আর্যদের পরিচয় (Coming of The Aryans)

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 04/17/2012 - 10:42

আর্যদের পরিচয়  (Coming of The Aryans)

আর্যদের পরিচয় ইতিহাসের একটি জটিল সমস্যা । এঁদের পরিচয় এখনও রহস্যাবৃত । একটি মত অনুসারে আর্য বলতে একটি বিশিষ্ট ভাষাগোষ্ঠির মানুষকে বোঝায় । অন্য মত অনুযায়ী আর্য কথাটি জাতি অর্থে ব্যবহার করা উচিত । বর্তমানে প্রথম মতের সমর্থকদের সংখ্যা বেশি হলেও, দ্বিতীয় অভিমতটি পুরোপুরি পরিত্যক্ত করা হয়নি ।

আর্যদের আদি বাসস্থান কোথায় ছিল বা আর্যরা বহিরাগত না ভারতেই আধিবাসী এ প্রশ্নকে কেন্দ্র করেও পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ আছে ।

(১) ভারতীয় পণ্ডিতগণ যেমন— গঙ্গানাথ ঝাঁ, ত্রিবেদ, কাল্লা, এ.সি. দাস, পুসলকার প্রমুখ মনে করেন ভারতই আর্যদের আদি বাসস্থান, যদিও ভারতের কোন অঞ্চলে তারা বসবাস করত তা নিয়েও বিতর্ক আছে ।

(২) দ্বিতীয় মত অনুসারে গাইলস্‌, হার্ট ইত্যাদি ইউরোপীয় পণ্ডিতগণ মনে করেন ইউরোপই আর্যদের আদি বাসস্থান । এ ক্ষেত্রেও ইউরোপের কোন অঞ্চলে তারা বসবাস করত, তা নিয়েও মত পার্থক্য আছে ।

(৩) তৃতীয় একটি মত অনুসারে (ব্রান্ডেনস্টিয়েন) মধ্য এশিয়ায় স্তেপি অঞ্চলেই ছিল আর্যদের আদি নিবাস এবং এখান থেকেই তাদের একটি শাখা ইউরোপে ও অপর একটি শাখা পারস্য হয়ে ভারতে প্রবেশ করে । বর্তমানে তৃতীয় অভিমতই অধিকাংশ পণ্ডিত গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন ।

আর্যদের বসতি বিস্তার : আর্যরা প্রথমে সপ্ত সিন্ধু অঞ্চলে (পাঞ্জাবের পাঁচটি নদী এবং সিন্ধু ও সরস্বতী উপত্যাকা; অর্থাৎ, কাশ্মীর, পাঞ্জাব ও সিন্ধু সহ উত্তর-পশ্চিম ভারতে বসবাস করত । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ও যাযাবর বৃত্তি পরিত্যাগ করে কৃষিকার্যকে উপজীবিকা হিসাবে গ্রহণ করার পর তারা পূর্ব দিকে গঙ্গা-যমুনা বিধৌত অঞ্চলে বন কেটে বসতি স্থাপন করে । এই ভাবে বৈদিক যুগের শেষে তারা বিহার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে । পরে তারা বিন্ধ্য পর্বত অতিক্রম করে দক্ষিণ ভারতের দিকেও অগ্রসর হয় ।

ঋকবেদের আলোকে আর্য জনজীবন (Life of the People as reflected in the Vedic Literature) :

রাজনৈতিক জীবন  (Political Life of The Aryans) : বৈদিক যুগে কোনো বড়ো রাষ্ট্র বা সম্রাজ্যের উদ্ভব হয়নি । কয়েকটি পরিবার নিয়ে গঠিত হত গ্রাম । কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হত বিশ এবং বিশের সমষ্টিকে বলা হত জন । গ্রামের প্রধান গ্রামনি, বিশের প্রধান বিশপতি এবং জনের প্রধান ছিল গোপা । গ্রাম, বিশ ও জনের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কী ছিল তা বলা কঠিন । সম্ভবত সবার নীচে ছিল গ্রাম এবং জনের স্থান ছিল বিশের ওপরে । বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র প্রচলিত রাষ্ট্র কাঠামো হলেও গণ বা প্রজাতান্ত্রিক শাসনও অজ্ঞাত ছিল না । গণের অধিপতিকে বলা হয় গণপতি বা জ্যেষ্ঠ । রাজার প্রধান কর্তব্য ছিল জনজীবনের নিরাপত্তা বিধান করা ও বহিঃশত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা । গুপ্তচরের মারফত তিনি রাজ্যের খবরাখবর রাখতেন ও দোষীকে শাস্তি দিতেন । ধর্মীয় আচারঅনুষ্ঠান ও উপদেশের জন্য তিনি পুরোহিতের উপর নির্ভর করতেন । তাঁকে সাহায্য করতেন বিভিন্ন কর্মচারী । সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন সেনানি । অশ্বারোহী, পদাতিক ও রথীরা যুদ্ধে অংশ নিলেও সম্ভবত হাতির ব্যবহার ছিল অপ্রচলিত । তির, ধনুক, বর্শা, তরবারি ও কুঠার ছিল প্রধান যুদ্ধাস্ত্র । রাজা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী হলেও জনমত উপেক্ষা করতেন না । বৈদিক যুগে সভা ও সমিতির উল্লেখ পাওয়া যায় । সমিতির অধিবেশনে রাজপুত্র ও জনগণ অংশ নিতেন । সভা ছিল বয়ষ্কদের পরিষদ ।

সামাজিক জীবন (Social Life of The Aryans) :

(১) পারিবারিক জীবন (Family Life) : আর্য সমাজের ভিত্তি ছিল পরিবার । গৃহের অধিপতিকে বলা হত গৃহপতি বা দম্পতি । তিনি দয়াবান ও স্নেহশীল হলেও কিছু কিছু নিষ্ঠুরতার পরিচয় পাওয়া যায় । সাধারণভাবে পরিবারগুলি ছিল যৌথ । পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থায় পুত্র সন্তানের জন্ম ছিল কাম্য । কন্যা সন্তানের যত্ন ও লালনপালনেও কোনো ত্রুটি হত না । তাদের শিক্ষার দিকেও নজর দেওয়া হত । গোপা, অপালা, মমতা, লোপামুদ্রা প্রভৃতি বিদুষী রমণী এই যুগেই আবির্ভূত হয়েছিলেন । উপযুক্ত সময়ে কন্যাদের বিবাহ দেওয়া হত । পণপ্রথা প্রচলিত ছিল । বিবাহ অনুষ্ঠান হত কন্যার পিতৃগৃহে । পুরুষদের মধ্যে বহুবিবাহ প্রচলিত থাকলেও নারীদের মধ্যে তা অপ্রচলিত ছিল । বিধবাবিবাহও প্রচলিত ছিল । সমাজ ও আইনের চোখে নারীরা স্বাধীন ছিলেন না । তাঁরা স্বামীর সহধর্মিণী ছিলেন । তখন পর্দা প্রথার প্রচলন ছিল না । সতীদাহ প্রথা ছিল না । বিধবাবিবাহ নিন্দনীয় ছিল না ।

(২) পোশাক পরিচ্ছদ (Garments) : পোশাক পরিচ্ছদ ও অলংকারে তাদের সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায় । আর্যদের পোশাক তিনভাগে বিভক্ত ছিল, যথা— নিবি বা এক ধরনের অন্তর্বাস, বাস বা পরিধান ও অধিবাস বা দ্রাপি (ওড়না) । এইসব পোশাক তৈরি হত সুতো, পশম ও হরিণের চামড়া দিয়ে । সোনা ও ফুলের তৈরি গহনা আর্যদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল । উৎসবের দিনে নারী পুরুষ উভয়েই পাগড়ি পরত । আর্যরা বড় চুল রাখতে ভালোবাসত ও চিরুনি দিয়ে তা সুবিন্যস্ত করত ।

(৩) খাদ্য (Food Habit) : শস্য, দুধ ও দুধের তৈরি খাবার এবং ফলমূল ছিল আর্যদের প্রধান খাদ্য । গো-মাংসে আর্যদের অরুচি ছিল না । পরে অবশ্য বলদে টান পড়ায় গো-মাংস ভক্ষণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য । আর্যরা কিন্তু নুনের ব্যবহার জানত না । আর্যরা পানীয় জল সংগ্রহ করত নদী ও ঝরনা থেকে । তবে তারা কূপ খনন করতেও জানত । আর্যরা সুরা ও সোমরস পান করত । তবে সুরাপান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য নির্দিষ্ট ছিল ।

(৪) আমোদপ্রমোদ (Recreation) : আর্য সমাজে আমোদপ্রমোদের উপকরণ ছিল পশু শিকার, কুস্তি, পাশা, রথের দৌড়, নাচগান ইত্যাদি । হাতি, সিংহ, বন্য শূকর, হরিণ ইত্যাদি ছিল শিকার করার পশু । আর্যরা এত আনন্দ করতে ভালোবাসত যে, মৃত্যু চিন্তা করত না । মৃত দেহ দাহ করা হত । বৈদিক যুগে সব কিছু ভাল ছিল না । হিংসা, শঠতা, চুরি, ডাকাতি, বৃদ্ধ বাবার সম্পত্তি গ্রাস– এ সব কিছুই ছিল ।

(৫) সামাজিক কাঠাম (Social System) : আর্যসমাজ ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র– এই চার ভাগে বিভক্ত ছিল । এই প্রভেদ ছিল বর্ণগত ও বৃত্তিগত । বংশানুক্রমিক জাতিভেদ প্রথা এ সময় ছিল না । তাই বিয়ে ও মেলামেশার ব্যাপারে কোনো বিধি নিষেধ ছিল না । বৃত্তি পরিবর্তনের সুযোগও ছিল । আর্যসমাজে চতুরাশ্রম প্রচলিত ছিল । ব্রাহ্মন, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যকে ব্রম্ভচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস- এই চারটি আশ্রমের বিধিনিষেধ মেনে চলতে হত । চতুরাশ্রম (Four Stages of Life) ব্যবস্থা আর্যদের সামাজিক জীবনের শৃঙ্খলা ও উচ্চনৈতিক মূল্যবোধের সাক্ষ দেয় ।

আর্যদের অর্থনৈতিক জীবন- (Economic life of the Aryans)

(১) কৃষি ও পশুপালন  (Agriculture and Animal husbandry) : আর্য সভ্যতা ছিল গ্রামীণ সভ্যতা । বৈদিক মন্ত্রে নগরের উল্লেখ পাওয়া যায় না । তবে সামরিক নগর, দুর্গ বা পুরের কথা জানা যায় । আর্যরা ইতস্তত বিক্ষিপ্ত গ্রামে বাস করত বলে তাদের অর্থনীতি ছিল কৃষিনির্ভর । তারা অবশ্য পশুপালনও করত । কর্ষণযোগ্য ভূমিকে বলা হত ভূমি বা উর্বরা । কৃষিতে জলসেচের ব্যবস্থা ছিল । সারের ব্যবহার অজ্ঞাত ছিল না । উৎপন্ন শস্যকে বলা হত ধান বা যব । তবে শব্দ দুটির প্রকৃত অর্থ কী ছিল, তা বলা দুরূহ । কৃষিক্ষেত্র ও বাস্তু জমির ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত ছিল । কিন্তু গোচারণের জন্য খাস জমির ওপর যৌথ মালিকানা ছিল । তবে জমির মালিকানা প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে । গৃহপালিত পশুর মধ্যে গোরু, কুকুর, ছাগল, ঘোড়া ও ভেড়া ছিল প্রধান ।

(২) ব্যবসাবাণিজ্য (Trade and Commerce) : কৃষিকার্য ও পশুপালন ছাড়া আর্যরা ব্যবসাবাণিজ্যও করত । পনি নামে এক শ্রেণীর মানুষ এই কাজে লিপ্ত ছিল । কাপড় ও চামড়া ছিল বাণিজ্যের প্রধান উপকরণ । বিনিময় প্রথার মাধ্যমে ব্যাবসাবাণিজ্য চলত । গো-ধন ছিল বিনিময়ের মাধ্যম । অবশ্য এই যুগে ‘নিষ্ক’ ও ‘মনা’ নামে ধাতব মুদ্রার কথা জানা যায় । স্থলপথে ঘোড়ায় টানা রথ ও বলদচালিত গাড়ির উল্লেখ পাওয়া যায় । সমুদ্রপথে ব্যবসাবাণিজ্য চলত কিনা, তা নিয়ে ঐতিহাসিকরা একমত নন ।

(৩) শিল্প (Crafts) : আর্যদের প্রধান শিল্পকর্মের মধ্যে ছিল মৃৎশিল্প, বস্ত্রবয়ন শিল্প, চর্মশিল্প । কারিগররা রথ, নৌকা, বাড়ি তৈরি করা ছাড়াও সূক্ষ খোদাই করা পাত্র তৈরি করত । কামারেরা লোহা দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও যন্ত্রপাতি তৈরি করত । স্যাকরা তৈরি করত সোনার গয়না ।

আর্যদের ধর্মজীবন (Religious life of the Ariyans) : আর্যরা কোনো মূর্তিপূজা করত না । বৈদিক যুগে ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য একেশ্বরবাদ । তারা ছিল প্রকৃতির উপাসক । প্রাকৃতিক শক্তিকে তারা দেবতারূপে কল্পনা করত । আর্যদের দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্র (বজ্রের দেবতা), অগ্নি, বরুন (বৃষ্টির দেবতা), সোম প্রভৃতি ছিল প্রধান । দেবীর মধ্যে পৃথিবী, অদিতি, সরস্বতী ও উষা ছিলেন সবিশেষ উল্লেখযোগ্য । আর্য ধর্মের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল পুরুষ দেবতার প্রাধান্য । আর্যদের দেবদেবীর সংখ্যা অনেক হলেও তারা মনে করত সকল দেবতা একই মহাশক্তির বিভিন্ন প্রকাশ । যাগযজ্ঞ ও আহুতি বা অঞ্জলি প্রদান ছিল আর্যধর্ম আচরণের প্রধান অঙ্গ । যজ্ঞে মন্ত্র উচ্চেরণ করে ঘি, দুধ, চাল, মাংস ও সোমরস উৎসর্গ করা হত । যজ্ঞে পৌরহিত্যের কাজ করতেন ব্রাহ্মণরা । পরলোক তত্ত্ব সম্পর্কে আর্যদের ধারণার কোনো সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ঋক্‌বেদের স্তোত্রে পাওয়া যায় না । কিছু কিছু স্তোত্র থেকে জানা যায় যে, আর্যদের ধারনা ছিল মৃত্যুর পর মানুষ যমালয়ে বাস করে ।

পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্য জনজীবনে পরিবর্তন (The Later Vedic Age) : পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যজীবনে কয়েকটি পরিবর্তন ঘটেছিল ।

(ক) রাজার ক্ষমতা (Power of the Kings) : পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল । এমনকি তাঁরা ব্রাহ্মণদের বিতাড়িত করতে পারতেন । এই সময় তারা রাজসূয়, বাজপেয় ও অশ্বমেধ যজ্ঞ করতেন ‘সম্রাট’ও ‘একরাট’ উপাধি ধারণ করে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতেন । তবে তাঁরা দেশে প্রচলিত আইন মেনে চলতেন ও ব্রাহ্মণদের রক্ষা করতেন । এই সময় শাসনতান্ত্রিক কাঠামো জটিলতর হয়েছিল এবং বিভিন্ন পদের সৃষ্টি হয়েছিল ।

(খ) সামাজিক কাঠামোতে পরিবর্তন (Changes of the Social Stucture) : এই সময়ে সামাজিক জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হল বর্ণাশ্রম প্রথার কঠোরতা । বৈশ্য ও শূদ্রদের তুলনায় ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল । বৃত্তি পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও এই সময় তা সহজসাধ্য ছিল না । শূদ্ররা অপবিত্র বলে গণ্য হত । এই যুগে নারীদের অবস্থারও অবনতি হয়ে ছিল । বাল্যবিবাহের সূত্রপাত হয় । অথর্ব বেদে দুটি সতীদাহের উল্লেখ আছে ।

(গ) অর্থনৈতিক জীবনে পরিবর্তন (Changes in the Economic Life) : এই সময় আর্যদের অর্থনৈতিক জীবনেও কিছু কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল । বেশিরভাগ মানুষ গ্রামে বাস করলেও এই সময় কয়েকটি শহর গড়ে উঠেছিল । কিছু কিছু গ্রামে এই সময় জমিদার শ্রেণির উদ্ভব ঘটেছিল । এই সময় কৃষিব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি ঘটেছিল । বিভিন্ন ধরনের শস্য ও ফলের উৎপাদন শুরু হয় । ব্যবসা-বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটেছিল ।

(ঘ) ধর্ম ও ধর্মীয় আচারে পরিবর্তন (Changes in the Religious Life) : পরবর্তী বৈবিক যুগে যাগযজ্ঞের জটিলতা বৃদ্ধি পায় । সমাজে বিভিন্ন কুসংস্কার ও ডাইনি প্রথার প্রচলন শুরু হয় । একদিকে যেমন পুরোহিত সম্প্রদায়ের প্রাধান্য দেখা যায় এবং ধর্ম আচরণে বিভিন্ন প্রথার ওপর জোর দেওয়া হয়, অন্যদিকে তেমনি দার্শনিকরা পূজা-অর্চনার প্রথাগত দিকটির উপযোগিতা ও কার্যকারিতা সম্পর্কেও প্রশ্ন তোলেন । ঋক্‌বৈদিক যুগের অনেক দেবতা এই সময় গুরুত্বহীন হয়ে পড়েন । এই সময়ে প্রজাপতি ব্রহ্মা, রুদ্র ও বিষ্ণু শ্রদ্ধার সঙ্গে পূজিত হন ।

বৈদিক সাহিত্য (Vedic Literature) : বৈদিক সাহিত্য বলতে মূলত চারটি বেদকে বোঝায়— ঋক্‌, সাম, যজু ও অথর্ব । বেদ কথাটির আক্ষরিক অর্থ জ্ঞান । প্রত্যেক বেদের চারটি ভাগ আছে— সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ । আর্যরা মনে করত বেদ অপৌরুষের, অর্থাৎ, মানুষ্যসৃষ্ট নয় । এই জ্ঞান ঈশ্বর প্রদত্ত । বেদের অপর নাম শ্রুতি, কারণ ঈশ্বর তা মানুষের সরাসরি কর্ণগোচর করেছেন । আচার্য ও শিষ্য পরম্পায় মুখে মুখে বেদ পাঠ করে তা মুখস্ত করতে হত বলেও তাকে শ্রুতি বলে অভিহিত করা হয় । ঋক্‌বেদ সর্বপ্রথম রচিত হয়, ঋক্‌বেদের সম্ভাব্য রচনাকাল ১২০০ - ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ । সব শেষে রচিত হয় অথর্ব বেদ । এতে সৃষ্টি রহস্য, চিকিৎসা, মন্ত্র ইত্যাদি বিবৃত হয়েছে । বেদ ছাড়া বেদাঙ্গ বা স্মৃতিও বৈদিক সাহিত্যের অন্তর্গত । বেদাঙ্গ ছটি ভাগে বিভক্ত— শিক্ষা, কল্প, ব্যাকরণ, নিরুক্ত, ছন্দ ও জ্যোতিষ ।

প্রাচীন ভারতে বাণিজ্যের প্রসার (Expansion of Trade in Ancient India) :

পশুপালন যখন আর্যদের প্রধান উপজীবিকা তখন ব্যাবসাবাণিজ্যের বিশেষ সুযোগ ছিল না । ঋক্‌বেদে ব্যাবসাবাণিজ্য সংক্রান্ত তথ্য তাই খুব বেশি পাওয়া যায় না । তবে ঋক্‌বেদ থেকে জানা যায় যে, অর্থ উপার্জনের তাগিদে বণিকরা দূর দেশে যেত । যাত্রাপথ অবশ্যই দুর্গম ছিল ও দস্যু, চোর, ডাকাতের আশঙ্কা ছিল । তাই যাত্রারম্ভে বণিকরা বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করত । ঋক্‌বেদে ‘পনি’ কথাটি সম্ভবত বণিক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে । তাদের অর্থকরী অবস্থা যথেষ্টই ভালো ছিল; কিন্তু সামাজিক মর্যাদা ছিল না । বণিকরা সামুদ্রিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করত কিনা, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ আছে । ঋক্‌বেদে ‘সমুদ্র’ কথাটি উল্লিখিত হয়েছে । কিন্তু সমুদ্র বলতে কিথ সিন্ধু মোহনার বিপুল জলরাশিকে বুঝিয়েছেন । আবার  ম্যাক্সমুলার, লাসেন ও জিমার তাঁর বিরোধিতা করেছেন । যাই হোক, সমুদ্র আর্যদের কাছে হয়তো অজ্ঞাত ছিল না । কিন্তু বাণিজ্যিক কারণে তারা সমুদ্রে পাড়ি দিত বলে মনে হয় না, কারণ সমুদ্রে পাড়ি দেওয়ার মত উপযুক্ত জলযানের কথা ঋক্‌বেদে উল্লিখিত হয়নি । তা ছাড়া তখন এত বেশি পরিমাণে উৎপাদন হত না যা দিয়ে সামুদ্রিক বাণিজ্য সম্ভব ছিল ।

কিন্তু যখন থেকে চাষবাস শুরু হল, শিল্প ও বিভিন্ন পেশার উদ্ভব হল, তখন থেকে বাণিজ্যেরও প্রসার ঘটল । নদীপথ ধরে ব্যবসা চলত এবং নদীতীরে গড়ে উঠল বাণিজ্য কেন্দ্র । যে সব বড়ো ও সম্পন্ন জমির মালিক অন্যদের দিয়ে জমিজমা চাষ করাত, তারাই ক্রমশ ব্যবসার দিকে ঝুঁকল । কারণ, তাদের হাতেই ছিল প্রচুর ধনসম্পদ ও অখন্ড অবসর । প্রথম প্রথম তারা স্থানীয় অঞ্চলে ব্যবাসা করত । পরে তারা দূরবর্তী অঞ্চলের দিকেও নজর দিল । ব্যবসা চলত বিনিময় প্রথার মাধ্যমে । সাধারণভাবে বৈশ্যরাই ব্যবসাবাণিজ্যের কাজে নিযুক্ত থাকত । পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যে ‘শ্রেষ্ঠী’ কথাটি পাওয়া যায় । শ্রেষ্ঠী কথাটীর অর্থ হল ধনী বণিক । যজুর্বেদের একটি তথ্য থেকে মনে হয় যে, ব্যবসাবাণিজ্য ক্রমশ বংশানুক্রমিক পেশায় পরিণত হচ্ছিল । ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের এটি একটি বড় প্রমাণ । ঋক্‌বৈদিক যুগের তুলনায় সামুদ্রিক বাণিজ্য অধিকতর গুরুত্ব পেয়েছিল । তবে এযুগেও সাগরপাড়ি দেওয়ার উল্লেখ বেদে বিশেষ পাওয়া যায় না । যাতায়াতের পথও খুব সুগম ছিল না । এই যুগে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের আর একটি প্রমাণ হল ‘কুসীদ’ও ‘কুসীদিন’ শব্দ দুটির প্রয়োগ । কুসীদ বলতে বোঝায় ঋণ ও কুসীদিন হল যে ব্রাহ্মণ ঋণ দেয়, অর্থাৎ, সুদের কারবারি । তবে এই সময়েও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রয়োজন বিনিময় প্রথার বদলে ধাতব মুদ্রা প্রচলিত ছিল কিনা, তা বলা কঠিন । তবে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকের পর ধাতব মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়েছিল ।

নগরের উত্থান : হরপ্পা সভ্যতা ছিল নগরকেন্দ্রিক । কিন্তু আর্যরা গ্রামে বসবাস করত । ঋক্‌ বেদে নগরের উল্লেখ খুবই কম । ঋক্‌বেদে নগরকে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে । বলা হত, যাদের গায়ের রং কালো, নাক ভোঁতা এবং অবোধ্য ভাষায় কথা বলে, তারাই নগরে বাস করে । এখানে নগর ধ্বংস করার মধ্যে বীরত্ব ও গৌরব প্রকাশ করা হয়েছে এবং নগর ধ্বংসের বর্ণনাও আছে । ঋক্‌বেদে ইন্দ্রকে ‘পুরন্দর’, অর্থাৎ, পুর বা নগরের ধ্বংসকর্তা হিসাবে সম্মানিত করা হয়েছে ।

পরবর্তী বৈদিক যুগে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের ফলে মধ্য গাঙ্গেও উপত্যকায় নগরের পুনরাবির্ভাব ঘটে । ঋক্‌বৈদিক যুগে আর্যদের নগর সম্পর্কে যে ঘৃণার ভাব ছিল, পরবর্তী বৈদিক যুগে তা অনেকটাই কমে গিয়েছিল । তা সত্ত্বেও এই সময়েও নগরের উল্লেখ ও নগরজীবনের কথা বৈদিক সাহিত্যে বেশি পাওয়া যায় না । আসলে খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতক থেকেই নগরায়ন প্রক্রিয়া ঠিকভাবে শুরু হয় । পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী ও পালি সাহিত্য থেকে এই বিষয়ে বিশদ তথ্য পাওয়া যায় । বৌদ্ধশাস্ত্র অনুসারে বুদ্ধের সময় নগরের সংখ্যা ছিল ষাট । এর মধ্যে ছয়টির নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য । সেগুলি হল— বারাণসী, কৌশাম্বী, চম্পা, রাজগৃহ (রাজগির), শ্রাবস্তী ও কুশিনগর । এর মধ্যে কুশিনগর ছাড়া সব কটিই ছিল কোনো না কোনো মহাজন পদের রাজধানী । সাহিত্যিক উপাদান থেকে প্রাপ্ত এইসব শহরের বিবরণ প্রায় একই রকম । অথাৎ, তা থেকে শহরগুলির মধ্যে কোনটি ছোটো বা বড়ো, কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভৃতি বোঝা মশকিল । তাই আমাদের প্রত্নত্বের ওপর নির্ভর করতে হয় । প্রত্নত্ত্বের সাহায্যে কোনো একটি বিশেষ শহরের বিবর্তন, অর্থাৎ কীভাবে সময়ের সঙ্গে তার আয়তন ও জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল, তা জানা যায় । প্রত্নতত্বের সাহায্যেই আমরা জানতে পেরেছি উত্তর ভারতে প্রাচীনতম নগর প্রাকার ছিল অত্রঞ্জিখেড়ায় । কৌশাম্বীতে আবিষ্কৃত হয়েছে আর একটি বিশাল প্রাকার । মধ্য গাঙ্গেয় উপত্যকার বাইরে দুটি গুরুত্বপূর্ণ নগর হল মালবদেশের অন্তর্গত এরান এবং অবন্তী মহাজনপদের রাজধানী উজ্জয়িনী । অধিকাংশ নগর প্রাকার কাদামাটি বা কাদামাটির ইট দিয়ে তৈরি হত । কিন্তু রাজগৃহের প্রাকার তৈরি হয়েছিল পাথর দিয়ে ।  খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে এই নগরের উদ্ভব ঘটেছিল । নগরগুলি গড়ে ওঠার মূল কারণ ছিল ব্যাপকভাবে লোহার ব্যবহারের ফলে উদবৃত্ত উৎপাদন । অন্তত ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মা এবং ডি. ডি. কোশাম্বি তাই মনে করেন । এরা অবশ্য নগরগুলির উত্থানের জন্য ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার, কারিগরি শিল্পের বিকাশ ও রাজতন্ত্রের ক্ষমতা বৃদ্ধির ভূমিকাও স্বীকার করেছেন । তবে তাঁদের মত সবাই যেমন, অমলানন্দ ঘোষ মেনে নেয় নি । নগরগুলি গড়ে ওঠার আর একটি কারণ হল আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ । এর ফলে ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার ঘটে, যা নগরের উত্থানের সহায়ক হয়েছিল ।

শ্রেণি ও জাতি বিন্যাস : আর্যসমাজ প্রথমে তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল— যোদ্ধা বা অভিজাত, পুরহিত ও সাধারণ মানুষ । জাতিগত কোনো বিভেদ তখন ছিল না । পেশা বংশানুক্রমিক ছিল না । বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বিবাহে কোনো বিধি নিষেধ ছিল না । একত্রে খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও কোনো নিষেধাজ্ঞা ছিল না । সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংগঠন সুদৃঢ় করার জন্যই এই শ্রেণি বিভাগ বা শ্রমভাগ করা হয়েছিল । তবে শ্রেণিগত হিসাবে না হলেও জাতিগত দৃষ্টিকোণে দাসদের থেকে আর্যদের পৃথকীকরণের একটা প্রচেষ্টা দেখা গিয়েছিল । আর্য স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য । গায়ের রং ছিল এর মাপকাঠি । দাসদের গায়ের রং ছিল কালো, আর আর্যদের ফর্সা । সংস্কৃত ভাষায় বর্ণ বলতে গায়ের রংকেই বোঝায় । এভাবে আর্য ও অনার্যদের মধ্যে একটা ভেদ রেখা গড়ে তোলা হয়েছিল । আর্যদের বলা হত দ্বিজ । যারা উপবীত ধারণের অধিকারী তাদের দ্বিজ বলা হত । যোদ্ধা বা অভিজাত (ক্ষত্রিয়), ব্রাহ্মণ (পুরহিত) ও বৈশ্য (বণিক) ছিল দ্বিজ । দাসদের বলা হত শুদ্র । কিন্তু আর্য ও অনার্যদের মধ্যে এই ভেদ সম্পূর্ণরূপে বজায় রাখা সম্ভব ছিল না । ঋক্‌বেদে অবশ্য আর্য-অনার্যের মিশ্রণের কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায় না । কিন্তু যজুর্বেদে আর্য-অনার্যদের যে সংমিশ্রণ প্রক্রিয়া শুরু হয়, ক্রমশ তার বিবর্তন ঘটতে থাকে । তা ছাড়া কৃষির উন্নতি এবং শিল্প ও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের জন্য আর্যদের যে সব পরিবর্তন ঘটে, তার ফলে জাতি ও শ্রেণিগত কাঠামোও পরিবর্তিত হতে থাকে । আর্য বৈশ্যরা ক্রমশ ব্যবসায়ী ও ভূস্বামীতে পরিণত হতে থাকে । শুদ্ররা চাষবাসের কাজে হাত দেয়, তারা ক্রমশ আর্যসমাজে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে । তবে তাদের দ্বিজ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি । ফলে তারা বৈদিক ধর্মের ক্রিয়াকলাপে অংশ গ্রহণের সুযোগ পায়নি বলে নিজেদের দেব-দেবীর উপাসনা করত । অন্যদিকে জাতিভেদ প্রথা বংশানুক্রমিক হয়ে পড়ে । এইভাবে জাতিভেদ প্রথা কঠোর হতে থাকে । তবে শুদ্রদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ ছিল ।

বর্ণ ও জাতিভেদের পাশাপাশি কারিগরি শিল্পের বিকাশ ও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসারের ফলে পেশাগত কয়েকটি শ্রেণির উদ্ভব হয় । যজুর্বেদে এর বিস্তৃত বিবরণ পাওয়া যায় । এই বিবরণে আছে— কামার, কুমোর, মণিকার, তির-ধনুক নির্মাতা, ধীবর, গো-পালক, সুরাকার, হস্তী ও অশ্বপালক, ব্যাধ, শিকারি ইত্যাদি । অথর্ব বেদ থেকে জানা যায় ওই সময় চিকিৎসকের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বাড়ছিল । খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ট শতকে জিবক ছিলেন বিখ্যাত চিকিৎসক । পালি সাহিত্য থেকে আমরা রজকের কথা জানতে পারি । বণিক ও শ্রেষ্ঠীর কথা আগেই বলা হয়েছে ।

আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ফলে খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম ও ষষ্ঠ শতকে যে শ্রেণিবিভাজন দেখা দিল, তার ফলে সমাজ মুষ্টিমেয় ধনী ও অসংখ্য দরিদ্র— এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল । ব্যাপক ধনবৈষম্য দেখা দিল । ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় রইল সমাজের মাথায় । এই দুই শ্রেণিই কায়িক পরিশ্রম থেকে অব্যহতি পেল । কিন্তু সমাজের নীচু তলার মানুষ- চাষাভুষোর দল, মজুর, কারিগর হল অত্যাচার আর অবিচারের শিকার ।

*****

Related Items

মুসলিমদের আগমনে সংঘাত ও সমন্বয়ী প্রক্রিয়া

মুসলমানরা ভারতে একটি সম্পূর্ণ নতুন ও উন্নত ধর্ম চেতনা ও জীবনাদর্শ নিয়ে এসেছিল । দুটি সম উন্নত মানের ধর্ম ও সংস্কৃতি যখন মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়, তখন কাউই কাউকে পুরোপুরি গ্রাস করতে পারে না । প্রাথমিক সংঘাত অনিবার্য । এ ক্ষেত্রে তাই হয়েছিল । হিন্দু-মুসলমান পরস্পর ...

মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ

ঔরঙ্গজেবের আমল থেকেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের লক্ষণগুলি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল । ঔরঙ্গজেব যতদিন বেঁচে ছিলেন ততদিন তাঁর ব্যক্তিগত যোগ্যতার কারণে সাম্রাজ্যের বিশালায়তন অব্যাহত ছিল । কিন্তু তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন ঘনিভূত হয় । মুঘল সাম্রাজ্যের ...

জায়গিরদারি সংকট ও আঞ্চলিক বিদ্রোহ

ঔরঙ্গজেবের আমলে মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বাধিক বিস্তৃতি ঘটলেও তাঁর সময় থেকেই পতনের প্রক্রিয়া সূচিত হয় । জায়গিরদারি সংকট ছিল তারই বহিঃপ্রকাশ । ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর এই সংকট তীব্রতর হয়েছিল । ঔরঙ্গজেবের আমলে একটানা যুদ্ধ ও বিশেষত তাঁর ভ্রান্ত দাক্ষিণাত্য নীতি ...

মনসবদারি প্রথা ও রাজস্ব ব্যবস্থা (Mansabdari System)

মনসবদারি প্রথা ও রাজস্ব ব্যবস্থা (Mansabdari System) :

মনসবদারি প্রথা (Mansabdari System) : মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল সামরিক শাসন । জনগণের সেখানে কোন ভূমিকা ছিল না । জনসমর্থন নয়, ভীতিই ছিল এই শাসন ব্যবস্থার প্রধান বৈশিষ্ট্য, যদিও আগেই বলা হয়

মুঘল আমলে কেন্দ্রীয় শাসন ও সংহতি

আকবরই মুঘল শাসনব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন । রাষ্ট্রশাসনে আকবর সরকারের স্বার্থরক্ষার সঙ্গে সঙ্গে প্রজাদের মঙ্গলের কথাও চিন্তা করতেন । তাঁর প্রবর্তিত শাসন ব্যবস্থা প্রাচীন ভারতীয় ও সুলতানি শাসনের আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল । বিশেষত শের শাহ প্রবর্তিত শাসন ...