ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর —নব নব সৃষ্টি

Submitted by Nandarani Pramanik on Tue, 07/12/2022 - 12:30

ব্যাখ্যা ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর ।

১. 'সংস্কৃত ভাষা আত্মনির্ভরশীল'— সংস্কৃত ভাষাকে কেন আত্মনির্ভরশীল বলা হয়েছে ?

উঃ ভাষার আত্মনির্ভরশীলতা তার সমৃদ্ধ শব্দ-ভান্ডারের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে ।

লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বহু ভাষায় অভিজ্ঞ । তিনি সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল ভাষা বলেছেন এই কারণে যে সংস্কৃত ভাষার শব্দভাণ্ডার অনেক সমৃদ্ধ । সংস্কৃত ভাষা প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে সহজে অন্য ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করে না । বরং নিজের শব্দ ভান্ডার কে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন শব্দ গঠন করে নেয় । এই কারণে সংস্কৃত ভাষাকে আত্মনির্ভরশীল বলা হয় ।

২. 'আমরা অন্যতম প্রধান খাদ্য থেকে বঞ্চিত হব' — কোন প্রসঙ্গে লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন ?

উঃ 'নব নব সৃষ্টি' প্রবন্ধে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন যে বাংলা ভাষা আত্মনির্ভরশীল নয় । এটি একটি মিশ্র ভাষা । বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ভাষার প্রভাব বেশি । প্রাচীনকাল থেকে এদেশে সংস্কৃত ভাষা চর্চা ছিল । সেই কারণে প্রচুর সংস্কৃত শব্দ বাংলায় ঢুকেছে । যতদিন সংস্কৃত চর্চা এদেশে থাকবে ততদিন এই শব্দ গ্রহণ চলবে । কারণ বাঙালির মনোভাব প্রকাশের জন্য প্রচুর পরিমাণে বাংলা শব্দ এখনও বাংলায় তৈরি হয়নি । তাই সংস্কৃত ভাষা থেকে সেই সকল শব্দ গ্রহণ করতে হয় । আর আমরা জানি সংস্কৃত ভাষা বাংলা ভাষার মাতৃ সম । এই কারণে লেখক এরূপ মন্তব্য করেছেন ।

৩. 'বাঙালির চরিত্রে বিদ্রোহ বিদ্যমান' — কোন প্রসঙ্গে সৈয়দ মুজতবা আলী এই মন্তব্য করেছেন ?

উঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর 'নব নব সৃষ্টি' রচনায় সত্য-শিব-সুন্দরের প্রতি বাঙালির চিরকালীন পক্ষপাতের কথা তুলে ধরেছেন । রাজনীতি, ধর্ম ও সাহিত্য ইত্যাদি যে যে ক্ষেত্রেই বাঙালি সত্য- শিব-সুন্দরের সন্ধান পেয়েছে, সেখানেই তা গ্রহণ করতে চেয়েছে । আর গতানুগতিকতা বা ঐতিহ্যের দোহাই দিয়ে কেউ সেই প্রচেষ্টায় বাধা দিতে গেলে বাঙালি বিদ্রোহ করেছে । আবার সেই বিদ্রোহ উশৃঙ্খলতায় পরিণত হলে তার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছে বাঙালি । আর এই বিদ্রোহে বাঙালি মুসলমানরাও যোগ দিয়েছে । তার কারণ ধর্ম বদলে গেলেও জাতিসত্তা একই থেকে যায় ।

৪. পদাবলী কীর্তন সম্পর্কে লেখকের কোন ভাবনার পরিচয় পাওয়া যায় ?

উঃ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর মতে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টি হল পদাবলী কীর্তন । পদাবলী কীর্তন -এর প্রাণ এবং দেহ উভয়ই খাটি বাঙালি। মহাভারতের কৃষ্ণ চরিত্র এখানে কানুরূপ ধারণ করে পুরোপুরি বাঙালি হয়ে উঠেছেন । আর শ্রীমতি রাধাও খাঁটি বাঙালি ঘরের মেয়ে হয়েছে । এর জন্য পদাবলী কীর্তনের রাধা-কৃষ্ণ মহাভারতের বিশাল সমুদ্র থেকে তুলে এনে একেবারে বাঙালির নিজস্ব সম্পদ করে তুলে ধরা হয়েছে । পদাবলী কীর্তন বাঙালি মানসে একটি সুমধুর জায়গা করে নিয়েছে । তাই লেখকের মতে পদাবলী কীর্তন বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য কীর্তি ।

*****

 

Comments

Related Items

খেয়া — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

খেয়া — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

**************************

খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে;

কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে ।

দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা,

সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা ।

আবহমান — নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

আবহমান — নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

*********************************

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া,

লাউমাচাটার পাশে ।

ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল

সন্ধ্যার বাতাসে ।

 

কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে,

নোঙর — অজিত দত্ত

নোঙর — অজিত দত্ত

*********************

পাড়ি দিতে দূর সিন্ধুপারে

নোঙর গিয়েছে পড়ে তটের কিনারে ।

সারারাত মিছে দাঁড় টানি,

মিছে দাঁড় টানি ।

জোয়ারের ঢেউগুলি ফুলে ফুলে ওঠে,

আকাশে সাতটি তারা — জীবনানন্দ দাশ

আকাশে সাতটি তারা — জীবনানন্দ দাশ

************************************

আকাশে সাতটি তারা যখন উঠেছে ফুটে আমি এই ঘাসে

বসে থাকি; কামরাঙা-লাল মেঘ যেন মৃত মনিয়ার মতো

গঙ্গাসাগরের ঢেউয়ে ডুবে গেছে—আসিয়াছে শান্ত অনুগত

কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি — মুকুন্দ চক্রবর্তী

কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি — মুকুন্দ চক্রবর্তী

**********************************

মেঘে কৈল অন্ধকার মেঘে কৈল অন্ধকার ।

দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার ।।

ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে চিকুর ।

উত্তর পবনে মেঘ ডাকে দুর দুর ।।

নিমেষেকে জোড়ে মেঘ গগন-মন্ডল ।