দুই বোন --- পৃষ্ঠা-৩০

Submitted by administrator on Fri, 04/27/2012 - 01:15
দুই বোন

নার্স বাইরে থেকে বললে, “ডাক্তারবাবু এসেছেন।”

শর্মিলা বললে, “ডেকে দাও।”

কথাটা বন্ধ হয়ে গেল।

শর্মিলার মামা যতরকম অশাস্ত্রীয় চিকিৎসার সন্ধানে উৎসাহী। সম্প্রতি এক সন্ন্যাসীর সেবায় তিনি নিযুক্ত। যখন ডাক্তাররা বললে আর-কিছু করবার নেই তখন তিনি ধরে পড়লেন, হিমালয়ের ফেরত বাবাজির ওষুধ পরীক্ষা করতে হবে। কোন্‌ তিব্বতি শিকড়ের গুঁড়ো আর প্রচুর পরিমাণে দুধ, এই হচ্ছে উপকরণ।

শশাঙ্ক কোনোরকম হাতুড়েদের সহ্য করতে পারত না। সে আপত্তি করলে। শর্মিলা বললে, “আর কোনো ফল হবে না, অন্তত মামা সান্ত্বনা পাবেন।”

দেখতে দেখতে ফল হল। নিশ্বাসের কষ্ট কমেছে, রক্ত ওঠা গেল বন্ধ হয়ে।

সাত দিন যায়, পনেরো দিন যায়, শর্মিলা উঠে বসল। ডাক্তার বললে, মৃত্যুর ধাক্কাতেই অনেক সময় শরীর মরিয়া হয়ে উঠে শেষ ঠেলায় আপনাকে আপনি বাঁচিয়ে তোলে। শর্মিলা বেঁচে উঠল।

তখন সে ভাবতে লাগল, ‘এ কী আপদ! কী করি! শেষকালে বেঁচে ওঠাই কি মরার বাড়া হয়ে দাঁড়াবে।’

ও দিকে ঊর্মি জিনিসপত্র গোছাচ্ছে। এখানে তার পালা শেষ হল। দিদি এসে বললে, “তুই যেতে পারবি নে।”

“সে কী কথা।”

“হিন্দুসমাজে বোন-সতিনের ঘর কি কোনো মেয়ে কোনো দিন করে নি।”

“ছিঃ!”

“লোকনিন্দা! বিধির বিধানের চেয়ে বড়ো হবে লোকের মুখের কথা!”

শশাঙ্ককে ডাকিয়ে বললে, “চলো আমরা যাই নেপালে। সেখানে রাজ-দরবারে তোমার কাজ পাবার কথা হয়েছিল--চেষ্টা করলেই পাবে। সে দেশে কোনো কথা উঠবে না।”

শর্মিলা কাউকে দ্বিধা করবার অবকাশ দিল না। যাবার আয়োজন চলছে। ঊর্মি তবু বিমর্ষ হয়ে কোণে কোণে লুকিয়ে বেড়ায়।

শশাঙ্ক তাকে বললে, “আজ যদি তুমি আমাকে ছেড়ে যাও তা হলে কী দশা হবে ভেবে দেখো।”

ঊর্মি বললে, “আমি কিছু ভাবতে পারি নে। তোমরা দুজনে যা ঠিক করবে তাই হবে।”

গুছিয়ে নিতে কিছুদিন লাগল। তার পর সময় যখন কাছে এসেছে ঊর্মি বললে, “আর দিন-সাতেক অপেক্ষা করো, কাকাবাবুর সঙ্গে কাজের কথা শেষ করে আসি গে।”

চলে গেল ঊর্মি।

এই সময়ে মথুর এল শর্মিলার কাছে মুখ ভার করে। বললে, “তোমরা চলে যাচ্ছ ঠিক সময়েই। তোমার সঙ্গে কথাবার্তা স্থির হয়ে যাবার পরেই আমি আপসে শশাঙ্কের জন্যে কাজ বিভাগ করে দিয়েছিলেম। আমার সঙ্গে ওর লাভলোকসানের দায় জড়িয়ে রাখি নি। সম্প্রতি কাজ গুটিয়ে নেবার উপলক্ষে শশাঙ্ক কদিন ধরে হিসাব বুঝে নিচ্ছিল। দেখা গেল তোমার টাকা সম্পূর্ণ ডুবেছে। তা ছাপিয়েও যা দেনা জমেছে তাতে বোধ হয় বাড়ি বিক্রি করতে হবে।”

শর্মিলা জিজ্ঞাসা করলে, “সর্বনাশ এত দূর এগিয়ে চলেছিল-- উনি জানতে পারেন নি!”

মথুর বললে, “সর্বনাশ-জিনিসটা অনেক সময় বাজ পড়ার মতো, যে মুহূর্তে মারে তার আগে পর্যন্ত সম্পূর্ণ জানান দেয় না। ও বুঝেছিল ওর লোকসান হয়েছে। তখনো অল্পেই সামলে নেওয়া যেত। কিন্তু দুর্বুদ্ধি ঘটল; ব্যাবসার গলদ তাড়াতাড়ি শুধরে নেবে মনে

Related Items

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১৫

দুই বোন

শেষ যে নয় অনতিকাল পরেই আরো বড়ো অঙ্কে তার প্রমাণ হল। এবার প্রয়োজন স্বাস্থ্যের। ম্যানেজার গম্ভীরমুখে বললেন, “শশাঙ্কবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।”

ঊর্মি শশব্যস্ত হয়ে বললে, “আর যাই কর, দিদিরা এ খবরটা যেন না পান।”

“একলা এই দায়িত্ব নিতে ভালো লাগছে না।”

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১৪

দুই বোন আসে। নীরদের একখানা ফোটোগ্রাফ রেখেছে ডেস্কের উপর। তার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। সে মুখে বুদ্ধির দীপ্তি আছে, আগ্রহের চিহ্ন নেই। সে ওকে ডাকে না, তবে ওর প্রাণ সাড়া দেবে কাকে। মনে মনে কেবলই জপ করে, ‘কী প্রতিভা! কী তপস্যা! কী নির্মল চরিত্র! কী আমার অভাবনীয় সৌভাগ্য!’

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১২

ঊর্মি মাথা হেঁট করে চুপ করে থাকে। মনে মনে বলে, ‘এঁর কাছে কি কোনো কথাই লুকোনো থাকবে না।’

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১১

যেত না। সেদিন নীরদ তাকে যথোচিত তিরস্কার করেছিল। অত্যন্ত গম্ভীর সুরে ইংরেজি ভাষায় বলেছিল, “দেখো, তোমার দাদার মৃত্যুকে সমস্ত জীবন দিয়ে সার্থক করবার ভার নিয়েছ তুমি। এরই মধ্যে কি তা ভুলতে আরম্ভ করেছ।”

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১০

“নতুন নামটা শুনি।”

“বিদ্যুৎলতা। নীরদের পছন্দ হবে! ল্যাবরেটরিতে ঐ পদার্থটার সঙ্গে পরিচয় আছে, এবার ঘরে পড়বে বাঁধা।”