিক সমাজের ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের অবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছিল । আর্যসভ্যতা পূর্ব-ভারতে ছড়িয়ে পড়েছিল । আর্য-অনার্য সংঘাত ঘটেছিল । গড়ে উঠেছিল অসংখ্য ছোট-বড়ো রাজ্য । তাদের মধ্যে বিবাদ-বিসম্বাদ লেগেই ছিল । এই অবস্থায় ক্ষত্রিয়দের শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছিল । মানুষ তাদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিল । লক্ষ করার বিষয়, জৈন ধর্মের প্রবক্তা মহাবীর ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম বুদ্ধ উভয়েই ছিলেন ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ভুক্ত ।

(৩) অর্থনৈতিক কারণ (Economic Cause) : এদিকে কৃষির উন্নতি, শিল্পের বিকাশ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার অর্থনৈতিক জীবনেও কয়েকটি পরিবর্তন এনেছিল । লোহার লাঙল বলদের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে জমি চাষ করা হত । এর ফলে বলদের চাহিদা বাড়ে । কিন্তু যাগযজ্ঞে বহু বলদ বলি দেওয়া হত বলে চাষবাসের জন্য বলদ জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ত । বৌদ্ধ ও জৈন উভয় ধর্মেই অহিংসার ওপর জোর দেওয়ার কারণ একটাই, চাষের জন্য বলদের জোগান অব্যহত রাখা । অন্যদিকে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের ফলে সমুদ্র যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ও সুদের কারবারের ওপর বিধিনিষেধ বণিক সম্প্রদায় ও শ্রেষ্ঠীদের অসুবিধার সৃষ্টি করেছিল । এর ফলে ব্যবসাবাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল । এই অসুবিধা দূর করার জন্য দলে দলে শ্রেষ্ঠী ও বণিকরা বৌদ্ধ ও জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছিল । ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের ফলে বৈশ্যদের অর্থ ও প্রতিপত্তি দুইই বেড়েছিল । তারা ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য মানতে প্রস্তুত ছিল না । শুদ্ররা ছিল অত্যাচারিত ও অবহেলিত । দরিদ্র এই মানুষগুলির  ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রতি বিন্দুমাত্র মোহ ছিল না । এদের মধ্যে অনেকেই পরে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিল ।

(খ) জৈনধর্মের উত্থান ও আদর্শ (Rise and Doctrine of Jainism) :

(১) জৈনধর্মের প্রবক্তা (Vardhamana Mahavira) : মহাবীরকে জৈন ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা বলে মনে করা হলেও তাঁর আগে ২৩ জন প্রচারক বা তীর্থংকর ছিলেন । প্রথম তীর্থংকর ছিলেন ঋষভদেব । প্রথম ২২ জন তীর্থঙ্কর সম্পর্কে কিছু জানা না গেলেও ২৩ তম তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ । প্রকৃত অর্থে তিনি ছিলেন জৈনধর্মের  প্রতিষ্ঠাতা । কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে মহাবীরই জৈনধর্মের আদর্শগুলিকে সুস্পষ্ট রূপদান করেন ও সংগঠিত ভাবে তা প্রচার করেন । তিনি মাত্র ৩০ বছর বয়সে সংসার ত্যাগ করে ১২ বছর কঠোর তপস্যা করেন । এর পর তিনি ‘কৈবল্য’ বা সত্যজ্ঞান অর্জন করেন । তখন থেকে তিনি ‘জিন’ বা বিজয়ী নামে পরিচিত হন এবং ‘নির্গ্রন্থ’ নামে এক ধর্ম সম্প্রদায়ের প্রধান হিসেবে পরিচিত হন । এরাই পরে জৈন নামে অভিহিত হয় ।

(২) জৈন ধর্মগ্রন্থ ও আদর্শ (Teachings of Mahavira) : জৈনদের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম হল ‘দ্বাদশ অঙ্গ’ বা সিদ্ধান্ত । জৈন ধর্মমত বলতে কেবল মাত্র মহাবীরের বাণী বোঝায় না । তিনি জৈনধর্মের আদর্শগুলিকে সংকলিত ও সংঘবদ্ধ করেন । তবে এর মধ্যে তাঁর নিজস্ব চিন্তাও যুক্ত হয়েছিল । তিনি পার্শ্বনাথের চারটি নীতি বা ‘চতুর্যাম’— অহিংসা, সত্যবাদিতা, বিষয় সম্পত্তি সম্পর্কে অনাসক্তি ও চৌর্যবৃত্তি থেকে বিরত থাকার সঙ্গে ব্রহ্মচর্য নীতি যুক্ত করেন । এই পাঁচটি নীতিকে একত্রে বলা হয় ‘পঞ্চ মহাব্রত’। সর্বপ্রকার ত্যাগ, এমনকি পরিধেও বস্ত্র পরিত্যাগও ছিল দিগম্বর জৈন ধর্মের আদর্শ । সৎজ্ঞান, সৎবিশ্বাস ও সৎআচরণই আত্মার মুক্তির একমাত্র পথ । এগুলি ত্রিরত্ন নামে পরিচিত । আত্মার মুক্তির অর্থ ‘সিদ্ধশিলা’, অর্থাৎ, জন্মান্তর থেকে অব্যাহতি । এর জন্য কোনো ধর্মীয় প্রথা বা আচার অনুষ্ঠানের প্রয়োজন নেই । জ্ঞান ও কর্মই আত্মার মুক্তির পথ । জৈনরা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না । তারা জাতিভেদও মানে না । জৈন ধর্মে অহিংসার ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে । জৈনরা মনে করেন অচেতন পদার্থেরও প্রাণ আছে । পরবর্তীকালে জৈনরা দিগম্বর ও শ্বেতাম্বর— এই দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে যায় ।

(৩) জৈনধর্মের প্রসার (Spread of Jainism and its Extension) : মহাবীরের বাণী প্রথমে গাঙ্গেয় উপত্যকায় প্রচারিত হলেও পরে তা পশ্চিম ভারত, উত্তর ভারতের কিছু অংশ ও দক্ষিণ মহীশূরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে । কৃষক সম্প্রদায় জৈনধর্মে খুব বেশি আকৃষ্ট না হলেও বণিক ও ব্যাবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে তা ব্যাপক ভাবে গৃহীত হয়েছিল । জৈনধর্মে সম্পত্তির প্রতি আসক্তির নিন্দা করা হয়েছে । কিন্তু সম্পত্তি বলতে জৈনরা জমিজমা বুঝত, টাকাকড়ি নয় । তাই ব্যবসায়ীদের পক্ষে জৈনধর্ম গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা হয়নি ।

(গ) বৌদ্ধধর্মের উত্থান ও আদর্শ (Rise and Doctrine of Buddhism) :

(১) গৌতম বুদ্ধের জীবন (The early life of Gautama Buddha) : গৌতম বুদ্ধ ছিলেন মহাবীরের সমসাময়িক । তাঁর জন্ম হয়েছিল ক্ষত্রিয় বংশে । জরা, বার্ধক্য ও মৃত্যুর দৃশ্য দেখে তিনি জাগতিক সুখের অসারতা উপলব্ধি করেন । কিন্তু এক শান্ত, সৌম্য সন্নাসীকে দেখে তিনি শান্তিলাভ করেন । সংসারের বন্ধন ত্যাগ করে তিনি মাত্র ২৯ বছর বয়সে গৃহ ত্যাগ করেন এবং গয়ার কাছে উরুবিল্ব নামক স্থানে কঠোর তপস্যায় ব্রতী হন । সেই সময় তাঁর শরীর ভেঙে পড়লে সুজাতা নামে এক গোপকন্যা তাঁকে পায়েস দিলে তিনি তা খেয়ে শরীরে শক্তি ফিরে পান । তারপর তিনি নীলাঞ্জনা নদীতে স্নান করে বর্তমান বুদ্ধগয়ার কাছে একটি পিপুল গাছের নীচে সাধনা করে বোধি লাভ করেন । এরপর থেকেই তিনি ‘বুদ্ধ’ নামে পরিচিত হন । বুদ্ধদেব তাঁর ধর্মমত প্রথম প্রচার করেন সারনাথের কাছে মৃগদাবে । একে বলা হয় ধর্মচক্র প্রবর্তন । তাঁর প্রিয় পাঁচ শিষ্য এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন । এরপর তিনি অযোধ্যা, বিহার ও সন্নিহিত অঞ্চলে তাঁর বাণী প্রচার করেন ।

(২) বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ (The Buddhist Scriptures) : বৌদ্ধধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থের নাম হল ত্রিপিটক ।  এটি পালি ভাষায় রচিত । বৌদ্ধধর্মের মূল আদর্শ ও নীতিগুলি লিপিবদ্ধ হয়েছে বৌদ্ধ শাস্ত্র- সুত্তপিটক ও অভিধম্ম পিটকে । আর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পালনীয় কর্তব্যগুলি লিপিবব্ধ হয়েছে বিনয় পিটকে । তবে এর মধ্যে তাঁর শিষ্যদের বাণীও সংকলিত হয়েছে ।

(৩) বুদ্ধের ধর্মমত (Teachings of Goutam Buddha) : বুদ্ধের চিন্তাধারা ছিল সহজ ও সরল । তার মূল উদ্দেশ্য ছিল মানুষকে দুঃখ-দুর্দশার হাত থেকে রক্ষা করে মুক্তির পথ দেখানো । তিন চারটি আর্য-সত্যের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ।

(১) জীবনে দুঃখ অনিবার্য;

(২) সুখতৃষ্ণা, ভবতৃষ্ণা (অর্থাৎ, পুনর্জন্মের আকাঙ্ক্ষা) ও বিভবতৃষ্ণা হচ্ছে দুঃখের কারণ;

(৩) বাসনা কামনার ধ্বংশই হচ্ছে দুঃখ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র পথ ও

(৪) আসক্তি ধ্বংশ করতে হলে সঠিক পথ বা মার্গ অনুসরণ করতে হবে ।

সেই মার্গ হল অষ্টাঙ্গিক মার্গ— (১) সৎবাক্য,  (২) সৎকার্য, (৩) সৎজীবন, (৪) সৎচেষ্টা, (৫) সৎচিন্তা, (৬) সৎদৃষ্টি, (৭) সৎসংকল্প এবং (৮) সম্যক সমাধি । বুদ্ধ মনে করতেন জীবনের প্রধান লক্ষ্য নির্বাণ । নির্বাণ মানে মোক্ষ বা মুক্তি । অর্থাৎ, কামনা-বাসনা ও সুখ-দুঃখের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে । যতদিন কামনা-বাসনা থাকবে ততদিন মুক্তির সম্ভাবনা নেই । এই জন্যই মানুষের পুনর্জন্ম হয় । নির্বাণ লাভ করলে এর থেকে চির মুক্তি পাওয়া সম্ভব । নির্বাণ বলতে কেবল দুঃখ এবং আসক্তির অবসান বোঝায় না । নির্বাণ মানুষকে এক নিরন্তর আনন্দ ও শান্তির জগতে নিয়ে যায় । নির্বাণ লাভের পথও সহজ নয় । এর জন্য কতগুলি কঠিন স্তর অতিক্রম করতে হয় ।

গৌতম বুদ্ধ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দিহান ছিলেন । যাগযজ্ঞ ও আচার অনুষ্ঠানেও তাঁর বিশ্বাস ছিল না । বেদের অভ্রান্ততা তিনি স্বীকার করতেন না । ব্রাহ্মণের প্রাধান্যও তিনি স্বীকার করতেন না । তবে সমাজে তাদের যে একটি বিশেষ স্থান আছে তা তিনি স্বীকার করতেন । সাধারণ মানুষের মুক্তির জন্য তিনি অষ্টাঙ্গিক মার্গ ছাড়া আরও কয়েকটি নৈতিক অনুশাসনের ওপর জোর দিয়েছিলেন । তাঁর প্রদর্শিত পথ ছিল মধ্যপন্থা বা মাঝামাঝি পন্থা । ভোগ-বিলাস, ও অতিরিক্ত কৃচ্ছ্র সাধন— কোনোটিই কাম্য নয় বলে তিনি মনে করতেন । অহিংসা ও সত্যবাদিতা, ব্রহ্মচর্য, পরদ্রব্য চুরি না করা, পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা, পশুবলি না দেওয়া প্রভৃতি উপদেশ তিনি দিতেন । এগুলিকে বলা হত শীল । পরবর্তী পদক্ষেপ ছিল সম্বোধি ও প্রজ্ঞা । সবশেষে নির্বাণ । তিনি কর্মফলে বিশ্বাস করতেন ।

(৪) বৌদ্ধধর্মের প্রভাব (Impact of Buddhism) : বুদ্ধদেবের সহজ সরল মতাদর্শ আধারণ মানুষকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল । সমাজের নিম্নবর্গের বহু মানুষ এই ধর্ম গ্রহণ করেছিল । সাধারণ মানুষের বোধগম্য ভাষায় এই ধর্ম প্রচার করা হত । পরবর্তীকালে এই ধর্ম ‘হীনযান’ ও ‘মহাযান’ -এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় । যতদিন বৌদ্ধধর্ম রাজানুগৃহীত ছিল, ততদিন বৌদ্ধধর্ম ভারতে প্রচলিত ছিল । কিন্তু পরে তা ক্রমশ অবলুপ্ত হতে থাকে । বর্তমানে ভারতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা সামান্য । কিন্তু মূলত রাজর্ষি অশোক ও কণিষ্কের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ধর্ম ভারতের বাইরে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছিল । বর্তমানে শ্রীলঙ্কা, চিন, ব্রহ্মদেশ, জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি দেশে বৌদ্ধধর্ম প্রচলিত আছে । 

*****

Related Items

মুঘল যুগে ওলন্দাজ বণিকদের কার্যকলাপ

সপ্তদশ শতকের গোড়া থেকেই ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকেরা এশীয় বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করতে থাকে । গোড়ার দিকে এরা পর্তুগিজদের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়াতে ইন্দোনেশিয়া ও পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী ছিল । কিন্তু এরা অচিরেই বুঝতে পারে যে, মশলা ...

মুঘল যুগে পর্তুগিজ বণিকদের কার্যকলাপ

১৪৯৭-৯৮ খ্রীষ্টাব্দে যখন পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করেন, তখন সেই ঘটনার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করার ক্ষমতা ভারতবাসীর ছিল না । ভাস্কো-দা-গামা মালাবার উপকূলে কালিকট বন্দরে অবতরণ করার পর থেকেই ইউরোপের সঙ্গে ...

মুঘল যুগে ভারতের বহির্বাণিজ্য

বহির্বিশ্বে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্যিক লেনদেন ছিল । বিদেশী বণিকরা যেমন ব্যবসার জন্য ভারতে আসত, তেমনই ভারতীয় বণিকেরা, বিশেষত গুজরাটিরা বহির্বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত । ভারত থেকে বস্ত্র, গোল মরিচ, নীল ও অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত । ভারতে আমদানি হত ...

মুঘল যুগে ভারতের আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য

মুঘল আমলে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায়, রাস্তাঘাট ও সরাইখানা নির্মাণ এবং পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আভ্যন্তরীণ ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল । তা ছাড়া উন্নত মুদ্রানীতি এবং নগদে বেতন প্রদানের ফলে একদিকে যেমন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টাকা ...

মুঘল যুগে ভারতের অকৃষি নির্ভর শিল্প

অকৃষি শিল্প উৎপাদনের একটা বড় অংশ ছিল বিলাসদ্রব্য । সাধারণ মানুষের চাহিদা কম ছিল । বিলাসদ্রব্য নির্মাণের জন্য সরকারি কারখানা বা কর্মশালা ছিল । তবু তার বেশির ভাগ তৈরি হত স্বাধীন কারিগর ও শিল্পীর বাড়িতে । রান্নাবান্না ও ঘর গেরস্থালীর কাজে লোহা ও তামার তৈরি জিনিসপত্র ...